চশমা কিনে বাসায় ফিরছিলেন, সড়কবাতি না থাকায় নালায় পড়ে গেল প্রাণ

সেহেরীন মাহবুব সাদিয়া
সেহেরীন মাহবুব সাদিয়া  © সংগৃহীত

চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদের শাহজালাল চশমা মার্কেট থেকে চশমা কিনে বাসায় ফিরছিলেন সেহেরীন মাহবুব সাদিয়া (২০)। আগ্রাবাদ মাজারগেইটের সামনে প্রাইম ব্যাংকের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় একটি বড় খোলা নালায় পড়ে যান চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রথম বর্ষের এই শিক্ষার্থী। এর ৫ ঘণ্টা পরে সোমবার রাত ২টার দিকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করে দমকল বাহিনী।

জানা যায়, কয়েক বছর ধরে এখানে ফ্লাইওভারের কাজ চলছে। আগ্রাবাদ মোড় থেকে রবি অফিসের সামনে ও মাইজারগেইট পর্যন্ত কোনো সড়কবাতি নেই। সন্ধ্যার পর এ এলাকা ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে যায়। অন্ধকারে দেখতে না পেয়ে ও হালকা বৃষ্টিতে রাস্তায় পিছলে তিনি এ নালায় পড়ে যান। 

সাদিয়া পড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মামা মো. জাকির হোসেনও ঝাঁপ দেন। কিন্তু ১২ ফুট গভীর নালার স্রোত ও ময়লা-আবর্জনার কারণে সাদিয়াকে উদ্ধার করতে পারেননি। এর আধা ঘণ্টা পরে অভিযান শুরু করে দমকল বাহিনীর কর্মীরা। ঘটনাস্থলের ৫০ ফুট দূর থেকে উদ্ধার করা হয় তার নিথর দেহ। 

স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. আবুল কালাম বলেন, কয়েক বছর ধরে এই সড়কে নিয়মিত দুর্ঘটনা ঘটছে। গত এক সপ্তাহে এই খোলা নালায় চারজন পড়ে গেছেন। সর্বশেষ সাদিয়া নামে ওই ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। এর আগে অসুস্থ ব্যক্তি মো. রফিক ও দুই মহিলা পড়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। 

এর আগে ২৫ আগস্ট ভারী বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলে মুরাদপুর এলাকায় খালে পড়ে তলিয়ে যান সালেহ আহমদ নামের এক সবজি ব্যবসায়ী। যার হদিস এখনো মেলেনি। চলতি বছরের ৩০ জুনও ষোলোশহর চশমা হিল এলাকায় খালের পাশের সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় খালে পড়ে যায় একটি অটোরিকশা। স্রোত থাকায় খালে তলিয়ে মারা যান চালক সুলতান (৩৫) ও যাত্রী খাদিজা বেগম (৬৫)।

২০১৮ সালের ৯ জুন আমিন জুট মিল এলাকায় স্রোতে ভেসে যায় শিশু আল আমীন (৭)। ২০১৭ সালের ২ জুলাই এম এম আলী সড়কে রয়েল গার্ডেন কমিউনিটি সেন্টার সংলগ্ন বড় নালায় পড়ে তলিয়ে যান সাবেক সরকারি কর্মকর্তা শীলব্রত বড়ুয়া (৬২)। পরদিন মিয়াখান নগরে চাক্তাই খালে তার লাশ পাওয়া যায়।

ভাগ্নির এমন মৃত্যুতে একই সঙ্গে মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ জাকির হোসেন। বললেন, কীসের উন্নয়ন এসব? যে উন্নয়নে কয়েক দিন পরপর মানুষের মৃত্যু হয়। ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার অভিযান শুরু করতে ৩০ মিনিট বিলম্ব নিয়েও তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। 

এদিকে চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক মো. ফারুক হোসেন সিকদার বলেন, ওই ছাত্রী খোলা নালার যে জায়গায় পড়েছেন, তার ৫০ ফিট দূর থেকে তাঁকে উদ্ধার করা হয়েছে। নালাটি পশ্চিম, পূর্ব ও দক্ষিণে মোড় নিয়েছিল। ময়লা-আবর্জনায় ভরপুর থাকায় তাঁকে উদ্ধারে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। 

পরিবারের বরাতে ডবলমুরিং থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) অর্ণব বড়ুয়া জানান, সাদিয়া নগরীর হালিশহর থানার বড়পোল মইন্যাপাড়া এলাকায় শুক্কুর মেম্বারের বাড়িতে থাকতেন। বাবা মোহাম্মদ আলী প্রবাসী। তবে বর্তমানে দেশে আছেন। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সেহেরীন সবার বড়। 


সর্বশেষ সংবাদ