তারুণ্যের অনুভূতিতে ‘বাবা দিবস’
- বাঁধন বৈষ্ণব
- প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২৫, ১০:৫২ AM , আপডেট: ১৭ জুন ২০২৫, ০৯:০৪ PM
প্রতিটি সন্তানের জন্য তার এক অনন্য স্নেহের আশ্রয়স্থল হলো বাবা। জগতের সকল ক্লেশ আর গ্লানি দূর হয় যার অবয়ব দর্শনে। বাবা হলেন আমাদের জীবনের পথচলা, অনুপ্রেরণা আর ভরসার আশ্রয়স্থল। আজ ১৫ জুন (জুনের তৃতীয় রবিবার) বিশ্ব বাবা দিবস উপলক্ষ্যে বাবাকে নিয়ে নিজেদের অনুভূতি জানিয়েছেন কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী। তাদের এ ভাবনা তুলে ধরেছেন সরকারি তিতুমীর কলেজ ইংরেজি সাহিত্য বিভাগের শিক্ষার্থী বাঁধন বৈষ্ণব।
বাবা আমার মহানায়ক
মা তার সন্তানকে পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠ দেখান, আর সেই ভূপৃষ্ঠে চলার হাতিয়ার তৈরি করে দেন বাবা। আমার জন্য আমার বাবা এক মহানায়ক। ‘বাবা’ নামক মানুষটা বুঝি কখনো নিজের কোনো স্বপ্ন দেখতে পারে না। আমাদের স্বপ্নগুলো পূরণ করাকেই তিনি নিজের স্বপ্ন মনে করেন। তিনি নিজে সুন্দরভাবে বাঁচতে না জানলেও পরিবারকে তাঁর জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবাসেন এবং সুন্দরভাবে বাঁচাতে জানেন। আমার বাবার কোনো রাজ্য নেই, কিন্তু তিনি আমার কাছে এক মহারাজা। আমার আলাদা কোনো পৃথিবী নেই—তিনি-ই আমার পৃথিবী। হয়ত বাবার ঋণ কখনোই শোধ করতে পারব না, তবে নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে দেব বাবার জন্য। আমার জীবনের সবচেয়ে বড় চাওয়াটা হলো, আমার বাবা নামক বটগাছটি যেন বেঁচে থাকেন আমার জীবনের শেষদিন পর্যন্ত।
মোহাম্মদ ছরোয়ার
শিক্ষার্থী, সরকারি আলাওল কলেজ, চট্টগ্রাম
বাবা হলেন রিয়েল লাইফ সুপার হিরো
দিনভর ব্যস্ততা শেষে সারাদিনের ধকল-ক্লান্তির সাথে পাহাড় সমান চিন্তা ও মানসিক চাপ নিয়ে বাড়ি ফিরলেও যার মুখে মিষ্টি একটি হাসি থাকে, তিনি বাবা। যিনি কখনোই মুখে বলেন না, ‘ভালোবাসি’, অথচ তার কর্মে ফোটে ওঠে সেই কথা। কতজনই বা পারে সেটি উপলব্ধি করতে? কখনো ভালোবেসেছি কি তাকে? আমাদের তো তার প্রতি থাকে মহাকাশ সমান অভিযোগ, থাকে অভিমান। অবশ্য এগুলো মনে আলতো করে পুষলেই চলত, তবে আমরা অনেক সময় সেগুলোকে মুখের কড়া ভাষা হিসেবে প্রকাশ করি। যেগুলো তার অন্তরে গিয়ে বিঁধে, তবে সেটি তার কঠোর ব্যক্তিত্বের আবরণেই ঢাকা পড়ে যায়। দুঃখিত, বাবা! ক্ষমা করে দিও।
যে কথাটি তোমায় কখনো বলা হয় না—
তোমাকে ভালোবাসি, বাবা। তুমিই আমার সুপার হিরো।
হিমেল আহমেদ
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
যার হাত ধরে আমি মানুষ হয়ে উঠছি
আমার বাবা শুধু একজন অভিভাবক নন, তিনি আমার জীবনের প্রথম শিক্ষক, প্রথম বন্ধু এবং সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। ছোটবেলা থেকেই আমার নেওয়া প্রতিটি ইতিবাচক সিদ্ধান্তে তিনি দ্বিমত না করে উৎসাহ দিয়ে পাশে থেকেছেন। আমার মসজিদে যাওয়া, নামাজ শেখা—সবকিছুর হাতেখড়ি বাবার হাত ধরেই। এমনকি ছোটবেলায় প্রথম বাংলা বানান করে পড়া শিখেছি বাবার কাছেই। যদিও সেদিন একটু মার খেতে হয়েছিল, তবে আজও সেই মধুর স্মৃতি মনে পড়ে। আমার বাবা একজন প্রকৃত বৃক্ষপ্রেমী মানুষ। বাড়ির আশপাশে অসংখ্য গাছ তার হাতে লাগানো। আমাকেও গাছ লাগানোর কাজে যুক্ত করেন। একসাথে গাছ লাগানোর সময় এক অন্যরকম মুহূর্ত তৈরি করে। বাবা, আপনাকে অনেক বেশি ভালোবাসি যা কখনো মুখ ফুটে বলা হয়নি!
বরকত আলী
শিক্ষার্থী, দিনাজপুর সরকারি কলেজ।
হৃদয়ের অনুক্ত অনুভূতিতে অব্যক্ত ভালোবাসা
সৃষ্টিকর্তার সুবিশাল আর অপরূপ সৃষ্টিতে বিরাজমান নির্মল দৃঢ় আর স্নিগ্ধতার এক সম্পর্কের বন্ধন হলো সন্তান আর পিতার বন্ধন। সূর্য রশ্মির মতোই তীক্ষ্ম আর তেজোদীপ্ত সেই অনুবন্ধ। শৈশবের হাঁটাচলা থেকে শুরু করে কৈশোর, তারুণ্য পেরিয়ে বার্ধক্যকালীন সময়েও যার ছত্রছায়া আজীবন আমাদের লালন করে, সেই মহিমান্বিত ব্যক্তিটিই হলেন বাবা। যার ভর্ৎসনা আর তিরস্কারের মাঝেও থাকে স্নেহের আভাস। সেই বাবাকে হয়ত ভালোবাসি কথাটাও ব্যক্ত করিনি কখনো প্রাণ খুলে। হৃদয়ের অনুক্ত অনুভূতিতে অব্যক্তই রয়ে যায় সেই অনুরাগ। বাবা পাশে থাকলে মহাসমুদ্রের উত্তাল জলরাশিও পাড়ি দেওয়া যায় নির্ভয়ে। আমার আবদার পূরণে তিনি নিজের শত কষ্ট আর যাতনাকেও হাসিমুখে নেন বরণ করে। আমার পরিবারের সেই বটবৃক্ষ হলো আমার বাবা।
বাঁধন বৈষ্ণব
শিক্ষার্থী, সরকারি তিতুমীর কলেজ।