নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে দক্ষিণ এশিয়ায় বাস্তুচ্যুতি ও শরণার্থী ইস্যু নিয়ে বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও আলোচনা
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:৩৭ PM , আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:৩২ PM
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে (এনএসইউ) Displacement and Refugee Issues in South Asia: Uncovering the Contested Realities শীর্ষক একটি বইয়ের প্রকাশনা ও আলোচনা অনুষ্ঠান আয়োজন করে।
সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয়।
বিশ্বখ্যাত একাডেমিক প্রকাশনা সংস্থা Bloomsbury Publishing Inc. কর্তৃক প্রকাশিত এই সম্পাদিত গ্রন্থটিতে দক্ষিণ এশিয়ায় জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি, শরণার্থী শাসনব্যবস্থা এবং মানবিক সংকট নিয়ে সমসাময়িক ও গভীর বিশ্লেষণ উপস্থাপন করে। বইটি সম্পাদনা করেছেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক বুলবুল সিদ্দিকী।
অনুষ্ঠানে শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গঠনমূলক আলোচনা করেন। এতে বাংলাদেশ, ভারত, আফগানিস্তান, নেপাল এবং শ্রীলঙ্কার বাস্তুচ্যুতি পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করা হয়েছে—এমন এক সময়ে, যখন বৈশ্বিকভাবে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। সর্বশেষ ইউএনএইচসিআর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ বিশ্বব্যাপী ১২৩ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। বইটি এই বৈশ্বিক সংকটে দক্ষিণ এশিয়ার অবস্থানকে কেন্দ্রীয়ভাবে উপস্থাপন করে— একদিকে অঞ্চলটি শরণার্থীদের প্রধান আশ্রয়স্থল, অন্যদিকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বইয়ের সম্পাদক বুলবুল সিদ্দিকী বলেন, ‘এই বইটি দক্ষিণ এশিয়ায় বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর অভিজ্ঞতাকে সামনে আনার চেষ্টা করেছে এবং জরুরি মানবিক প্রতিক্রিয়ার বাইরে গিয়ে দীর্ঘমেয়াদি শাসনব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করেছে। মর্যাদা, সামাজিক সংহতি এবং আঞ্চলিক দায়িত্ব ভাগাভাগিকে বাস্তুচ্যুতি ব্যবস্থাপনার টেকসই ভিত্তি হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।
বইটিতে শরণার্থীদের আশ্রয় ও নাগরিকত্ব আইন, পরিবেশগত বাস্তুচ্যুতি, শরণার্থী বিষয়ক গণমাধ্যম উপস্থাপন, দীর্ঘস্থায়ী রোহিঙ্গা সংকট, কয়েক দশকের সংঘাতে গঠিত আফগান বাস্তুচ্যুতি, এবং শরণার্থী শিবির ব্যবস্থাপনাকে একটি বৈশ্বিক নীতিগত চর্চা হিসেবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
বইয়ের অন্যতম লেখক ও এনএসইউ-এর সিনিয়র লেকচারার পারিসা শাকুর উল্লেখ করেন যে বাংলাদেশে স্বাগতিক জনগোষ্ঠী ও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে সামাজিক সংহতি ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে, যা দীর্ঘমেয়াদি সহাবস্থানকে আরও জটিল করে তুলছে।
রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট বিষয়ক অধ্যায়ের লেখক এবং একজন রোহিঙ্গা গবেষক কাইসার হুসেইন তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে বাস্তুচ্যুতি কোনো সাময়িক অবস্থা নয়; এটি একটি কাঠামোগত বাস্তবতা। সমস্যার মূল রয়েছে মিয়ানমারে, এবং এই বাস্তবতাকে স্বীকার করে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।’
অনুষ্ঠানের আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ এশিয়ার শরণার্থী রাজনীতি বিষয়ক গবেষক আলতাফ পারভেজ। তিনি মন্তব্য করেন যে অঞ্চলের পরিচয়ভিত্তিক রাজনীতি শরণার্থী সংকটকে আরও জটিল করে তুলছে। তাঁর মতে, রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে গভীরভাবে প্রভাবিত করছে, এবং একটি সুস্পষ্ট শরণার্থী নীতির অভাব পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলছে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল হান্নান চৌধুরী। তিনি গ্রন্থটির বৈশ্বিক গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ‘শরণার্থী ও বাস্তুচ্যুতি বিষয়টি আজ একটি বৈশ্বিক সমস্যা, যার সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। এই গ্রন্থটি দক্ষিণ এশিয়ার বাস্তুচ্যুতি ও শরণার্থী পরিস্থিতি বোঝার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।’
এই আয়োজনের মাধ্যমে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি অভিবাসন, বাস্তুচ্যুতি ও শরণার্থী অধ্যয়নে উচ্চমানের গবেষণা ও বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনার প্রতি তাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে এবং দক্ষিণ এশিয়ায় বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর জটিল রাজনৈতিক ও মানবিক বাস্তবতা নিয়ে সংলাপের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিসর তৈরি করেছে।