বেরোবির দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ ঘিরে রাতেও বিক্ষোভ

বেরোবিতে কুশপুত্তলিকায় জুতা মারা ও মশাল মিছিল এবং তাদের কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা
বেরোবিতে কুশপুত্তলিকায় জুতা মারা ও মশাল মিছিল এবং তাদের কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা  © টিডিসি ফটো

দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ ঘিরে উত্তাল হয়ে উঠেছে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়(বেরোবি)। যৌন নিপীড়নের দায়ে তাদের প্রশাসনের সব কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি ও বরখাস্তের দাবিতে মশাল মিছিল এবং তাদের কুশপুত্তলিকায় জুতা মারার কর্মসূচি পালন করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় প্রক্টরের দেওয়া ‘বিতর্কিত বক্তব্য’ নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

সোমবার (২১ এপ্রিল) দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শিক্ষকদের কুশপুত্তলিকায় জুতা মারার কর্মসূচি পালন করা হয়। ৭টায় মশাল মিছিল করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় প্রক্টর ড. ফেরদৌস রহমান আপত্তিকর বক্তব্য দিয়েছেন বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন। দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ নিয়ে প্রক্টরের দেওয়া বক্তব্যে ক্ষোভ জানান তারা। তাদের অভিযোগ, দোষীদের বাঁচিয়ে দিতেই দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে এ ধরনের মন্তব্য করেছেন তিনি ।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৩ এপ্রিল রাতে ‘সাদিয়া সুভা’ নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে তিনটি অডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়ে। এতে শিক্ষক তানজিউল ইসলাম এবং এক ছাত্রীর ফোনালাপে কুপ্রস্তাবের শর্তে সিজিপিএ বৃদ্ধির কথা শোনা যায়। ১৭ এপ্রি,পরিসংখ্যান বিভাগের দুই শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক অতুল চন্দ্র সিংহ এবং অধ্যাপক ড. মো. রশীদুল ইসলামের বিরুদ্ধে নাম্বার টেম্পারিংয়ের অভিযোগপত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শওকাত আলীর কাছে জমা দেন পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের (১২ ব্যাচ) শিক্ষার্থীরা। 

পরবর্তীতে ১৯ এপ্রিল রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পেজ এবং গ্রুপে শিক্ষক রশীদুল ইসলাম ও তার ছাত্রীর মেসেঞ্জারে কথোপকথনের স্ক্রিনশট ফাঁস হলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আলোচনার ঝড় উঠে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান পদক্ষেপ না নেওয়ায় সোমবার (২১ এপ্রিল) থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শিক্ষকদের কুশপুত্তলিকায় জুতা মারার কর্মসূচি এবং সন্ধ্যা ৭টায় মশাল মিছিল করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

মশাল মিছিল শেষে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে কিছু দাবি তুলে ধরেন। সেগুলো হলো- অডিও ক্লিপ এবং সংশ্লিষ্ট অভিযোগসমূহের বিষয়ে ফরেনসিক পরীক্ষাসহ একটি নিরপেক্ষ ও গভীর তদন্ত পরিচালনা; তদন্ত চলাকালীন ড. মো. তানজিউল ইসলামকে অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে সাময়িক অব্যাহতি প্রদান; তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় আইন ও বিধিমালার আলোকে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ; বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলাফল ও মূল্যায়ন ব্যবস্থাকে অধিকতর স্বচ্ছ, ডিজিটাল ও প্রযুক্তিনির্ভর করা এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের অনিয়ম রোধে একটি শক্তিশালী অ্যাকাডেমিক মনিটরিং সেল গঠন।

