নজিরবিহীন অনিয়ম ঢাকতে এবার সাদা দলের সাথে সখ্যতা গড়ছেন বেরোবির শিক্ষক

মো: ইউসুফ
মো: ইউসুফ  © টিডিসি ফটে

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক পদে আবেদনের যোগ্যতা না থাকলেও বিগত সরকারের আমলে নজিরবিহীন অনিয়ম করে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক মো: ইউসুফকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকেই ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় দাপিয়ে বেড়িয়েছেন তিনি। হয়েছেন নীলদল, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ ক্লাব, বঙ্গবন্ধু পরিষদ নেতা। বাগিয়ে নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ও সহকারী প্রভোস্টের মত গুরুত্বপূর্ণ পদ। পরিবর্তিত পরিস্থিতি সামাল  দিতে এখন সখ্যতা গেড়েছেন সাদাদলে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দফতর সূত্রে জানা যায়, মো: ইউসুফের নিয়োগে বিশ্ববিদ্যালয় কোনো আইনের তোয়াক্কা করেনি। এমনকি প্লানিং কমিটি পর্যন্ত গঠন করা হয়নি। সিন্ডিকেট ওই নিয়োগ বাতিল করলে বিষয়টি চ্যান্সেলরকে জানানোর আইন থাকলেও সেটা কৌশলে করেনি তৎকালীন কর্তৃপক্ষ। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে হাইকোর্টে রিটের পর রায় পক্ষে নিয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন বিভাগে। পরবর্তীতে এ বিষয়ে আপিলও করেনি কর্তৃপক্ষ।

জানা যায়, ২০১১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষক নিয়োগের একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে (স্মারক নং- বেরোবি/রেজি:/শি:নিয়োগ/২০১১/৭৭৪) ওই বিজ্ঞপ্তির পদের বিবরণীর ‘খ’ তে ইতিহাস বিভাগে (বর্তমানে ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ) প্রভাষক/সহকারী অধ্যাপক (স্থায়ী) একটি পদে নিয়োগের কথা বলা হয়। বিজ্ঞপ্তির শর্তাবলির (গ) নং শর্তে উল্লেখ করা হয়, ‘এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার যেকোনো একটিতে ন্যূনতম ‘এ’ ৫ পয়েন্ট ভিত্তিক গ্রেড সিস্টেমে সিজিপিএ/জিপিএ ন্যূনতম ৪ থাকতে হবে।’ 

শিক্ষক পদে আবেদনের পর নিয়োগ দেয়া হয় মো: ইউসুফ নামের এই শিক্ষককে। যিনি এসএসসি ২০০১ এবং এইচএসসি দিয়েছেন ২০০৩ সালে। এসব পরীক্ষার গ্রেড পদ্ধতি জিপিএ ৫ হলেও দুটির কোনটিতে সিজিপিএ/জিপিএ ৪ ছিল না ইউসুফের। নিয়োগ পাওয়া এই শিক্ষক এসএসসিতে সিজিপিএ/জিপিএ ৩ দশমিক ৫০ এবং অঙ্কে সি গ্রেড এবং এইচএসসিতে ৩ দশমিক ০১ এবং ইংরেজিতে ডি গ্রেড পেয়েছেন। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার দফতর সূত্রে জানা যায়, মো: ইউসুফের নিয়োগ পেতে  কোনো প্লানিং কমিটি  গঠন করা হয়নি। সিন্ডিকেট ওই নিয়োগ বাতিল করলেও বিষয়টি চ্যান্সেলরকে জানানোর আইন থাকলেও সেটা কৌশলে করেনি তৎকালীন কর্তৃপক্ষ। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে হাইকোর্টে রিটের পর রায় নিয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন বিভাগে। এ বিষয়ে আপিলও করেনি কর্তৃপক্ষ।

কাগজপত্রে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়টির আইন লঙ্ঘন করে একটি প্রভাষকের পদ বিজ্ঞাপিত করলেও দুইজন প্রার্থীকে এবং অধ্যাপক পদের বিপরীতে একজনসহ মোট তিনজনকে নিয়োগ প্রদানের সুপারিশ করা হয়েছে। যদিও অনুমোদিত (স্থায়ী) পদ ছিল কেবল ১টি। তবুও তিনজনকেই স্থায়ী পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র বলছে, নিয়োগের পুরো লেখাটি টাইপ করা থাকলেও 'স্থায়ী একটি প্রভাষক পদে'র জায়গায় ‘এক’ শব্দটি কলম দিয়ে কেটে ‘০৩ (তিন)’ হাতে লিখে দেয়া হয়। আবেদনের যোগ্যতা না থাকা মো: ইউসুফকে বাছাই বোর্ড নিয়োগের সুপারিশকৃত তিনজনের মধ্যে প্রথম হিসেবে উল্লেখ করেন। কিন্তু তার নামের আগে ক্রমিক নং ২ লেখা হয়। অনুসন্ধানে জানা যায় উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এটা লিখে তাকে আইনগত সুবিধা নেয়ার পথ তৈরি করেছিল। 

বিশ্ববিদ্যালয়টির আইনের ৩৪ (৩) এ বলা হয়েছে ‘বাছাই বোর্ডের সুপারিশের সহিত সিন্ডিকেট একমত না হইলে বিষয়টি চ্যান্সেলরের কাছে প্রেরণ করিতে হইবে এবং এই ব্যাপারে তাহার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হইবে।’ কিন্তু তৎকালীন ভিসি প্রফেসর ড. একেএম নুর উন নবী মো: ইউসুফের নিয়োগের সুপারিশ সিন্ডিকেট বাতিল করার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটি আনুষ্ঠানিকভাবে চ্যান্সেলরকে জানানোর নিয়ম থাকলেও তিনি তা কৌশলে জানাননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উত্থাপিত নিয়োগ জালিয়াতির অভিযোগ অস্বীকার করে  ইতিহাসের বিভাগের শিক্ষক মো: ইউসুফ বলেন,সার্কুলারে দেয়া যোগ্যতা অনুযায়ী তিনি নিয়োগ পেয়েছেন। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি শর্তাবলির ‘ঘ’ তে বলা হয়েছে ‘কোনো পরীক্ষায় বি গ্রেড এর নিচে অথবা তৃতীয় বিভাগ/শ্রেণি গ্রহণযোগ্য হবে না। এই অনুযায়ী আমি আবেদনের যোগ্য। সেজন্যই আমাকে বাছাই বোর্ড সুপারিশ করেছে। 

তিনি বলেন, ‘আমার নিয়োগের পর বিভাগের শিক্ষক গোলাম রব্বানী আমাকে জামায়াত-বিএনপি ট্যাগ দিয়ে জলিল স্যারের আমলে যোগদান করতে দেননি। এখন ২০২৪ সালে এসে তিনি আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। আমি গত ৫ সেপ্টেম্বর তার বিরুদ্ধে সাইবার ট্রাইবুনালে মামলা করেছি। মামলায় একজন ছাত্রকে দিয়ে তিনি আমার বিরুদ্ধে ফেসবুকে বিভিন্ন আপত্তিকর মন্তব্য করার অভিযোগ এনেছি। তার বিরুদ্ধে আমি মানহানির মামলা করবো।’

তিনি আরও বলেন, আমি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী নীলদল এবং হলুদ দলে ছিলাম। বঙ্গবন্ধু ক্লাব, বঙ্গবন্ধু পরিষদের বিভিন্ন পদে শুধু স্বাক্ষর করেছিলাম কখনো যাওয়া হয়নি।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভিসি ড. শওকাত আলী জানান, বিষয়টি নিয়ে রেজিস্টারের সাথে আমি কথা বলবো। অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কমিটি করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!