অফিসার পদে চাকরি করে কোটি টাকার মালিক বশেমুরবিপ্রবি কর্মকর্তা নজরুল

  © সংগৃহীত

২০১১ সালে সেকশন অফিসার পদে যোগদান করেন গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) সহকারী রেজিস্ট্রার নজরুল ইসলাম হীরা। চাকরি জীবনে বেতন-ভাতা মিলিয়ে অর্ধকোটি টাকা ইনকাম না হলেও নামে-বেনামে বিভিন্ন স্থানে গড়েছেন কয়েক কোটি টাকার সম্পদ।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির শুরুতে পারিবারিক আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকলেও এখন নজরুল ইসলাম হীরা হয়েছেন ৫ কোটি টাকা মূল্যের বহুতল ভবনের মালিক। অভিযোগ রয়েছে, দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়তে সহযোগিতা করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বহিষ্কৃত সহকারী একান্ত সচিব গাজী হাফিজুর রহমান লিকু। তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে তুলেছেন টেন্ডারাণিজ্য, শিক্ষার্থী ভর্তি বাণিজ্য, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়োগ দুর্নীতির স্বর্গ। শুধু তাই নয়, ২০২০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি থেকে ৪৯ টি কম্পিউটার চুরির ঘটনাতেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। 

জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিরোধিতা করে তার নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এসময় তিনি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের জামায়াত-শিবির আখ্যা দিয়ে পিঠের চামড়া উঠিয়ে নেওয়ার হুমকি দেন। বর্তমানে তিনি গত সেপ্টেম্বর মাসে গোপালগঞ্জের ঘোনাপাড়া মোড়ে বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় ক্রীড়া সম্পাদক শওকত আলী দিদার হত্যা মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি হয়ে পলাতক রয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে বিভিন্ন সময় ছুটির আবেদন করলেও তা গ্রহণ করেনি প্রশাসন। ছুটি না থাকা স্বত্বেও গত সেপ্টেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে অফিস না করেও নিচ্ছেন নিয়মিত বেতন-ভাতা। 

অনুসন্ধানে জানা যায়, নজরুল ইসলাম হীরার বাবা পেশায় ছিলেন একজন দিনমজুর। গোপালগঞ্জ শহরের মিয়াপাড়া এলাকায় টিনশেডের একটি বাড়ি ছিল তাদের। ছাত্র জীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতি করতেন। ২০০৮/২০০৯ সালে সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের ছাত্র-ছাত্রী সংসদে ভিপি নির্বাচিত হন। এরপর সাবেক প্রধানমন্ত্রী হাসিনার ব্যক্তিগত সহকারী গাজী হাফিজুর রহমান লিকুর ক্ষমতা ব্যবহার করে যোগ দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকশন অফিসার হিসেবে। লিকুর প্রভাবে কর্মস্থলে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বাগিয়েছেন পদোন্নতি। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের  সহকারী-রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত আছেন তিনি। 

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৩ বছরের চাকরি জীবনে নজরুল ইসলাম হীরা বেতন ভাতা মিলিয়ে ৩৫ লাখের কিছু বেশি টাকা আয় করেছেন। তবে অনুসন্ধান বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে টেন্ডার হাতিয়ে নেওয়া,নিয়োগ ও ভর্তি-বাণিজ্য থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ, কমিশন বাণিজ্য করে গড়েছেন কয়েক কোটি টাকার সম্পদ। গোপালগঞ্জ শহ বিভিন্ন জায়গায় গড়ে তুলেছেন কয়েক কোটি টাকার সম্পদ। গোপালগঞ্জ শহরের মিয়াপাড়া এলাকায় প্রায় দশ কোটি টাকা ব্যয়ের দুইটি বহুতল ভবন। যার একটিতে তিনি বসবাস করেন। শহরের বেদগ্রাম এলাকার রঘুনাথপুর রোডের পাশে ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৮ শতাংশ জমি। মাদারীপুরের শিবচরে হাউজিং প্রকল্পে ৬ কাঠা ও ৩ কাঠার প্লট ১৭ লাখ টাকায় বরাদ্দ নিয়েছেন। নিজে ব্যবহারের জন্য ২০১৫ সালে ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে কিনেছেন গাড়ি। এছাড়াও বিভিন্ন ব্যাংকে রয়েছে কোটি টাকার এফডিআর। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেজিস্ট্রার দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন,‘তিনি আওয়ামী লীগের আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতির এক মহা সিন্ডিকেট তৈরি করেছিলেন। তার সাথে প্রধানমন্ত্রীর পিএসের ভালো সম্পর্ক থাকায় তার প্রভাব দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল নিয়োগে হস্তক্ষেপ করতেন। ইতিপূর্বে তার বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। ভয়ে তার বিরুদ্ধে কেউ পদক্ষেপ নিতে পারেনি।’

তিনি আরও বলেন, "‘বর্তমানে তিনি অফিস না করেও পাচ্ছেন বেতন-ভাতা। তার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি কোনো পদক্ষেপ। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সমস্যার মূল হলেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে তার বিচার হওয়া প্রয়োজন।’

ভর্তি বাণিজ্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার চুরি সহ একাধিক অভিযোগের কথা উল্লেখ করে বাংলা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফাহাদ বলেন, ‘তার মতো একজন দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তার জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নতি হচ্ছে না। টাকার বিনিময়ে অদক্ষ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়োগ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে দুর্বল করেছে। রাষ্ট্রের সব স্থানে সংস্কারের অংশ হিসেবে অতিবিলম্বে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায় এই শিক্ষার্থী।’

কর্মস্থলে অনুপস্থিত ও দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন কেটে দেন। পরে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। 

তার অনুপস্থিতি ও অভিযোগের বিষয়ে রেজিস্ট্রার এনামউজ্জামান বলেন, ‘আমি নতুন আসছি, তাই বিষয়গুলো ভালো করে জানি না। রবিবার অফিসে যাব, তখন জেনে বলতে পারব।’

এই বিষয়ে সাবেক ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মুরাদ হোসেন বলেন,‘তিনি ছুটি চেয়েছিলেন তবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছুটি মঞ্জুর হয়নি। এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি দ্রুত মিটিং করে তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে।’

উপাচার্য অধ্যাপক হোসেন উদ্দিন শেখর বলেন, ‘হত্যা মামলার আসামি হিসেবে তার বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ কি হবে তা আমরা স্পষ্ট নয়। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করেছি। তিনি আইনি বিষয়গুলো কয়েকদিনের মধ্যে জানাবেন। এরপর আমরা সিদ্ধান্ত নিব। বিশ্ববিদ্যালয় চালাতে হলে কোনো পদে কেউ অনুপস্থিত থাকলে তা হয় না। বিশ্ববিদ্যালয় চালাতে তিনি না আসলে সে পদে অন্য কাউকে আনতে হবে।’


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence