এনএসইউয়ে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান এবং বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত

সেমিনারে বিশিষ্ট কূটনীতিক, শিক্ষাবিদ, নীতিনির্ধারক ও ব্যবসায়িক নেতারা অংশগ্রহণ করেন
সেমিনারে বিশিষ্ট কূটনীতিক, শিক্ষাবিদ, নীতিনির্ধারক ও ব্যবসায়িক নেতারা অংশগ্রহণ করেন  © সংগৃহীত

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির (এনএসইউ) সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্স (এসআইপিজি) ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান এবং বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক: পেছনে ফিরে দেখা ও ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা’ শীর্ষক একটি গুরুত্বপূর্ণ সেমিনারের আয়োজন করে সোমবার (২৮ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট হলে। 

সেমিনারটিতে বিশিষ্ট কূটনীতিক, শিক্ষাবিদ, নীতিনির্ধারক এবং ব্যবসায়িক নেতারা অংশগ্রহণ করেন এবং বাংলাদেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তন, বিশেষ করে ২০২৪ সালের ছাত্র নেতৃত্বাধীন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গতিপথ ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি হয়।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সুফিউর রহমান, যিনি এসআইপিজির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো। রাষ্ট্রদূত রহমান বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ঐতিহাসিক বিবর্তন—মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রাথমিক টানাপোড়েন থেকে শুরু করে সর্বস্তরে কৌশলগত সহযোগিতায় পরিণত হওয়া—বিস্তৃতভাবে তুলে ধরেন। তিনি নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতার আলোকে কূটনৈতিক উদ্যোগ পুনর্বিন্যাসের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভবিষ্যৎ গঠনে ভারত ফ্যাক্টর এবং চীন ফ্যাক্টরের ভূমিকা চিহ্নিত করেন। 

রাষ্ট্রদূত রহমান যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যেসব শুল্কমুক্ত সুবিধার বিনিময়ে মেধাস্বত্ব, শ্রম আইন ইত্যাদি মানদণ্ড পূরণের দাবি তোলা হয়, তা নিয়ে বাংলাদেশের অস্বস্তির কথা উল্লেখ করেন। সেইসঙ্গে চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক হ্রাস করার চাপকেও তিনি প্রশ্নবিদ্ধ হিসেবে উপস্থাপন করেন। তিনি দুই দেশকে স্বল্পমেয়াদী লাভের পরিবর্তে বিশ্বাস স্থাপন এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থের ওপর মনোযোগ দিতে পরামর্শ দেন। একই সঙ্গে স্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার হিসেবে জবরদস্তিমূলক উপায় পরিহার করার আহ্বান জানান।

সেমিনারে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক কূটনীতিক জন এফ. ড্যানিলোভিজ একটি বক্তব্য প্রদান করেন, যেখানে তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক, পরিবর্তনশীল মার্কিন ইন্দো-প্যাসিফিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতা বজায় রাখতে গণতান্ত্রিক সম্পৃক্ততার গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি জুলাই বিপ্লবে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে ছড়ানো ভুয়া তথ্য ও বিভ্রান্তির তীব্র প্রতিবাদ জানান এবং স্পষ্টভাবে বলেন, জুলাই বিপ্লবে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ভূমিকা ছিল না। তিনি উভয় দেশকে পারস্পরিক আস্থার ভিত্তিতে সম্পর্ক উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করার পরামর্শ দেন।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের পর তিনজন বিশিষ্ট আলোচক বাংলাদেশ-মার্কিন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও কৌশলগত মাত্রা নিয়ে তাঁদের মতামত তুলে ধরেন। বিজিএমইএর প্রাক্তন সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জনাব ফয়সাল সামাদ সম্প্রতি বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বৃদ্ধির প্রভাবের ওপর আলোকপাত করেন। তিনি বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য নীতির পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে বাস্তববাদী বাণিজ্য কূটনীতির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে, তারা নতুন আরোপিত শুল্ক নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এটি কেবল ৮ বিলিয়ন ডলারের সমস্যা নয়—এটি আমাদের অর্থনীতিতে আরও ব্যাপক, বহু বিলিয়ন ডলারের প্রভাব ফেলবে। তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন, বাংলাদেশে এখন আরও বেশি বাণিজ্য দরকার, সাহায্য নয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক শাহিদুজ্জামান বাংলাদেশের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে অবস্থান বিশ্লেষণ করেন। তিনি অতীতের কূটনৈতিক ঐতিহ্য কীভাবে বর্তমান শাসন ব্যবস্থার চ্যালেঞ্জগুলোকে প্রভাবিত করছে তা উল্লেখ করেন। তিনি চীন ও ভারতের আঞ্চলিক বিশেষ গুরুত্বের ওপর আলোকপাত করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এই বাস্তবতা অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা ও ভূ-রাজনৈতিক বোঝাপড়ার আলোকে গ্রহণ করার আহ্বান জানান।

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিকস স্কুলের ডিন ও অধ্যাপক ড. এ.কে.এম. ওয়ারেসুল করিম, বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের উপর একটি অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, গণতন্ত্র কেবল একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা নয়, এটি একটি মূল্যবোধ। এই বৈপরীত্যই অনেক কিছু বলে দেয়। তিনি উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার ও গণতান্ত্রিক মিত্র। আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে কেবল আমাদের পাশে নয়, বরং আমাদের জনগণের পাশে—সম্মান, ন্যায়বিচার ও গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতার যৌথ অভিযানে দেখতে চাই।

সমাপনী বক্তব্যে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল হান্নান চৌধুরী জাতীয় স্বার্থে কৌশলগত অংশীদারত্বের মাধ্যমে অগ্রগতি সাধনে প্রমাণভিত্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সংলাপের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি আমন্ত্রিত অতিথিদের ধন্যবাদ জানান এবং গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে জ্ঞানভিত্তিক আলোচনার পরিবেশ তৈরিতে এনএসইউর অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, নতুন প্রযুক্তি এবং উন্নত বেতন কাঠামোসহ ভালো চর্চা গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। পাশাপাশি, তিনি বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে জ্ঞান সৃষ্টিতে ও প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতায় আরও মনোযোগী হওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন এসআইপিজির পরিচালক অধ্যাপক শেখ তৌফিক এম. হক। তিনি বিদেশনীতি সংলাপ গঠনে একাডেমিক সম্পৃক্ততার গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এই সেমিনারটি এক সংকটময় মুহূর্তে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে এবং বাংলাদেশের বৈদেশিক সম্পর্ক, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে, নতুন সুযোগ ও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। অনুষ্ঠানের সূচনা বক্তব্য প্রদান করেন ড. নূর মোহাম্মদ সরকার, সহকারী অধ্যাপক, রাজনৈতিক বিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি। 

 


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence