প্রক্টরের পদত্যাগের দাবিতে ভিসির কার্যালয়ে অবস্থান কুবি শিক্ষকদের
- কুবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯:১০ PM , আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯:১৮ PM
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দপ্তরে শিক্ষকদের লাঞ্ছনা এবং হুমকির পর নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যর্থতার অভিযোগ এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকীর পদত্যাগের দাবিতে উপাচার্যের কক্ষে অবস্থান নিয়েছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষকরা। তবে শিক্ষকদের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রেখেই চলে গেছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম. আবদুল মঈন।
সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কক্ষে নবগঠিত শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ উপাচার্যের সাথে দেখা করতে গেলে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও চাকরিপ্রার্থী কর্তৃক লাঞ্ছনা এবং হুমকির পর এ দাবি তুলেন উচ্চশিক্ষালয়টির শিক্ষকরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, উপাচার্যের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্বাচিত শিক্ষক সমিতি। উপাচার্য তাদের সাথে কথা বলতে এসে উত্তপ্ত হয়ে, তিনবার চেয়ার ছেড়ে নিজের ডেস্ক এ বসেন। এসময় প্রক্টরদের ডেকে আনেন উপাচার্য আবদুল মঈন। পরে সাবেক শিক্ষার্থী, চাকরিপ্রার্থীদের ডেকে আনেন তিনি। এসময় কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী দরজা ভেঙে ভিসি দপ্তরে থাকা শিক্ষকদের ধাক্কা দিতে থাকে। ধাক্কাধাক্কির এক পর্যায়ে শিক্ষকদের গালিগালাজ ও মারধর করার হুমকি দেন তারা। এসময় শিক্ষকদের প্রশ্ন করে, ‘হু আর ইউ’।
আরও পড়ুন: ‘থাপড়িয়ে’ শিক্ষকদের ‘দাঁত ফেলে দেওয়া’র হুমকি কুবি কর্মকর্তার
এসময় চাকরিপ্রার্থী সাবেক কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাকে শিক্ষকদের সাথে উচ্চবাচ্য করতে দেখা যায়। পরে উপাচার্যের দপ্তরের দরজা ভেঙ্গে শিক্ষকদের দিকে তেড়ে যেতে দেখা যায় তাদের। এসময় কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সাবেক শিক্ষার্থীদের সাথে প্রক্টরিয়াল বডির সাথে ধাক্কাধাক্কি করতে দেখা যায়। তাদের এমন প্রবেশ নিয়ে ভিতর থেকে প্রশ্ন তুলেন শিক্ষক নেতৃবৃন্দ।
এসময় শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে তারা গালিগালাজ করতে থাকেন। তখন তারা বলেন, ‘চিল্লাইতেছেন কেন আপনারা, চিল্লাইতেছেন কেন? আপনারা গুন্ডামি করেন? আমাদের আইন শিখান, কোথায় লিখা আছে—এখানে আসা যাবে না?’
তখন তাদের বের করে দিতে আসা নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হলেন প্রাধ্যক্ষের উপস্থিতিতে জাকির বলেন, ‘চিল্লাইতেছে কেন, আমরা মানুষ না—থাপড়াইয়া দাঁত ফালাইয়া দিমু।
শিক্ষক সমিতি সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান জানান, আমরা উপাচার্যের দপ্তরে সাক্ষাৎ করতে আসলে প্রক্টরের উপস্থিতিতে কর্মকর্তা এবং অছাত্ররা দফায় দফায় আমাদের উপর হামলা করেন। উপাচার্যের কাছে আমরা নিরাপত্তার দাবি জানালে তিনি জানান, আপনারা যতক্ষণ থাকবেন তারা এভাবে হামলা করবে।
আরও পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় তিন পত্রিকায় বক্তব্য প্রচার কুবি উপাচার্যের
পরবর্তীতে উপাচার্য আমাদের রেখে চলে যান। এখন বিষয়টি পরিষ্কার যে, প্রশাসনের কাছে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কেউই নিরাপদ নয়। আমরা এই অথর্ব প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করছি। তবে প্রশাসনের কাছে যদি সমাধান না পাই তাহলে আমরা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে সাধারণ ডায়েরি করে নিরাপত্তা দাবি করব।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা এবং আজকের এই ঘটনার পিছনে প্রক্টর দায়ী। তাই আমরা প্রক্টরের পদত্যাগের দাবিতে ও আজকের এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে উপাচার্যের রুমে অবস্থান করছি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সৈয়দুর রহমান বলেন, সতেরো বছরের মধ্যে এমন পরিস্থিতিতে আমি কখনো পড়ি নাই। শিক্ষকরা উপাচার্যের কাছে আসবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু একজন উপাচার্য এতজন শিক্ষককে রুমে রেখে এভাবে চলে যাওয়াটা কাম্য নয়।
আরও পড়ুন: নিয়মের তোয়াক্কা না করে দেড় কোটি টাকায় কুবি ভিসির গাড়িবিলাস
অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমাদেরকে ‘হু আর ইউ’ বলেছে, অপমান করেছে, হত্যা করার চেষ্টা করেছে এর বিচার যতদিন না হবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন কর্মকর্তা চলতে পারে না। একজন কর্মচারী কেন এখানে এসে একজন শিক্ষককে বলে ‘হু আর ইউ’। আমরা এখানে এসেছি উপাচার্য স্যারের সাথে আলোচনা করার জন্য। তারা আমাদের সাথে এইরকম ব্যবহার করতে পারে তারা আমাদেরকে যে কোন কিছু করতে পারে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) ড. কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, ‘ভিসি দপ্তরে হট্টগোল হয়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে আমরা প্রক্টরিয়াল বডি সেটা সমাধানের চেষ্টা করেছি।’
অছাত্ররা ভিসি দপ্তরে এসে ঝামেলা করতে পারে কিনা—এমন প্রশ্নে তিনি জানান, এখানে কেউ অছাত্র আছে বলে আমাদের জানা নেই। আমরা যদি কারো বিরুদ্ধে অছাত্রের অভিযোগ পাই আমরা ব্যবস্থা নিবো। আর এখানে যারা আছে তারা অনেকে সান্ধ্যকালীন কোর্সের ছাত্র, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, তারা এখানে যে পরিস্থিতি, তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে তারা আসতে পারে।
এর আগে গেল বছরের মার্চে কুবি প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেন শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এছাড়াও প্রক্টরকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তবে বারবার কেন প্রক্টরের এমন পদত্যাগ দাবি উঠে সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
তবে এ বিষয়ে উপাচার্যের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।