দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লার বিরুদ্ধে সনদ বিক্রির অভিযোগ

দি ইউনিভাসিটি অব কুমিল্লা ও লোগো
দি ইউনিভাসিটি অব কুমিল্লা ও লোগো  © ফাইল ছবি

দি ইউনিভাসিটি অব কুমিল্লার নামে উচ্চতর ডিগ্রির সনদ বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। উচ্চশিক্ষার নামে চলমান এ নৈরাজ্য বন্ধে অনেকটা অসহায় ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনকে (ইউজিসি)। অনিয়ম বন্ধে উচ্চশিক্ষার সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা দু-একটি চিঠি চালাচালির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।

জানা গেছে, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন না দিলেও কয়েক বছর ধরে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা নামে ক্যাম্পাস খুলে হরহামেশাই সনদ বিক্রি করছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। সনদ বিক্রির প্রক্রিয়া ক্রমেই বাড়ছে।

আরও পড়ুন: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালেয়ে ছাত্র সংগঠনে জড়াতে নিষেধাজ্ঞা!

নারায়ণগঞ্জের অবৈধ ক্যাম্পাসটির বিষয় নজরে এলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সুপারকে চিঠি দেয় ইউজিসি। যদিও চিঠি দেয়ার দুই মাস পার হলেও এখন পর্যন্ত নির্বিঘ্নে পরিচালিত হচ্ছে নারায়ণগঞ্জের অবৈধ ক্যাম্পাস। চলতি সপ্তাহেও শিক্ষার্থী পরিচয় দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির নম্বরে যোগাযোগ করা হলে ভর্তির সুযোগ ও সহজে সনদ পাওয়ার নিশ্চয়তা দেন সেখানকার ভর্তি কর্মকর্তা পরিচয় দেয়া এক ব্যক্তি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (আইসিটি ও শিক্ষা) এসএম মাহফুজুর রহমান জানান, এ ধরনের কোনো চিঠির কথা তিনি মনে করতে পারছেন না। তাছাড়া মাত্র তিন মাস আগে বর্তমান কর্মস্থলে পদায়ন হয়েছে তার। ফলে এখন কিছু বলতে পারছেন না। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে বলেও জানান তিনি।

আরও পড়ুন: থানচিতে পর্যটক ভ্রমণে ৩ দিনের নিষেধাজ্ঞা

ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ম বন্ধে আইন অনুযায়ী যত ধরনের ব্যবস্থা নেয়া যায়, কমিশন সেটি নিচ্ছে। তবে আমাদের সুপারিশ ও প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অন্য অনেক প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করতে হয়। সরকারের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো চিঠি দেয়ার পরও ব্যবস্থা না নিলে আমাদের কিছু করার থাকে না। উচ্চশিক্ষার মান ও পরিবেশ ঠিক রাখতে সরকারের অনেকগুলো সংস্থাকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হয়। কারণ একটি অবৈধ প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা শুধু কমিশনের কাজ নয়। এটা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দি ইউনিভার্সিটির একমাত্র বৈধ ঠিকানা উত্তরার ৮ নম্বর সেক্টরের পলওয়েল কার্নেশন ভবন। যদিও এ ঠিকানায় বিশ্ববিদ্যালয়টির কোনো অস্তিত্ব নেই। অনুসন্ধানে দেখা যায়, বৈধ ঠিকানায় ক্যাম্পাস না থাকলেও উত্তরা ও নারায়ণগঞ্জের দুটি ঠিকানায় অবৈধ ক্যাম্পাস খুলে শিক্ষার্থী ভর্তি ও তাদের সনদ সরবরাহ করা হচ্ছে। এমনকি অবৈধ ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য ফলাও করে বিজ্ঞাপনও প্রচার করা হচ্ছে। দেখা গেছে, এসব ক্যাম্পাস পরিচালনার জন্য আলাদা ওয়েবসাইট ব্যবহার করা হচ্ছে। অনলাইনে দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লার নামে অন্তত চারটি ওয়েবসাইট পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন: গুচ্ছে আস্থা হারাচ্ছে শিক্ষার্থীরা

ট্রাস্টি বোর্ডের কোষাধ্যক্ষ তানভীর হায়দার ভূঁইয়া বলেন, নারায়ণগঞ্জে যে ক্যাম্পাসটি অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে, তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে আমাদের একজন ট্রাস্টি সদস্য ট্রাস্টের কোনো অনুমোদন ছাড়াই উত্তরায় অবৈধভাবে একটি ক্যাম্পাস পরিচালনা করছেন, যা দুঃখজনক। আমরা চাই, সরকার সবগুলো অবৈধ ক্যাম্পাস বন্ধ করে দিক। অভিযুক্ত ট্রাস্টির বিরুদ্ধে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।

উল্লেখ্য, দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা অনুমোদন পায় ১৯৯৫ সালে। আইন অমান্য, প্রশাসনিক ও আর্থিক অব্যবস্থাপনা এবং শিক্ষার মান সন্তোষজনক না হওয়ায় ২০০৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধ করে দেয় সরকার। এর প্রায় এক দশক পর ২০১৬ সালে আদালতের আদেশে পুনরায় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ পায় বিশ্ববিদ্যালয়টি। তবে আদালতের নির্দেশনা সত্ত্বেও ঠিকানা স্থানান্তর, সংরক্ষিত তহবিল, শিক্ষক নিয়োগসহ নানা জটিলতায় এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়টিকে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন দেয়নি ইউজিসি।


সর্বশেষ সংবাদ