গুচ্ছে আস্থা হারাচ্ছে শিক্ষার্থীরা

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা  © সংগৃহীত

দেশে প্রথমবারের মতো ২০টি সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিয়েছে। শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি লাঘবে শুরুতে বেশ জনপ্রিয়তা পেলেও এ পদ্ধতি ধীরে ধীরে আস্থা হারাচ্ছে। মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে শিক্ষার্থীরা।

সিলেকশন প্রক্রিয়া, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আলাদা আলাদা আবেদন ফি, ভর্তিতে ধীরগতি, আর্থিক ক্ষতি নিয়ে মনঃক্ষুন্ন ভর্তিচ্ছু ও অভিভাবকরা। তারা বলছেন, প্রথম থেকেই গুচ্ছ কমিটির একের পর এক হটকারী সিদ্ধান্তে অনেক শিক্ষার্থীর স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। ভর্তি পরীক্ষার মতো এত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া সরাসরি প্রয়োগ করায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

গত ১৭ অক্টোবর বিজ্ঞান বিভাগের 'এ' ইউনিটে, ২৪ অক্টোবর মানবিক বিভাগের 'বি' ইউনিটে এবং ১ নভেম্বর বাণিজ্য বিভাগের 'সি' ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ২০ অক্টোবর এ ইউনিটের ফল প্রকাশ হয়। ২৬ অক্টোবর বি ইউনিটের ও ৩ নভেম্বর সি ইউনিটের ফল প্রকাশ হয়। ফল প্রকাশের পর দুই মাসের বেশি সময় গেলেও অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় এখনো মেধা তালিকা প্রকাশ করতে পারে নি। এখন পর্যন্ত মাত্র ৬টি বিশ্ববিদ্যালয় মেধাতালিকা প্রকাশ করতে পেরেছে। 

আরও পড়ুন- গুচ্ছ ভর্তির ধীরগতি নিয়ে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দীর্ঘসময় নিয়ে আলাদা আলাদা ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেয়ায় ভর্তির দিন-তারিখও আলাদা হচ্ছে। এতে পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা ও আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে ভর্তিচ্ছুরা। আবার অনেকেই অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাতালিকায় আসলেও পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন নিয়ে সেখানে ভর্তি হচ্ছে না। এতে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও বিপাকে পড়ছে। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে মাত্র ৩২০ জন শিক্ষার্থী। মেধা তালিকায় আসার পরও অনেকেই সেখানে ভর্তি হন নি। ফলে ক্যাম্পাসটিতে ১১২০টি আসন খালি আছে।

সূত্র জানায়, ঢাকা, বুয়েট, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম, কৃষি গুচ্ছ, প্রকৌশল গুচ্ছে ভর্তি পুরোপুরি শেষ হয় নি। প্রথমে ভর্তি করিয়ে আসন শূণ্যতায় যাতে বিশ্ববিদ্যলয়গুলো না পড়ে সেজন্য সময় নিয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করছে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।

ভর্তিচ্ছুরা বলছেন, গুচ্ছে লাভ হয়েছে একটি। তা হচ্ছে, বারবার পরীক্ষা দিতে হচ্ছে না। কিন্তু ব্যয় কোনো অংশে কমেনি। বরং বেড়েছে। একই অবস্থা ভোগান্তির ক্ষেত্রেও। যদি মেডিকেলে ভর্তির মতো অভিন্ন পরীক্ষার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের মেধাক্রম এবং পছন্দ তালিকা ধরে বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভাগ বণ্টন করে দেওয়া হতো তাহলে তারা খরচ এবং এক ক্যাম্পাস থেকে আরেক ক্যাম্পাসে দৌড়ানোর ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেতেন।

আরও পড়ুন- গুচ্ছ ভর্তি আবেদন ফি দ্বিগুণ, ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ভর্তিচ্ছুদের

গুচ্ছের ফল নিয়েও প্রশ্ন ছিলো শিক্ষার্থীদের। তাদের দাবি, শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ যেভাবে পরীক্ষায় এমসিকিউ দাগিয়েছিল সেভাবে ফল পাননি। কেউ কোনো বিষয়ের ১০টি প্রশ্নের বৃত্ত ভরাট করলেও ফলাফলে ওই বিষয়ে পেয়েছেন ২৫ নম্বর। আবার কেউ ৩৫টি বৃত্ত ভরাট করলেও ফলাফলে দেখাচ্ছে তিনি ১২টি প্রশ্নের উত্তর করেছেন। ফল পুনঃনিরীক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের গুনতে হয়েছে দুই হাজার টাকা। যা অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেশি।   

বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে এইচএসসি পাসকৃত শিক্ষার্থী সাবিহা জান্নাত মিশা জানান, আমি বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী। অনেক আশা ছিল ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে ভালো একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। তবে গুচ্ছের কারণে আমার সেই স্বপ্ন আর পূরণ হবে না। শিক্ষার্থীদের স্বপ্নভঙ্গের এমন পরীক্ষা আমরা আর চাই না।

আরেক শিক্ষার্থী হোসাইন রাশেদ বাদল জানান, জেএসসি এবং এসএসসি পরীক্ষায় খারাপ ফলের কারণে আমার এইচএসসির রেজাল্ট খারাপ হয়েছে। পরীক্ষা হলে আমার ফল অনেক ভালো হত। আমি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় প্রাথমিক আবেদন করে সিলেকশনের কারণে বাদ পড়ে যাই। অথচ এর আগে এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ ৮ পেয়েও গুচ্ছভুক্ত অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ ছিল। এ ধরনের পরীক্ষায় যেখানে আমাদের সুবিধা হওয়ার কথা, অথচ সেটি না হয়ে আরও ভোগান্তি হচ্ছে।

ভর্তির আবেদন ফি নিয়েও আপত্তি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। গুচ্ছ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তি করবে। এ ক্ষেত্রে অন্য শর্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ঠিক করতে পারবে। ১২শ টাকা ফি দিয়ে এই পরীক্ষায় আবেদন করতে হয়েছিল ভর্তিচ্ছুদের। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আলাদা ফি নেবে কিনা সেটি আগে আলোচনা হয়নি। প্রথমে এই ফি ৬শ টাকা নির্ধারণের কথা ছিল। কিন্তু প্রত্যাশার চেয়ে কম আবেদনকারী পাওয়ায় খরচ পোষাতে গিয়ে পরে ফি বাড়ানো হয়। ৩ লাখ ৬১ হাজার শিক্ষার্থী এতে অংশ নিতে আবেদন করেছিল।

আরও পড়ুন- গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা বাতিলের দাবি ভর্তিচ্ছুদের

ভর্তিচ্ছুরা বলছেন, শুরুতে তারা ভেবেছিলেন, খরচের পর্ব এখানেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাই তারা ১২শ টাকা খরচ করা নিয়ে আপত্তি তোলেননি। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, খরচ আগের মতোই আছে। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আগের মতোই অর্থ আদায়ে নেমেছে। আগে ফি নিয়ে পরীক্ষা নিত। অর্থাৎ পরীক্ষার ব্যয় বাবদ কিছু শিক্ষার্থীর পেছনে ব্যয় করত। এখন কেবল আবেদন মূল্যায়ন করে মেধাক্রম তৈরির জন্য মোটা অঙ্কের অর্থ ধার্য শুরু হয়েছে। অবস্থা এমন যে, কোথাও বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের অনুষদ ধরে আবেদন করে একাধিক দফায় ফি পরিশোধ করতে হবে। অথচ বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের যেমন একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে, তেমনি একটি আবেদন ও একবার ফি নেওয়া হলেও কিছু সাশ্রয় হতো। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের আগের মতোই ভর্তির সুযোগ নিশ্চিতে এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরেক বিশ্ববিদ্যালয় আবেদন নিয়ে ছুটতে হবে।

এসব বিষয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, শিক্ষার্থীরা এখানে সবচেয়ে বড় যে সুবিধা পেয়েছে সেটি হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয় বা অনুষদ ও বিভাগ ধরে পরীক্ষা দেওয়া লাগছে না। পরীক্ষা কমে যাওয়ার কারণে তাদের ব্যয় এবং ভোগান্তি কমেছে।

তিনি আরও বলেন, আগামী ১ ও ২ তারিখের মধ্যেই অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়ে যাবে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, বুয়েটসহ বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যলয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া পুরোপুরি শেষ হয়নি। গুচ্ছভুক্ত কোনো বিশ্ববিদ্যালয় যদি এখন শিক্ষার্থী ভর্তি করায় পরে দেখা যাবে ওই শিক্ষার্থী বুয়েটেও চান্স পেয়েছে তখন সে বুয়েটেই ভর্তি হবে। আবার এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আসনটাও খালি হয়ে যাবে। যাতে প্রত্যেক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে সেজন্য সময় নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence