ছাত্রদলকে সুবিধা—রাজনৈতিক বিবেচনায় তিতুমীর কলেজের হলে সিট বরাদ্দের অভিযোগ

সরকারি তিতুমীর কলেজ
সরকারি তিতুমীর কলেজ  © সংগৃহীত

সরকারি তিতুমীর কলেজের শহীদ মামুন হলের সিট বরাদ্দের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। তালিকা প্রকাশের পর থেকেই এটি নিয়ে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মেধার ভিত্তিতে নয়, রাজনৈতিক পরিচয়ের ভিত্তিতে সিট বরাদ্দ দিয়েছে কলেজ প্রশাসন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের তুলনায় কলেজ শাখা ছাত্রদলের কয়েকটি গ্রুপকে একচেটিয়াভাবে অধিকাংশ সিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। 

শেখ মোহাম্মদ জুবায়ের নামে গণিত বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, ২০২৩-২৪ সেশনের অনেক শিক্ষার্থীর আবেদন গ্রহণ করা হয়নি। অথচ যাদের সিট দেওয়া হয়েছে, তাদের অনেককেই আমি ইন্টারভিউ দিতে দেখিনি। আবার যাদের ইন্টারভিউ দিতে দেখেছি, তাদের অধিকাংশেরই নাম নেই চূড়ান্ত তালিকায়। এটি স্পষ্টভাবে একটি রাজনৈতিক তালিকা।

ইসলাম শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল রহমান বলেন, ডিপার্টমেন্ট থেকে যে তালিকা দেওয়া হয়েছিল, সেই অনুযায়ী সিট বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। কিছু সিট সাধারণ শিক্ষার্থীদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যাতে এটা না বোঝা যায় একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক সংগঠনকে বেশি দেওয়া হয়েছে। হলের সিট বরাদ্দের প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ ছিল না।

ছাত্রদলের একটি সূত্রে থেকে জানা যায়, হলের সিট বরাদ্দের প্রকাশিত তালিকায় আহ্বায়ক প্যানেল পেয়েছে ৮০টি, সদস্য সচিব সেলিম রেজার প্যানেল পেয়েছে ১২০টি সিট, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আরিফ মোল্লার গ্রুপ পেয়েছে ৪৫ টি এবং যুগ্ম আহ্বায়ক হামদে রাব্বি আকরাম গ্রুপ পেয়েছে ১৫টি সিট। 

জানা গেছে, কলেজের ইতিহাস বিভাগ থেকে হলের সিট বরাদ্দের জন্য ২০ জন শিক্ষার্থীর একটি তালিকা হল প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের কাছে পাঠানো হয়। তবে কাকতালীয়ভাবে হলের চূড়ান্ত তালিকায় ইতিহাস বিভাগের মোট ৪৪ জন শিক্ষার্থীর নাম আসে।

এ বিষয়ে হল সুপার কাজী মোহাম্মদ আল নূর বলেন, আমরা কোনো রাজনৈতিক দল বিবেচনায় কাউকে সিট দিইনি। আমরা ছাত্রদের সিট দিয়েছি। সেখানে কেউ ছাত্রদলের সদস্য আছে কিনা, তা জানি না। আবেদন ছাড়া সিট পেল কীভাবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সবাই আবেদন করেছে। সবার আবেদন রয়েছে। 

এছাড়াও ছাত্রাবাসে সিট বরাদ্দের তালিকায় কয়েকটি নাম একাধিকবার আসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা যথেষ্ট চাপে ছিলাম, সময়ও কম পেয়েছি। তাই হয়তো এমনটি হয়েছে। তবে এসব দ্রুত সংশোধন করা হবে।
 
আরেক হল সুপার আবু জাফর মুহাম্মদ মাসুদ উজ্জামান বলেন,  আমার কাছে যেসব আবেদন আসছে, সেসব আবেদন যাচাই-বাছাই করে সিট দিয়েছি। এখন কে ছাত্রদল করে, আর কে করে না— সেটা দেখতে যাইনি। সে হিসেবে ছাত্রদল সিট সিংহভাগ কেন এর বেশিও পেতে পারে, যদি তারা আবেদন করে থাকে এবং সিট পাওয়ার শর্তগুলো পূরণ করে থাকে। আমার জানামতে সিট বন্টনে কোন অস্বচ্ছতা হয়নি। 

এ বিষয়ে ইতিহাস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মঞ্জুমা হক বলেন, আমিও এমন কিছু শুনেছি, তবে এখনও পর্যন্ত লিখিত কোনো কাগজপত্র দেখিনি। যখন এই তালিকা বিভাগ থেকে পাঠানো হয়, তখন আমি বিভাগীয় প্রধান ছিলাম না। বিষয়টি জানার জন্য কলেজ খুললে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করব। 

কলেজ প্রশাসনের সাথে লিয়াজো করে বেশি সিট নেওয়ার অভিযোগ ওঠা তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব সেলিম রেজা বলেন, আমার বিরুদ্ধে ওঠা সিট ভাগাভাগির বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, মিথ্যা ও বানোয়াট। আমি সিট দেওয়ার কেউ না, সিট দিয়েছে কলেজ প্রশাসন। 

শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ইমাম হোসেন বলেন, রানিং ছাত্ররা সিট পেয়েছে। কলেজ প্রশাসন সিট দিয়েছে। ক্রাইটেরিয়ায় যারা যোগ্য তারা সিট পেয়েছে। অযথা ফেইক আইডির মাধ্যমে মিথ্যা প্রচার করলে কি আর করার আছে!  

হলের সিট বরাদ্দের অভিযোগগুলোর বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. ছদরুদ্দীন আহমেদ বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি এখনও অবগত নই। তবে খোঁজ নিচ্ছি আসলে এমন কিছু ঘটেছে কি না। 

এদিকে, হলের সিট বরাদ্দ নিয়ে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের মারামারি জেরে তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কলেজে যেতে নিষেধ করেছে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ। 


সর্বশেষ সংবাদ