অভিভাবকশূন্য ক্যাম্পাস
মন চাইলে অফিস করেন, না চাইলে চলে যান বেরোবি কর্মকর্তা–কর্মচারীরা
- বেরোবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৫৪ PM , আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:২৬ PM
সরকার পতনের পর রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) উপাচার্য, প্রক্টর, ট্রেজারারসহ ৪০ জন প্রশাসনিক কর্মকর্তা চাপের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের পদত্যাগে বিশ্ববিদ্যালয় অভিভাবকশূন্য হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় অনেকটা নিজেদের ইচ্ছামতো অফিসে আসা-যাওয়া করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অনেকে মন চাইলে অফিস করেন, না চাইলে করেন না। শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটা দপ্তরের অনিয়ম দুর্নীতি চলছেই। কেউ সঠিক সময়ে অফিসে আসে না।
সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, ডেসপাস শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার, প্রকৌশল দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী, প্রক্টর অফিসের সেকশন অফিসার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারী, ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সিনিয়র রিসার্চ অফিসার, প্রিন্সপ্যাল সায়েন্টিফিক অফিসার, সহকারী রেজিস্ট্রার, মেডিকেল সিনিয়র মেডিকেল অফিসার, কেন্দ্রীয় ভান্ডারের সহকারী রেজিস্ট্রার (স্টোর), বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট, বঙ্গবন্ধু এবং বঙ্গমাতা হলের সহকারী-রেজিস্টার, পেনশন শাখার উপপরিচালক, বিভিন্ন দপ্তর প্রধানসহ বিভিন্ন দপ্তরে গিয়ে খালি পড়ে থাকতে দেখা যায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চেয়ারগুলো। আবার দুপুর ২টার দিকে গিয়েও কয়েকটি দপ্তরে চেয়ার ফাঁকা পড়ে থাকতে দেখা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক সকাল ৯টায় শুরু হয় দাপ্তরিক সময়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দপ্তরগুলোতে ঘুরে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। অধিকাংশ দপ্তরে গিয়ে দুই-একজনের দেখা মিললেও বাকিরা অনুপস্থিত।
আবার দু-একজন অফিসে এলেও দপ্তর প্রধান বা পরিচালক না থাকায় আড্ডা গল্পগুজব করে সময় পার করতে দেখা যায়। এদিকে ১০ম গ্রেড এর ওপরের কর্মকর্তাদের উপস্থিতির কোনো ডকুমেন্টস বা স্বাক্ষর নেওয়া হয় না। মাসের পর মাস অফিসে না এলেও প্রমাণ থাকে না।
অন্যদিকে অফিসে আসা কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অফিসের কর্মঘণ্টা শেষ হওয়ার আগেই চলে যেতে দেখা যায়। এতে ব্যাহত হচ্ছে প্রশাসনিক, শিক্ষা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তা কার্যক্রম।
দাপ্তরিক সময়ে কর্মকর্তা কর্মচারীদের কক্ষে না থাকাকে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার ফল বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন সময়ে দাপ্তরিক কাজে গেলেও হয়রানির স্বীকার হতে হয় বলে অভিযোগ তাদের।
২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী সৈয়দ রেজাউল করিম বলেন, “পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের সার্টিফিকেট উত্তোলনের করতে গেলে বলে সময় দিতে হবে, এখন কেউ নাই। দুপুরের পরে আসেন, এমনকি এটাও বলে অমুক দিন আসেন।”
আরেক শিক্ষার্থী শারমিন আক্তার বলেন, “আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটা দপ্তরের অনিয়ম দুর্নীতি চলছেই। কেউ সঠিক সময়ে অফিসে আসে না, সময় শেষ হওয়ার আগেই চলে যায়। এ জন্যই আমাদের দেশ এখনো দুর্নীতির শীর্ষে আছে।“
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. আলমগীর চৌধুরী বলেন, “আসলে এখানে উপাচার্য স্যার নেই, আর এই জন্য কোনো জবাবদিহিতা নেই। এখন প্রশাসনে একমাত্র আমিই আছি। এই সব কিছু পরিচালনা করা কঠিন আমার পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হলে সকল কিছু ঠিক হয়ে যাবে আশা করি।”