ইবিতে বিতর্কিত ব্যক্তির নামে হল, শিক্ষার্থীদের সমালোচনা
- ইবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২০২৫, ০৭:৩৮ PM , আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৫, ০৩:৪৭ PM
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালযয়ে (ইবি) শেখ পরিবারের নাম থাকা বিভিন্ন আবাসিক হল ও স্থাপনার নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। বুধবার (৫ মার্চ) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এই তথ্য জানানো হয়। তবে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীর নামে হলের নামকরণের সিদ্ধান্তে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শেখ হাসিনা হল এখন জুলাই ৩৬ হল, শেখ রাসেল হল এখন শহীদ আনাছ হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল এখন শাহ আজিজুর রহমান হল, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হল এখন উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা সিদ্দিকা হল এবং ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান ভবন এখন থেকে ইবনে সিনা বিজ্ঞান ভবন নামে পরিচিত হবে।
তবে প্রজ্ঞাপনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম পরিবর্তন করে শাহ আজিজুর রহমানের নামে নামকরণের সিদ্ধান্তে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় তুলেছেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, শাহ আজিজুর রহমান ছিলেন একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী। যুদ্ধের সময় তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের আবদুল মোতালেব মালিকের নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভার সদস্য হন এবং রাজস্বমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি পাকিস্তান কর্তৃক জাতিসংঘে প্রেরিত প্রতিনিধিদলের অন্যতম সদস্য ছিলেন। তিনি জাতিসংঘে দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেন যে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী অপারেশন সার্চলাইটের মাধ্যমে বাংলাদেশে গণহত্যা চালিয়েছে।
শিক্ষার্থী ইশতিয়াক ইমন লিখেছেন, ঠিক কী কারণে তার নাম আসলো আমার জানা নেই। আরো অনেক মানুষের নাম আসতে পারতো যারা মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তীকাল নিয়ে যথেষ্ট ট্রান্সপারেন্ট।
শিক্ষার্থী মুহিব লিখেছেন, সম্প্রতি পরিবর্তিত সবগুলো নাম প্রশংসনীয়, তবে ‘শাহ আজিজুর রহমান’ কোত্থেকে এলো? সে একজন কুখ্যাত রাজাকার। একজন রাজাকারের নামে হলের নামকরণ করা হবে কেন? প্রশাসনকে এ ব্যাপারে ভাবার জন্য অনুরোধ করছি।
মির্জা শাহরিয়ার বলেন, ইবি প্রশাসনের শুভবুদ্ধির কখনোই উদয় হবে না। তারা মুখে বলে একটা কাজে করে আরেকটা। বলে বেড়ায় যে আমরা শিক্ষার্থীবান্ধব কাজ করছি কিন্তু সব কাজ করে শিক্ষার্থীদের স্বার্থবিরোধী। ৩৬শে জুলাইয়ের পর থেকে শিক্ষার্থী কেন্দ্রিক যতগুলো সিদ্ধান্ত নিয়েছে সবগুলোই বিতর্কিত। মফিজ লেকের নাম পরিবর্তন থেকে শুরু করে আজকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হলের নাম পরিবর্তন। ভিসি স্যার বলেছিলেন যে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামত নেওয়া হবে কিন্তু শিক্ষার্থীদের সাথে কোন মতামতই নেওয়া হয়নি৷
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ফুয়াদ হাসান লিখেছেন, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের নামে কোন হলের নাম পরিবর্তন হতে পারে না। আর কোন নাম কি খুঁজে পাওয়া গেলো না? ২৪ আমার ঠিকানা, ৭১ আমার অস্তিত্ব।
সাবেক শিক্ষার্থী জি কে সাদিক লিখেছেন, শাহ আজিজুর রহমান একজন চিহ্নিত রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী; বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে ও পাকিস্তানি সৈন্যদের গণহ*ত্যার পক্ষে জাতিসংঘ থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও এই লোক মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সৈন্যদের গণহত্যার পক্ষে কাজ করে গেছে। তার নামে আবাসিক হল, জুলাই অভ্যুত্থানের যে চেতনা সেটাও বিরুদ্ধে যায়। ইবি প্রশাসনের কতিপয় ‘গাঁধার’ এমন সিদ্ধান্ত এদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সৈন্যদের বুলেটে-বেয়োনেটে প্রাণ হারানো বাংলাদেশের প্রত্যেক শহীদের আত্মার অপমান। ‘জুতা নিক্ষেপ করে’ এমন কর্মের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই। ইবির ভিসিসহ অন্যান্য পদগুলোতে কি ৭১-এর গণহত্যার পক্ষ শক্তি বসে আছে? না থাকলে একজন গণহত্যাকারীর নামে আবাসিক হলের নাম হয় কি করে? সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে এর নিন্দা জানিয়ে রাখলাম। ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে নিজ হাতে এই নাম মুছে ফেলবো।
জানতে চাইলে ইবি সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, শেখ পরিবারের নামে থাকা স্থাপনা গুলোর নাম পরিবর্তনের ব্যাপারে আমাদের প্রস্তাবনা ছিল তবে শাহ আজিজুর রহমানের নাম আমাদের প্রস্তাবনায় ছিল না। হলের নাম যে এই নামে নামকরণ করা হচ্ছে সে বিষয়ে আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন অবগতও ছিলাম না। একাত্তরকে নিয়ে একটি পক্ষ সবসময়ই চেতনা ব্যবসা করে গেছে। আমরা চাই না যে একাত্তরকে নিয়ে আবারও এধরনের কিছু হোক।