ইবিতে গভীর রাতে শিক্ষার্থীদের চলাচল ঠেকাতে এবার ভিন্ন কৌশল প্রশাসনের

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

গভীর রাতে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের চলাচল ঠেকাতে ‘সান্ধ্য আইন’ জারির পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) প্রশাসন। শিক্ষার্থীদের বিরোধিতার কারণে তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এবার রাতের ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ঘোরাফেরা বন্ধে ভিন্ন কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ইবিতে রাত ১২টার মধ্যেই প্রক্টরিয়াল বডির নির্দেশে দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এর লিখিত নির্দেশনা না থাকলেও ‘ওপরের স্যারদের নির্দেশে’ তা বাস্তবায়ন করছেন নিরাপত্তাকর্মীরা। এতে শিক্ষার্থীদের অনেকে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো প্রজ্ঞাপন জারি না করলেও মৌখিক নির্দেশ দিয়ে এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি জায়গায় স্কুল-কলেজের মতো বিধিনিষেধ ভালোভাবে নিচ্ছেন না তারা। ইতোপূর্বে প্রভোস্ট কাউন্সিলের ১৪০তম সাধারণ সভায় ছাত্র-ছাত্রীদের রাতে হলে প্রবেশের সময় নির্ধারণ করা হয়। 

শিক্ষার্থীরা বের হলেও কোথাও বসে চা বা অন্যকিছু খেতে পারবেন না। বাধ্য হয়ে ধীরে ধীরে বের হওয়াই ছেড়ে দিতে হবে তাদের। ইবির ভৌগোলিক অবস্থান আলাদা। পাশের বাজারে রাত ৯টার পরে ভূতুড়ে পরিবেশ হয়ে যায়। ক্যান্টিন নেই, ফার্মেসিও নেই। ক্যাম্পাসের আশপাশে এখনো গ্রাম্য পরিবেশ।

সে সময় ‘সান্ধ্য আইন’র সিদ্ধান্ত গৃহীত হলেও শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে তা থেকে সরে আসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে রাত ১১টার মধ্যে আইন করে ছেলেদের হলে ঢোকাতে না পারলেও এবার বিকল্প কৌশলে একই উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এটি ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য করা হয়েছে বলে প্রক্টর জানিয়েছেন।

শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে এমন কোনো নিয়ম থাকতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে ক্যান্টিন নেই, অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নেই শিক্ষার্থীদের জন্য, সেখানে রাত ১২টার মধ্যে দোকানপাট বন্ধ করে তাদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। এর ফলে দেশব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হচ্ছে। 

রাত ১১টায় ছেলেদের হল বন্ধ না করতে পেরে এখন দোকানপাটই বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে অভিযোগ করে তারা বলছেন, এতে শিক্ষার্থীরা বের হলেও কোথাও বসে চা বা অন্যকিছু খেতে পারবেন না। বাধ্য হয়ে ধীরে ধীরে বের হওয়াই ছেড়ে দিতে হবে তাদের। ইবির ভৌগোলিক অবস্থান আলাদা। পাশের বাজারে রাত ৯টার পরে ভূতুড়ে পরিবেশ হয়ে যায়। ক্যান্টিন নেই, ফার্মেসিও নেই। ক্যাম্পাসের আশপাশে এখনো গ্রাম্য পরিবেশ।

ক্ষোভ প্রকাশ করে উসামাহ বিন হাশেম নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘রাত ১২টার পর ক্যাম্পাসের দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়ে আন্তর্জাতিক হওয়ার পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল ইবি। এরপর নোটিশ আসবে রাত ১২টার পর সব গেট অফ। এভাবে আর কি কি পদক্ষেপ নিলে আমরা আন্তর্জাতিক মানে সহজে পৌঁছে যেতে পারি?’

বাঁধন নামের এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘প্রশাসন সুন্দর একটি নাটক শুরু করেছে। শীতকালীন বন্ধের সময় প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল যে, ছেলেদের হলের গেট রাত ১১টা পর্যন্ত খোলা থাকবে এবং মেয়ে হলের গেট মাগরিব নামাজের কিছুক্ষণ পর পর্যন্ত খোলা থাকবে। পরবর্তীতে জনরোষের কারণে সিদ্ধান্তে বদল এনেছিল। আবার এখন নতুন নিয়ম তৈরি করেছে যে, ক্যাম্পাসের দোকানগুলো রাত ১২টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।’

এ বিষয়ে এখনও প্রশাসন প্রজ্ঞাপন জারি করেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পরোক্ষভাবে প্রশাসন আগের বাতিল নিয়মটি চালু করার চেষ্টা করছে। কিন্তু সেটা কোনোদিনও সম্ভব নয়। সবাই তার নিজস্ব স্বাধীনতা অনুযায়ী চলবে। প্রশাসনকে রাত ১২টা পর্যন্ত দোকানগুলো খোলা রাখার সিদ্ধান্ত খুব দ্রুত সময়ের বাতিল করার দাবি করছি।’

সাইফুল ইসলাম নামে আরেকজন লেখেন, ‘নতুন নাটক আবার শুরু হলো! রাত ১২টার পরে ক্যাম্পাসের দোকান বন্ধ করে দিল। তাহলে ক্যান্টিন চালু রাখেন সারারাত। রাত ১১টায় হল বন্ধ করতে না পারায় কি এমন নাটক শুরু হলো? সাড়ে ৭-৮টার দিকে ভাত খাওয়ার পর মাঝরাতে যে ক্ষুধা লাগে, এখন কি খাব?’

আরো পড়ুন: ‘ইত্যাদি’ অনুষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা, নেপথ্যে কী

এ বিষয়ে কথা হয় একাধিক দোকানির সঙ্গে। তারা জানান, আগে প্রক্টরিয়াল বডি কখনো রাতে দোকান বন্ধ করার জন্য নির্দেশ দিতো না। তবে ছুটির পর থেকে রাত ১২টা বাজার ১০ মিনিট আগেই দোকান বন্ধ করে চলে যেতে নির্দেশ দেন তারা। রাতে অনেকে আসতেন আগে। বসে চা-নাস্তা করে যে যখন ইচ্ছা যেতেন। তবে এখন রাত ১২টার পর ছাত্রদের আর এ সুযোগ নেই।

দোকান বন্ধের নির্দেশ দেওয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিকিউরিটি ইনচার্জ আশরাফের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। তবে দোকানিদের কাছে বড় স্যারদের নির্দেশ আছে বলে দোকান বন্ধ করার নির্দেশ দিয়ে চলে যান তিনি। 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান বলেন, এটি মূলত ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য শীতকালীন সময়ে রাত ১২টার মধ্যে বন্ধ করতে বলা হয়েছে। এটি মৌখিক নির্দেশ, শীতকালীন সময়ের জন্য। আমরা কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করিনি। তীব্র শীতের জন্যই এটা করা হয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence