ছুটি ছাড়া চার বছর ধরে জাপানে বেরোবি শিক্ষিকা মাশরেকী

বেরোবি লোকপ্রশাসন বিভাগের প্রভাষক মাশরেকী মুস্তারী
বেরোবি লোকপ্রশাসন বিভাগের প্রভাষক মাশরেকী মুস্তারী  © টিডিসি ফটো

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) চাকরি পাওয়ার পর থেকে বিধিবহির্ভূতভাবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগ উঠেছে এক শিক্ষিকার বিরুদ্ধে। ২০১৮ সালের শেষের দিকে প্রভাষক হিসেবে চাকরি হওয়ার পর থেকে কোন প্রকার ছুটি ছাড়াই টানা ৪ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। ওই শিক্ষিকার নাম মাশরেকী মুস্তারী। তিনি সেসময় লোকপ্রশাসন বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেছিলেন। 

পিএইচডির জন্য নিয়ম অনুযায়ী, ৫ বছর শিক্ষা ছুটির বিধান থাকলেও নিয়মনীতির তোয়াক্বা না করেই তাকে শিক্ষা ছুটির অনুমোদন দেন তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ। নিয়ম বহির্ভূতভাবে দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাশরেকীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হলে তার জবাব যথাযথ না হওয়ায় একটি কমিটিও গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১২ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগে যোগদান করেন মাশরেকি মুস্তারি। ক্যাম্পাসে না এসেই তৎকালীন উপাচার্যের হাওয়া ভবন খ্যাত লিয়াজোঁ অফিসেই যোগদান করেন তিনি। যোগদানের পর থেকেই লিয়াজোঁ অফিসে বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের নামে প্রায় এক বছর ঢাকাতেই অবস্থান করেন। এরপর তীব্র শিক্ষক সংকটে লোকপ্রশাসন বিভাগে সেশনজট প্রকোপ আকার ধারণ করলে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। পরে অবস্থা বেগতিক দেখে বিভাগে এসে ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থীদের দুই তিনটি ক্লাস নিয়েই উধাও হন এই মাশরেকী।

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, ২০১৯ সালের ১০ নভেম্বর থেকে এই শিক্ষক বিভাগের কোন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের কোর্স নেননি এবং বিভাগের কোন সভায় তিনি অনলাইনে কিংবা সশরীরে উপস্থিত হননি। কোনো রকম শিক্ষাছুটি ছাড়াই বিধিবহির্ভূতভাবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন চার বছরের বেশি সময়। এছাড়াও তিনি কর্মস্থলে উপস্থিত না থেকেই যোগদানের পর প্রায় দুই বছর নিয়মিত নিয়েছেন বেতন-ভাতা। এরপর ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে লোকপ্রশাসন বিভাগের এই প্রভাষকের বেতন ভাতা বন্ধ রেখেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

সূত্র জানায়, দেশের বাইরে বিভিন্ন সভা সেমিনারের নামে কয়েক দফায় ৮৯ দিনের ছুটি গ্রহণ করেন মাশরেকি মুস্তারি। এরপর প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই বছরের পর বছর অবস্থান করছেন দেশের বাইরে। জাপানে পিএইচডি করলেও কোন প্রকার শিক্ষা ছুটির জন্য কখনো আবেদন করেননি তিনি।

এদিকে দীর্ঘদিন বিধিবহির্ভূতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকার কারণ জানতে চেয়ে সেই শিক্ষককে নোটিশ দেয় প্রশাসন। পরে এর জবাবও দেন তিনি। নোটিশের জবাব যথাযথ না হওয়ায় একটি কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। চার বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুপস্থিত এই শিক্ষক বর্তমানে কি করছেন, কোথায় আছেন সেই বিষয়ে বিভাগ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কেউই অবগত নন।

বিভাগের শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের বিভাগে এমনিতেই শিক্ষার্থীর অনুপাতে শিক্ষক কম রয়েছে। এর মধ্যে যদি কোন শিক্ষক অনুপস্থিত থাকেন তাহলে আমাদের কোর্সগুলো শেষ করতে বাকি শিক্ষকদের হিমশিম খেতে হয়।

সার্বিক বিষয়ে লোকপ্রশাসন বিভাগের বর্তমান বিভাগীয় প্রধান আসাদুজ্জামান মন্ডল বলেন, আমি চেয়ারম্যান হওয়ার পর তাকে বেশ কয়েকবার বলেছি যে, শিক্ষক সংকট আছে আপনি চলে আসেন। উনি তারপরও আসেন নি। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিভাগ থেকে মতামত চাইলে আমরা মতামত দিয়েছি যে, উনি ২০১৯ সাল থেকে বিভাগে অনুপস্থিত। এই ব্যাপারটি দ্রুত সুরাহা করা দরকার বলে তিনি মনে করেন।

সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. মোরশেদ উল আলম বলেন, প্রথমত এটি একটি প্রশাসনিক বিষয়। এই বিষয়ে লোকপ্রশাসন বিভাগ থেকে এখন পর্যন্ত আমাকে কিছু জানানো হয়নি। আমি নতুন ডিন হয়েছি। ইতঃপূর্বে যিনি এই দায়িত্বে ছিলেন তাকে হয়তো এই বিষয়টা জানানো হয়েছে। সেটা আমি সঠিক জানি না। লোকপ্রশাসন বিভাগ থেকে যদি এ বিষয়ে আমাকে জানানো হয় পরবর্তীতে আমি তা প্রশাসনকে জানাতে পারব।

ছুটি ছাড়াই চার বছরের বেশি কর্মস্থলে অনুপস্থিত কোন শিক্ষক নৈতিকভাবে শিক্ষকতা করার যোগ্য কিনা এমন প্রশ্নের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি শরিফুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি তদন্তাধীন আছে। আমরা চাই বিষয়টির সমাধান দ্রুত হোক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী আলমগীর চৌধুরী বলেন, এ বিষয়টি এখনও প্রক্রিয়াধীন আছে। যেহেতু এটি একটি নিয়মতান্ত্রিক বিষয়, সেহেতু আমাদেরকে কমিটি গঠন ও কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাসিবুর রশীদ বলেন, বিষয়টি আমি অবগত। ইতোমধ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