ড্যাফোডিলের সহিদুল পলাশ

নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা থেকে কোটি টাকার স্কলারশিপে পিএইচডি

মোহাম্মদ সহিদুল ইসলাম পলাশ
মোহাম্মদ সহিদুল ইসলাম পলাশ  © টিডিসি ফটো

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির তরুণ শিক্ষক মোহাম্মদ সহিদুল ইসলাম পলাশ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের আন্তর্জাতিক স্কলারশিপ পেয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি জমাচ্ছেন সৌদি আরবের কিং ফাহাদ ইউনিভার্সিটি অব পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মিনারেলসে (KFUPM)। একসময় আর্মিতে যোগ দেওয়ার স্বপ্ন দেখা এই তরুণ প্রমাণ করেছেন, ব্যর্থতা সাফল্যের পথে বাধা নয়—সঠিক পরিকল্পনা, অধ্যবসায় ও আত্মবিশ্বাস থাকলে স্বপ্ন বাস্তবায়ন সম্ভব।

সহিদুল পলাশ এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ ৫ অর্জনের পর ভর্তি হন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (CSE) বিভাগে। সেখানে তিনি ৪.০০ স্কেলে সিজিপিএ ৩.৯৭ অর্জন করেন। শিক্ষার্থী অবস্থায় তিনি কম্পিউটার ও প্রোগ্রামিং ক্লাবের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে প্রিপেট হিসেবেও কাজ করেন। তখন থেকেই গবেষণার প্রতি তার আগ্রহ গড়ে ওঠে, যার ফলে ছাত্র অবস্থাতেই তার তিনটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়।

আরও পড়ুন: রুমিন ফারহানাকে গ্রেপ্তারের দাবি এনসিপির

সহিদুল বলেন, ‘গবেষণার প্রতি আগ্রহ ছিল, কারণ আমার শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন ছিল। একজন শিক্ষকের একটি গবেষণামূলক প্রোফাইল থাকা উচিত। স্কলারশিপ পাওয়ার লক্ষ্যও ছিল, তাই গবেষণায় মনোযোগ দেই।’

স্নাতক শেষ করে সহিদুল নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। নিজের ছাত্রজীবনের ক্যাম্পাসেই শিক্ষকতা করার অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি যখন কনভোকশনে অংশ নিই, তখন একই সঙ্গে আমি ছাত্র এবং শিক্ষক। দুটি গাউন পরার সুযোগ হয়েছিল। সেটা আমার জীবনের এক গর্বের মুহূর্ত। আমার মা–বাবাও ছিলেন সেই দিনে।’

উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন করে সহিদুল দুটি আন্তর্জাতিক পূর্ণাঙ্গ স্কলারশিপ অর্জন করেন। একটি সৌদি আরবের কিং ফাহাদ ইউনিভার্সিটি অব পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মিনারেলসে পিএইচডি গবেষণার জন্য, যেখানে মাসিক ভাতা, টিউশন ফি মওকুফ, আবাসন, চিকিৎসা ও গবেষণার জন্য অর্থসহ মোট ১৪টি সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। যার আনুমানিক আর্থিক মূল্য কোটি টাকারও বেশি। 

অপরটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইরাসমাস মুনডুস স্কলারশিপ—যেখানে স্পেন ও জার্মানিতে কমিউনিকেশনস ইঞ্জিনিয়ারিং ও ডেটা সায়েন্সে মাস্টার্সের জন্য পূর্ণ অর্থায়নসহ স্কলারশিপের আনুমানিক মূল্য ৭০ লাখ টাকা। সবদিক বিবেচনায় সহিদুল সৌদি আরবের পিএইচডি প্রোগ্রামটি বেছে নেন।

সহিদুল জানান, তার মূল স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া। কিন্তু দুইবার আইএসএসবি থেকে ‘লাল কার্ড’ পাওয়ার পর আত্মবিশ্বাসে ধাক্কা লাগে। তখন সিদ্ধান্ত নেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর থেকেই নিজেকে গড়ে তুলবেন। তিনি বলেন, ‘আমি কোনোদিন ফাঁকিবাজি করিনি। ভাবতাম, জীবনে কিছু একটা করতেই হবে।’

তিনি বিশ্বাস করেন, শুধু গবেষণার মাধ্যমে নয়—সফল হতে হলে দক্ষতা উন্নয়ন ও পড়াশোনার ভারসাম্য রাখতে হয়। ‘যারা পিএইচডি করতে চায়, তাদের জন্য গবেষণা বাধ্যতামূলক। অন্তত একটি গবেষণাপত্র প্রকাশের চেষ্টা করতে হবে। তবে শুধু গবেষণা দিয়ে চাকরির বাজারে টিকে থাকা যাবে না—দক্ষতা উন্নয়ন আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’

সহিদুল বলেন, ‘অনুপ্রেরণা বলতে নির্দিষ্ট কেউ নেই। বাবা-মা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সহায়তায় এতদূর আসা। আমি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাইনি, তবুও হাল ছাড়িনি। স্বপ্ন পূরণ করতে হলে নিজের উপর বিশ্বাস রাখতে হয়।’

আর্মিতে যেতে না পারলেও সহিদুল আজ দেশের তরুণদের কাছে এক অনুপ্রেরণার নাম—যিনি শিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে দেশসেবার পথ বেছে নিয়েছেন।


সর্বশেষ সংবাদ