শিক্ষার্থী রাকিব বলেন, ‘শিক্ষকরা হচ্ছেন আস্থা ভরসা ও আশ্রয়ের প্রতীক। কিন্তু আমরা দেখতে পেলাম, শিক্ষকদের মাধ্যমেই যৌন শিকার হচ্ছেন আমাদের বোনেরা। এই যৌন নিপীড়নের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। বেরোবি প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোন অ্যাকশন নিচ্ছে না কেন? যৌন নিপীড়নের সব ঘটনা সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার চাই। এ জন্য যদি কঠোর কর্মসূচির জন্য ছাত্র-জনতা প্রস্তুত আছি।’

আরেক শিক্ষার্থী শিবলী সাদিক বলেন, ‘শিক্ষকরা হচ্ছেন পিতৃতুল্য। কিন্তু তাদের দ্বারা যখন বোনেরা যৌন নিপীড়নের শিকার হয়, এর চেয়ে লজ্জার অপমানের আর কিছু হতে পারে না। বেরোবি প্রশাসন কাকে ভয় পায়? এখনো কোনো তদন্ত করছে না কেন? আমরা এই মশাল মিছিল থেকে বলে দিতে চাই, তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত এই শিক্ষকদের সাময়িক বরখাস্ত ও প্রশাসনিক সব কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হোক।’

জিম আক্তার বলেন, ‘প্রক্টর স্যারের বক্তব্য আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য অপমানজনক। আমাদের পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তাসহ সার্বিক বিষয়ে দেখভালের দায়িত্ব তার। এ ধরনের মানসিকতা ও শব্দচয়ন  অপেশাদারিত্বের পরিচয় দেয়।’

নাহিদুজ্জামান নাহিদ বলেন, ‘প্রক্টর তার বক্তব্যের মধ্যমে বোঝাতে চেয়েছেন, পরীক্ষার ওপর নয়, শিক্ষকের ওপর পরীক্ষার ফলাফল নির্ভর করে। তাইতো বলছে, মজাও নিয়েছে, মার্ক নিয়েছে। প্রশাসনের দায়িত্ব থেকে এ ধরনের মন্তব্য তার অপরিপক্কতার পরিচয় দিয়েছে। শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা যৌন হয়রানি কোনো অভিযোগ কেন দিতে পারেন না? এটার কারণ খতিয়ে দেখা দরকার। শিক্ষার্থীদের যদি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে, তাহলে শিক্ষার্থীরা অবশ্যই অভিযোগ দেবে।’ 

আরো পড়ুন: এনসিটিবিতে কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ, সেই তানভীরকে অব্যাহতি দিল এনসিপি

এমন বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ফেরদৌস রহমান বলেন, ‘ভিডিওটির কথাগুলো ভালো করে শোনেন আগে। এখানে আমি বুঝাতে চেয়েছি, যেসব আইডি থেকে ছড়ানো হয়ছে, সেগুলো ফেক আইডি। ভিডিওতে মজা নেওয়া বলতে ফেক আইডি থেকে প্রশাসনের বিরুদ্ধে লিখে মজা নেওয়াকে বোঝানো হয়েছে।’ 

এ বিষয়ে জানতে শিক্ষক রশিদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। শিক্ষক ড.তানজিউল ইসলাম জীবন বলেন, ‘আমাকে ফাঁসানোর অপচেষ্টা চলছে। অডিও ক্লিপগুলো পুরোপুরি সত্য নয়। কোথাও কোথাও এডিট করা হয়েছে। আর এসব ফেইক আইডি থেকে ছড়ানো হয়েছে, যা ভিত্তিহীন।’

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শওকাত আলী বলেন, ‘নম্বার টেম্পারিং এবং যৌন হয়রানির বিষয়ে আমরা একটা নতুন অভিযোগ সেল গঠন করেছি। কেউ পরিচয় গোপন করতে চাইলে আমরা তার পরিচয় প্রকাশ না করেই অপরাধীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। এ বিষয়ে আমার একটা প্রেস কনফারেন্স করব।’ 

অডিও ক্লিপের বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা বিষয়টা তদন্তের জন্য আবেদন করলেও ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর পক্ষ থেকে আমরা এখনো কোনও অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেব।’


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence