তিতুমীর কলেজে তীব্র আবাসন সংকট, দুর্ভোগে হাজারো শিক্ষার্থী

সংস্কার করা হচ্ছে না আক্কাসুর রহমান আঁখি হল
সংস্কার করা হচ্ছে না আক্কাসুর রহমান আঁখি হল  © টিডিসি ফটো

রাজধানীর অন্যতম ঐতিহ্যবাহী সরকারি তিতুমীর কলেজে তীব্র আবাসন সংকটের ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। ১৯৬৮ সালের ৭ মে প্রতিষ্ঠিত এ কলেজটি। দীর্ঘ ৫৬ বছরেও আবাসন সংকট কাটিয়ে উঠতে পারেনি। বর্তমানে কলেজটিতে প্রায় ৩৫ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছে। এ বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীদের জন্য হল রয়েছে মাত্র পাঁচটি। এর মধ্যে ছাত্রদের জন্য দুটি এবং ছাত্রীদের তিনটি হল রয়েছে। 

ছাত্রদের জন্য দুটি হল থাকলেও তার মধ্যে আক্কাসুর রহমান আঁখি হল গত বছরের ১৮ জুলাই ভাঙচুরের ঘটনায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে তা সংস্কার করে চালুর করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কলেজ প্রশাসনের তেমন কোন উদ্যোগ চোখে পড়েনি। এদিকে নির্মাণাধীন দশতলা বিশিষ্ট শহীদ মামুন ছাত্রাবাসের কাজ চলছে ধীরগতিতে। ফলে ছাত্রদের আবাসন সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। ফলে কলেজের শতভাগ ছেলে শিক্ষার্থীদের মেস বা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে হচ্ছে। 

কলেজ সূত্র জানায়, ছাত্রীদের তিনটি হল চালু থাকলেও সেখানে সুফিয়া কামাল ছাত্রী নিবাসে ২৫০ জন, সিরাজ ছাত্রী নিবাসে ২৫০ জন এবং শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ৩৫০ শিক্ষার্থী রয়েছে। ছাত্রীদের এই তিনটি হলে মাত্র ৮৫০ জন ছাত্রীর মাথা গোজার ঠাঁই হয়েছে। ফলে ছাত্রী নিবাসেও একটি সিট পাওয়া যেন হয়ে উঠেছে সোনার হরিণ। 

বর্তমানে কলেজের মাত্র ২.৪৩ শতাংশ শিক্ষার্থী আবাসিক হলে থাকার সুবিধা পাচ্ছে, বাকিদের নির্ভর করতে হচ্ছে ভাড়া বাসা বা মেসের ওপর। এতে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার খরচের পাশাপাশি বহন করতে হচ্ছে অতিরিক্ত খরচ। বিশেষ করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আগত নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের জন্য এ সংকট চরম দুর্ভোগে রূপ নিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আবাসন সংকটকে কেন্দ্র করে কলেজ সংলগ্ন হাজারীবাড়ি, টিবি গেইটসহ আশেপাশের এলাকায় গড়ে উঠেছে মেস ও বাসা ভাড়া দেওয়ার রমরমা ব্যবসা। এসব মেসে একটি সিটের জন্য শিক্ষার্থীদের মাসে সাত থেকে আট হাজার টাকা পর্যন্ত গুনতে হচ্ছে। যা একজন গ্রাম থেকে আসা শিক্ষার্থীর পক্ষে বহন করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। অনেকেই টিউশন বা খণ্ডকালীন চাকরি করে এই ব্যয় মেটানোর চেষ্টা করছেন। তবে শুধু অতিরিক্ত ভাড়াই নয়, এসব মেস ও বাসায় শিক্ষার্থীদের বসবাস করতে হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে। এছাড়াও বিশুদ্ধ পানির সংকট, নাজুক স্যানিটেশন ব্যবস্থা এবং অপর্যাপ্ত নিরাপত্তার কারণে শিক্ষার্থীদের জীবনযাপন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ।

এ বিষয়ে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. তানজিল আহমেদ বলেন, ‘কলেজের হল বন্ধ থাকার কারণে অনেক শিক্ষার্থীকে বাধ্য হয়ে আলাদা ফ্ল্যাট বা মেসে থাকতে হচ্ছে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় অনেক সময় কলেজের আশপাশে উপযুক্ত মেস বা বাসা পাওয়া যায় না। ফলে অনেকেই দূরবর্তী স্থানে বাসা নিয়ে থাকতে হয়। এছাড়াও অনেক শিক্ষার্থী অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল না। তাদের জন্য অতিরিক্ত আবাসন ব্যয় বড় চাপ হয়ে দাঁড়ায়। এতে করে অনেকেই টিউশন বা খণ্ডকালীন চাকরি করে ব্যয় নির্বাহ করে। যার ফলে লেখাপড়া উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে এবং মানসিক চাপও বাড়ছে তাদের।

রুবাইয়াত জাহান ঐশী নামে বাংলা বিভাগের এক শিক্ষার্থী জানান, মেয়েদের হলে পর্যাপ্ত সিটের ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে মেসে থাকতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘দূর থেকে আসতে হয়, তাই সময়মতো ক্লাসে উপস্থিত হতে পারি না। এছাড়াও বাইরে মেসগুলোতে মেয়েদের জন্য তেমন কোনো নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই। তার ওপর অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করে থাকতে হচ্ছে।’

মো: হান্নান নামে ব্যবস্থাপনা বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘মেসে থাকতে হলে বিদ্যুৎ বিল, ময়লা বিল, বুয়ার বিল এবং সিট ভাড়াসহ নানা খরচ বহন করতে হয়। কিন্তু হলে সিট পাওয়া গেলে এসব অতিরিক্ত খরচ করতে হয় না। বিশেষ করে যারা আর্থিকভাবে দুর্বল, তারা হলে সিট না পেলে ঢাকায় থেকে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।

এ বিষয়ে অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. ছদরুদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘নতুন হলের ৫ তলা পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে। তবে শিক্ষা প্রকৌশলের প্রকৌশলী বারবার আমাদের সঙ্গে মিথ্যা কথা বলেন। নির্মাণাধীন শহীদ মামুন ছাত্রাবাস কবে চালু হবে, সেটা শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের প্রকৌশলীই ভালো বলতে পারবেন। 

আক্কাসুর রহমান আঁখি হল সংস্কার করে চালুর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রকৌশলী রমজান মাসে তিনবার আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তিনি আমাকে জানিয়েছিলেন, ২৮ শে মার্চের মধ্যে সব কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যাবে। অথচ এখন পর্যন্ত হলের একটুও কাজ হয়নি।’

নির্মাণাধীন শহীদ মামুন ছাত্রাবাসের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী মো. নাজমুস সাকিব ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘শহীদ মামুন ছাত্রাবাস চালু করতে না পারার প্রধান কারণ হলো- তিতাস গ্যাসের রাইজার আঁখি হল থেকে মামুন হলে স্থানান্তর করার কথা থাকলেও এখনো তা করা হয়নি। ফলে নতুন হলের চুলাগুলো চালু করা যাচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘এছাড়াও ডেসকো থেকে হলের সাব-স্টেশনে প্রক্রিয়াগত জটিলতার কারণে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া যাচ্ছে না, যার ফলে লিফটগুলোও চালু করা যাচ্ছে না। এই দুটি হলের প্রধান সমস্যা। এছাড়াও হলের কিছু দরজা, জানালা ও চৌকাঠের কাজ বাকি রয়েছে। টেন্ডার হলে সেগুলো সম্পন্ন করা হবে।’ 

আক্কাসুর রহমান আঁখি হল সংস্কারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আঁখি হল সংস্কারের জন্য আমরা ইস্টিমেট করেছি। বরাদ্দ পেলে কাজ শুরু করা হবে।’


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence