যৌন হয়রানির অভিযোগ করে উল্টো শাস্তি পেলেন বাউবির নারী কর্মকর্তা

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়  © সংগৃহীত

চাকরিতে যোগদানের শুরুতেই নিজ প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ সহকর্মীর হাতে যৌন হয়রানির শিকার হওয়া গাজীপুরের বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) সেই নারী কর্মকর্তাকে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। এর আগে, বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকর্মীর হাতে যৌন হয়রানির পাশাপাশি র‌্যাগিং এবং নিপীড়নেরও শিকার হয়েছেন মর্মে ওই নারী কর্মকর্তার লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে এখনও সে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি বলে জানা গেছে।

বিপরীতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে ভুক্তভোগী ওই নারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। আর বহাল তবিয়তেই রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির অভিযুক্ত জ্যেষ্ঠ ওই কর্মকর্তা। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ ঘটনায় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে জানালেও কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা প্রকাশে অপারগতা জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন: যোগ দিয়েই যৌন হয়রানির শিকার উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী কর্মকর্তা

বুধবার (৬ মার্চ) বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) রেজিস্ট্রার ড. মহা. শফিকুল আলম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত অফিস আদেশে বলা হয়েছে, পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজের স্বার্থে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা (পরীক্ষা) রাহাত আরাকে (ছদ্মনাম) তার বর্তমান কর্মস্থল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা বিভাগ হতে নারায়ণগঞ্জ উপ-আঞ্চলিক কেন্দ্রে বদলি করা হলো।

অন্যদিকে, যৌন হয়রানির এই ঘটনায় অভিযুক্ত ওই কর্মকর্তার নাম মো. মুজিবুল হক (৫৯)। তিনি বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। 

এর আগে গত ২৫ জানুয়ারি ঘটনার প্রতিকার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও নারী নির্যাতন সেলসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে লিখিত অভিযোগপত্র দিয়েছেন ভুক্তভোগী ওই নারী কর্মকর্তা। অভিযোগপত্র দেওয়া পর তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মাহবুবা নাসরীনকে প্রধান করেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কমিটিকে পরবর্তী দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছিল। তবে সে তদন্ত প্রতিবেদন এখনও প্রকাশ করেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

লিখিত অভিযোগপত্রে ওই নারী কর্মকর্তা চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকেই তার অনুমতি ছাড়া দায়িত্বপালনকালীন সময়ে তার গায়ে-পিঠে হাত দেওয়া, অশ্রাব্য ভাষায় কথাবার্তা, ইভটিজিং ও যৌন হয়রানি এবং র‌্যাগিংসহ বেশ কিছু বিষয়ে অভিযোগ জানান।

তবে বিচার চেয়ে লিখিত আবেদন এবং তার প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি হলেও তা আর আলোর মুখ দেখেনি। এছাড়াও এ ঘটনার দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. মুজিবুল হকের সাথে হাতাহাতির ঘটনায় একই শাখার আরও পাঁচ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। গত মাসের ৮ ফেব্রুয়ারি শুরুতে তাদের এই বদলি করা হয়।

তারা হলেন—বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দেওয়ান নূর ইয়ার চৌধুরী, যুগ্ম আঞ্চলিক পরিচালক ড. মো. আছাদুল ইসলাম, উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. নাজমুল হক, সহকারী পরিচালক মো. আরেফ উল্লাহ, সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মীর মোর্শদ হাসান।

এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ থেকে ১০ জন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয় দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের। নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে তারা জানিয়েছেন, ঘটনার সাথে অভিযুক্ত ওই কর্মকর্তা স্থানীয় গাজীপুরের স্থানীয় বাসিন্দা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান রেজিস্ট্রার ড. শফিকুল আলমের আশীর্বাদপুষ্ট। এছাড়াও এর আগেও তার এ ধরনের কর্মকাণ্ডে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক নারী কর্মকর্তা বদলি নিয়ে উত্তরাঞ্চলের বিভাগীয় কার্যালয়ে চলে যেতে বাধ্য হন। কিন্তু তখনও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

বিষয়টি নিয়ে জানতে কথা হয় বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতারের সাথে। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন আমাদের হাতে এসেছে এবং অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। তবে কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে—এমন প্রশ্নে তিনি জানান, এটি বলা যাবে না। যার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, সে জানেন।

ভুক্তভোগী ওই নারী কর্মকর্তার বদলির বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলছেন, এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত কাজ। তিনি এখানে প্রশিক্ষণে ছিলেন। প্রশিক্ষণ শেষে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী তাকে তার পদে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।

বদলির বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদকের সঙ্গে ভুক্তভোগী ওই নারী কর্মকর্তার কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে তার একাধিক সহকর্মী জানান, এ ঘটনায় ওই নারী কর্মকর্তা মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন। বিচার চাইতে গিয়ে এখনও উল্টো নিজেই শাস্তির সম্মুখীন হয়েছেন তিনি। তাছাড়া তাকে তদন্তের কোনো বিষয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত জানানো হয়নি।

এ বদলি এক প্রকাশ শাস্তি উল্লেখ করে তারা আরও বলেন, ওই কর্মকর্তা পরিবারসহ ঢাকায় থাকনে। হুট করে বদলি করাতে তিনি এখন ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ গিয়ে প্রতিদিন অফিস করতে হচ্ছে এবং অফিস করে বাসায় ফিরতে হচ্ছে। নারী হওয়াতে তার সেখানে প্রতিদিন এভাবে যাতায়াত করাটাও নিরাপদ নন। কিন্তু যিনি অভিযুক্ত তিনিতো ঠিকই বহাল তবিয়তে আছেন, তার কোনো শাস্তি হয়নি।

তাছাড়া বদলি হওয়া নতুন ওই অফিসে অন্য কোনো নারী কর্মকর্তা বা কর্মচারী নেই। নারীদের জন্য আলাদা ওয়াশরুমের ব্যবস্থাও নেই। এলাকাটাও একা নারীর থাকার জন্য নিরাপদ না বলে তিনি জানিয়েছেন— জানান ভুক্তভোগী ওই নারী কর্মকর্তার সহকর্মীরা।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence