শূণ্যের কোটায় আবাসন ব্যবস্থা
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নাভিশ্বাস জবি শিক্ষার্থীদের
- সাগর হোসেন
- প্রকাশ: ১১ মার্চ ২০২৩, ০৯:১৮ PM , আপডেট: ১১ মার্চ ২০২৩, ০৯:১৮ PM
আবাসন সুবিধায় পিছিয়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। প্রায় দুই দশক পার হলেও এখনও ১০ শতাংশ শিক্ষার্থীর আবাসন সুবিধাও নিশ্চিত করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়টি। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ থাকলেও বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। শিক্ষার্থীরা জানান বর্তমানে একটি বড় অংকের অর্থ তাদের বাসা ভাড়ায় চলে যায়। চাইলেই এই ব্যয় কমানো সম্ভব না একারণে খাবারের ব্যয় কমিয়েই বাড়তি খরচ সামলানোর চেষ্টা করছেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়টির স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার ইসলাম (ছদ্মনাম) বলেন, ‘মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হওয়ায় টিউশন করিয়েই নিজের পড়ালেখার খরচ চালাই। টিউশন থেকে যে টাকা উপার্জন করি তার বেশিরভাগ বাসা ভাড়ায় চলে যায়। অবশিষ্ট যা থাকে তা দিয়ে এখন আর পুরো মাসের বাজার ঠিকঠাক করা যায় না। আগে প্রায় প্রতি সপ্তাহেই মাছ-মাংস থাকতো কিন্তু এখন মাছ-মাংস কিংবা ডিম নয়, দিনের পর দিন সবজি-ভাত খেয়েই দিন কাটাতে হচ্ছে। এমনকি মাঝে মধ্যে খরচ কমাতে তিনবেলার জায়গায় দুইবেলা খাবার খাচ্ছি।
এই শিক্ষার্থী আরো বলেন, আবাসিক সুবিধা থাকলে বাসা ভাড়ার প্রয়োজন হতো না এবং এই অর্থটা দিয়ে হয়ত দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রভাব কটিয়ে উঠতে পারতাম।
আরো পড়ুন: ওএমআর দেখা শেষ করেছে বুয়েট, ফল হতে পারে কাল
বিশ্ববিদ্যালয়টির চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সাজিয়া আক্তার (ছদ্মনাম) বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে বর্তমানে জিনিসপত্র কিনতে হিমশিম খাচ্ছি। শেষপর্যন্ত খরচের পাল্লায় কুলিয়ে উঠতে না পেরে বিগত ১ মাস ধরে পরিমাণ কমিয়েছে খাবার ও বাজারের৷ আগে যেখানে মাসের অধিকাংশ সময়েই মাছ বা মুরগী খেয়ে চলতো সেখানে এখন শাক-সবজিই একমাত্র ভরসা।
শুধুমাত্র শাহরিয়ার ইসলাম বা সাজিয়া আক্তার নন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) অনেক শিক্ষার্থীদেরই খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হয়েছে। এছাড়া, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনে স্বল্প মূল্যে মান সম্মত খাবার পাওয়া গেলেও জবিতে সে সুযোগও পাচ্ছেন না বলে দাবি শিক্ষার্থীদের।
বিশ্ববিদ্যালয়টিতে প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষার্থীর বিপরীতে ক্যান্টিন রয়েছে মাত্র একটি। এখানেও নেই পর্যাপ্ত পরিমাণ ভর্তুকি। সরেজমিনে দেখা যায় মূল্য বাড়ানো না হলেও সম্প্রতি পরিমাণ কমানো হয়েছে খাবারের। বর্তমানে ক্যান্টিনে সকালে নাস্তায় একজন শিক্ষার্থীর খরচ হয় ৩০-৪০ টাকা৷ এছাড়া, দুপুরে ভাত-মাছ ৪৫টাকা,ভাত-মুরগী ৪৫টাকা, ভাত-ডিম-ভর্তা-ডাল ৩৫ টাকায় পাওয়া যায়৷ তবে প্রতিবেলাতেই খাবার শেষ হয়ে যায় নির্ধারিত সময়ের আগেই। ফলে অনেক শিক্ষার্থীই বঞ্চিত হয় খাবারের সুযোগ থেকে।
আরো পড়ুন: স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, উত্তাল রাবি ক্যাম্পাস
ক্যান্টিনটিতে নেই পর্যাপ্ত জায়গাও, মাত্র ৪৮ জন শিক্ষার্থী একসাথে খাবার খেতে পারেন। যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। জায়গার স্বল্পতায় অনেকে দাঁড়িয়ে বা বাইরে খেতে বাধ্য হয়। পাশাপাশি ক্যান্টিনে সকাল,দুপুর ও সন্ধ্যার খাবারের ব্যবস্থা থাকলেও নেই রাতের খাবারের ব্যবস্থা। এসময় ক্যান্টিনে উপস্থিত একাধিক শিক্ষার্থী জানান, ক্যান্টিনের সংখ্যা বাড়িয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভর্তুকির ব্যবস্থা করা হলে কম দামে পরিমাণমতো খাবারের সুযোগ পেতেন তারা, যা এই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে তাদের কিছুটা হলেও স্বস্তি দিত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতেও (ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র) খাবারের চিত্র একই। টিএসসিতে যেসব খাবারের দোকান আছে সেখানেও পর্যাপ্ত মনিটরিংয়ের সুযোগ না থাকায় দাম বেশি হলেও নিশ্চিত হয়নি খাবারের মান। সরেজমিনে দেখা যায়, টিএ্সসিতে একটি পাউরুটির দামই ২০টাকা। একজন শিক্ষার্থী সকালের নাস্তায় রুটি-কলা ও চা খেলে খরচ হয় ৪০-৫০ টাকা। আর ভাত-মাছ,ভাত-মাংস বা খিচুড়ির দামও লাগামহীন। মুরগী-ভাত ৭০ টাকা, মাছ-ভাত ৭০টাকা, খিচুড়ি ৪৫-৫০ টাকা।
একই অবস্থা বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র ছাত্রী হল বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের। এখানের রান্নার পরিবেশ আর মান নিয়েও রয়েছে নানা অভিযোগ। হলটিতে প্রতি ভাতের প্লেট ১০টাকা,পাতলা ডাল ২টাকা, ভর্তা-শাক ১০টাকা,রুই,সরপুঁটি,কাতলা,পাঙ্গাস,তেলাপিয়া ও কই মাছের দাম (প্রতি পিস) ৩০টাকা, পাবদা ও ইলিশ মাছ (প্রতি পিস) ৩৫টাকা, ছোটমাছ ও চিংড়ি ৩৫টাকা, দেশী মুরগী ৪০ টাকা, ব্রয়লার ৩০টাকা, মুরগী খিচুড়ি ৫০টাকা,তেহারী ৭০ টাকা (ছোট একটুকরো মুরগীর মাংস সহ), মুড়িঘণ্ট ২৬টাকা এবং শাকের সাথে মাছের মাথা ভুনা ১৫টাকা।
হলের ছাত্রীরা জানান, দাম পরিবর্তন না করলেও প্রতিটি আইটেমের পরিমাণই কমানো হয়েছে। আবার মাঝেমধ্যেই খাবারে তেলাপোকা সহ বিভিন্ন পোকামাকড় পাওয়া যায়।এতে অনেক ছাত্রীই বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত খরচে বাইরে থেকে খাবার খায়। খরচ মেটাতে না পেরে অনেকে আবার দুইবেলার জায়গায় এক বেলাই খাচ্ছে।
আরো পড়ুন: চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির ফল হতে পারে চলতি সপ্তাহে
বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের ক্যান্টিন ম্যানেজার মো. জাহাঙ্গীর বলেন, এখন সব জিনিসের দাম বাড়তি৷ তাই পরিমাণ কমানো ছাড়া উপায় নেই৷ কর্তৃপক্ষ ভর্তুকি দিলে মূল্য ও খাবারের পরিমাণ সমন্বয় করা সম্ভব হবে।
এবিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম বলেন, আসলে এখন সবকিছুর চড়া দাম। এতে শিক্ষার্থীদের কষ্ট হচ্ছে এটা ঠিক তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকেও কিছু করার সুযোগ নেই। ক্যান্টিনের খাবারের দামও বাড়াতে চেয়েছিল মালিক। কিন্তু আমি বার বার বলে সেটি বন্ধ রেখেছি। সবকিছুর দাম বাড়ায় ক্যান্টিনে সামান্য দাম বাড়তে পারে। ভর্তুকির বিষয়টি কর্তৃপক্ষ দেখতে পারেন।