গুচ্ছের দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সিদ্ধান্তহীনতায়’ মাশুল গুনছেন ভর্তিচ্ছুরা

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা  © ফাইল ছবি

উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল ঘোষণার পর থেকেই শুরু হয়েছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন। উচ্চশিক্ষা প্রত্যাশীরা বর্তমানে ব্যস্ত নিজেদের ভর্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করতে। কেউ প্রস্তুতি নিচ্ছেন উচ্চমাধ্যমিকের বিভাগ সম্পর্কিত বিষয়ের আবার কেউ প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিভাগ পরিবর্তনের। 

একাধিক ভর্তিচ্ছুর সাথে কথা বলে জানা যায়, বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বিবেচনায় তাদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে ঢাকার অভ্যন্তরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এবং অপেক্ষাকৃত পুরানো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। তবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তহীনতার জেরে ভর্তি প্রস্তুতি গ্রহণের ক্ষেত্রে জটিলতায় পড়তে হচ্ছে তাদের। 

আরো পড়ুন: জবিকে গুচ্ছে রাখতে ইউজিসির মন্তব্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনবিরোধী

মগবাজার এলাকার বাসিন্দা ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী নাফিসা সিদ্দিকী বলেন, আমি উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগে থাকলেও স্নাতক করতে চাচ্ছি ইংরেজি সাহিত্যে। বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান হওয়ায় ঢাকার বাইরে যেতে চাচ্ছি না। একারণে আমার লক্ষ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু জটিলতা তৈরি হয়েছে ভর্তি প্রস্তুতি গ্রহণ করতে গিয়ে। জগন্নাথ যদি গুচ্ছে না থাকে তবে আমার শুধুমাত্র বাংলা, ইংরেজি আর সাধারণ জ্ঞান পড়লেই চলছে আর জগন্নাথ যদি গুচ্ছে থাকে তাহলে আমার পদার্থ বিজ্ঞান এবং রসায়নও পড়তে হবে। 

এই শিক্ষার্থী আরো বলেন, যেহেতু আমাদের হাতে সময় কম তাই দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রয়োজন। এভাবে একেকদিন একেক সিদ্ধান্ত আসায় আমাদের ওপর প্রচণ্ড মানসিক চাপ তৈরি হয়েছে। আমরা চাই জগন্নাথ গুচ্ছে থাকুক বা না থাকুক সেটা দ্রুতই জানাক।

আরো পড়ুন: কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা কবে

২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী হাসান আবদুল্লাহ বলেন, আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। উচ্চ মাধ্যমিক থেকেই টিউশন করিয়ে নিজের পড়ালেখার খরচ বহন করছি। অপেক্ষাকৃত নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বেশ ব্যয়বহুল হওয়ায় এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলেও পড়া সম্ভব হবে না। একারণে টিউশনের সুবিধা এবং ব্যয় বিবেচনা করে আমার লক্ষ্য ঢাবি, জাবি, রাবি, জবি ও ইবি। কিন্তু জবি আর ইবির সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। কারণ গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় এবং গুচ্ছের বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি সম্পূর্ণ আলাদা। আমরা এমনিতেই খুব বেশি সময় পাচ্ছি না। যদি জবি, ইবি গুচ্ছে না থাকে তবেতো গুচ্ছের প্রস্তুতির পেছনে সময় ব্যয় অর্থহীন।

দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন সিদ্ধান্তহীনতায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী জাকারিয়া হাসান বলেন, তারা রীতিমতো আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে খেলা করছে। এই দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় তিন হাজার আসন রয়েছে এবং সুযোগ-সুবিধাও বেশ ভালো। একারণে আমাদের অনেকেরই পছন্দের শর্ষে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় দুটো। কিন্তু দুইমাসেও তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি তারা কি করবে। এখন আমরা যদি ইউজিসির কথায় ভরসা করে গুচ্ছের প্রস্তুতি নেই এবং পরবর্তীতে ইবি,জবি গুচ্ছ থেকে বের হয়ে যায় তখন কি হবে? গুচ্ছের প্রশ্নের প্যাটার্ন আর তাদের নিজেদের ভর্তিপদ্ধতির প্রশ্নের প্যাটার্ণতো আর এক নয়। তাই তাদের নিকট একটাই অনুরোধ তারা দ্রুত সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করুক।

আরো পড়ুন: ইউজিসির সঙ্গে ৬৯ বিশ্ববিদ্যালয় ভিসিদের সভায় যা আলোচনা হলো

এদিকে, গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সাথে ইউজিসির সর্বশেষ মিটিংয়ে ইবি এবং জবিকে গুচ্ছে থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ইউজিসির সচিব ফেরদৌস জামান বলেন, ‘ইবি এবং জবিকে গুচ্ছে থাকতে হবে। যারা গুচ্ছে আছে তাদের কারোরই গুচ্ছের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।’

তবে ইউজিসির এই নির্দেশনা মানতে রাজি নয় জবি এবং ইবির শিক্ষক সমিতি। জবি শিক্ষক সমিতির দাবি জবির গুচ্ছে না থাকার বিষয়ে একাডেমিক কাউন্সিলে গৃহীত সিদ্ধান্তের প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ( ইউজিসি) মন্তব্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ২০০৫ এর ৪০ নং ধারার সাথে সাংঘর্ষিক। 

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ কে এম ড.লুৎফর রহমান বলেন, গুচ্ছের মত একটি অদূরদর্শী প্রক্রিয়ার মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় অন্তর্ভুক্তির ফলে বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থানকে অবনমন করা হয়েছে। শুধু তাই নয় কিছু বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছের ভিতরে এবং কিছু বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছের বাইরে থাকায় একটা বৈষম্য নীতিও তৈরি হয়েছে।

এ বিষয়ে ইবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার বলেন, আর্থিক বিষয়, সরকারী সিদ্ধান্তসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে এর আগেও শিক্ষক সমিতিকে অনুরোধ করা হয়েছে। সেই জায়গাগুলো পার করে আমরা এই সিদ্ধান্তে এসেছি। উপাচার্য আসা পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করবো। তবে আমরা এখনো একক পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে অনড় অবস্থানে আছি। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব একটা আইনে চলে। ইউজিসি যেমন একটা নিয়মের মধ্যে চলে, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ও তেমন। একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

 


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence