স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ শুরু

স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ  © টিডিসি ফটো

স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। আজ সোমবার (২১ অক্টোবর) রাজধানীর সায়েন্সল্যাবে ঢাকা কলেজের সামনে এ কর্মসূচি পালন করছেন তারা। সাত কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’র ব্যানারে এ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছে।

সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপান্তরের দাবিতে সকাল থেকেই ঢাকা কলেজে মূল ফটকে জড়ো হতে শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে ঢাকা কলেজে আসেন।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, উচ্চশিক্ষার পর্যাপ্ত সুযোগ সৃষ্টি ও মানোন্নয়নের লক্ষে রাজধানীর সরকারি সাত কলেজকে ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত করা হয়। তবে সাত বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সাত কলেজের শিক্ষকদের স্বদিচ্ছার অভাবে উচ্চশিক্ষায় সাত কলেজের প্রায় দেড় লাখ শিক্ষার্থী চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চশিক্ষায় নানাবিধ সংকট উত্তরণে সাত কলেজকে নিয়ে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি করছেন তারা।

আরও পড়ুন : সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের খাতা পুনঃনিরীক্ষা নিয়ে ঢাবির ‘ব্যবসা’ 

তারা আরও বলেন, ইতোমধ্যে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করে সরকারের কাছে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি জানিয়েছেন। পরবর্তীতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজের কাছে সাত কলেজকে নিয়ে আলাদা স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের দাবি জানিয়ে স্মারকলিপিও দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে ২০১৭ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাবি প্রশাসন ও সাত কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মতামত না নিয়েই অপরিকল্পিতভাবে সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত থাকাকালীন সাত কলেজে যেসব নিয়ম প্রচলিত ছিল, ঢাবির অধিভুক্ত হওয়ার পরেও সেসব নিয়মের ব্যতয় ঘটেনি। বরং ঢাবি প্রশাসনের উদাসীনতায় সাত কলেজে শিক্ষার মান ক্রমস হ্রাপ পেয়েছে। 

শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিভাগভিত্তিক মানসম্পন্ন শিক্ষকের অভাব, শিক্ষকদের ক্লাস নেওয়ার অনীহা, গবেষণার সুযোগের অপ্রতুলতা, অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডারের অনুপস্থিতি, শ্রেণিকক্ষের তীব্র সংকট, ল্যাব সংকট, আবাসন সমস্যা, পরিবহন সংকট, ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব, অ্যাকাডেমিক সিলেবাসের অস্বিত্ব না থাকা, সঠিকভাবে পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন না করা, ফরম ফিলাপ, ইম্প্রুভমেন্টে অযৌক্তিক ফি বৃদ্ধিসহ নানান সমস্যায় জর্জরিত কলেজগুলো। 

আরও পড়ুন : দ্বিগুণ জরিমানায় পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের, ক্ষোভ 

সাত কলেজের সংকট ও বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তরের প্রসঙ্গে সাত কলেজ সংষ্কার আন্দোলনের ঢাকা কলেজ প্রতিনিধি আব্দুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিনের অধিভুক্তির পরও যেখানে ঢাবির অধীনে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার মানের আশা–আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি, সেখানে এমন অধিভুক্তি ধরে রাখা অর্থহীন। সাত কলেজের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা নিজেদের অধিকার আদায়ে বারবার রাজপথে আন্দোলন করতে বাধ্য হয়েছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং সাত কলেজ কর্তৃপক্ষ এসব সমস্যার স্থায়ী সমাধান না করে বারবার একে অপরের দিকে দায়িত্ব ঠেলে দিয়ে এসব সমস্যা জিইয়ে রেখেছেন বলে অভিযোগ তার। তিনি বলেন, আমরা আর এমন জটিলতার ধারাবাহিকতা চাই না। আমরা সাত কলেজকে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের রুপান্তরের মাধ্যমে সমাধান চাই।

সরকারি বাঙলা কলেজের পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী মুত্তাকী বলেন, শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে ২০১৭ সালে সাবেক স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত সাতটি সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করে। কিন্তু এ আট বছরের পরিক্রমায় লেখাপড়ার মান উন্নয়নের চেয়েও বেশি অগ্রাধিকার পেয়েছে শিক্ষাবাণিজ্য এবং শিক্ষার্থীদের মেরুদন্ডহীন করে দেওয়া। 

তিনি বলেন, ঢাবি শুধু পরীক্ষা, সার্টিফিকেট এবং শিক্ষাবাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত, কিন্তু লেখাপড়ার মান উন্নয়ন নিয়ে কোন ধরনের পরিকল্পনা তারা দেয়নি। একটা দেশকে ধ্বংস করতে হলে প্রথমে সেই দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করতে হয়। আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসকারীর একটা বড় অংশ বিসিএস শিক্ষক ক্যাডার। তাদের ক্লাসের পাঠদানের পদ্ধতি এত কম যে, জাতীর মেরুদন্ড ভেঙে ফেলার জন্য যথেষ্ট। তারা ক্লাসের থেকে প্রশাসনিক কার্যক্রম ব্যস্ত থাকেন। ফলে তাদের নির্ধারিত কোর্সের কোন পড়াশোনা থাকে না। 

সাত কলেজকে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ঢাবি অধিভুক্ত থেকে বের  হয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় রুপান্তরিত করার জন্য অতি দ্রুত শিক্ষা কমিশন গঠন করতে অন্তবর্তী সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।

শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবি বা পড়াশোনার মান বাড়ানোর ব্যাপারে কলেজ প্রশাসনও অনেকটা নির্বিকার বলে দাবি ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী সুমাইয়া ইসলাম মীমের। তিনি বলেন, সবচেয়ে বেশি মেকানিজম এ সাতটি কলেজের শিক্ষকদের পক্ষ থেকে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বরাবরই তারা শিক্ষার্থীদের চাহিদার তুলনায় নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করছেন। এটি সংকট আরও বাড়িয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence