‘আমার ভাইবোনেরা রাস্তায় মার খাচ্ছে, আমি ঘরে বসে থাকবো কেন?’

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গুরুতর আহত মেহেদী হাসান রনি
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গুরুতর আহত মেহেদী হাসান রনি  © টিডিসি

‘আমার ভাইবোনেরা রাস্তায় মার খাচ্ছে, আমি ঘরে বসে থাকবো কেন?’ এই এক প্রশ্ন থেকেই শুরু হয়েছিল মেহেদী হাসান রনির জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহনের সিদ্ধান্ত। ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের এই ছাত্র যিনি নিজেকে আর আটকে রাখতে পারেননি ২০২৪ সালের জুলাইয়ের সেই উত্তাল দিনগুলোতে। দেশজুড়ে তখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাস্তায়। ১৩-১৪ জুলাই গণমাধ্যমে ও ফেসবুকে যখন নির্যাতনের ছবি ছড়িয়ে পরছিলো, তখন রনির ভিতরে আগুন জ্বলে ওঠে।

১৫ জুলাই, নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠীদের নিয়ে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সঙ্গে যুক্ত হয়ে তিনি নতুনবাজার ব্লকেড কর্মসূচিতে অংশ নেন। সেই রাতেই শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন শুরু হয়। এরপরের দিনগুলোয় আন্দোলনের গতি বাড়ে, বাড়ে হুমকি-ধমকি, বাড়ে হামলার তীব্রতা।

সাঈদনগর অটোস্ট্যান্ডে ছাত্রলীগের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ, বন্ধুরা আহত, তবু পিছু হঠেননি তিনি। এমনকি সাতারকুলে থাকার সময় স্থানীয় ছাত্রলীগ কর্মীরা ফোনে হুমকি দিলেও, তার স্পৃহা থেমে থাকেনি। বরং আন্দোলনের নেতৃত্ব আরও দৃঢ়ভাবে নিজের কাঁধে তুলে নেন ।

১৮ জুলাই ভোরে আবারও দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে নতুনবাজারের দিকে রওনা দেন। পথে আবারও হামলা, সংঘর্ষ—তবু এগিয়ে যান। নতুনবাজারে NSU, AIUB, IUB, BRAC, MIU, Presidency–সহ প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একসাথে। সেই বিশাল মিছিলে রনি ছিলেন সামনে, মাইক হাতে স্লোগান দিতে দিতে এগিয়ে যাচ্ছিলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে।

লিংক রোডের কাছাকাছি যেতেই হঠাৎ পুলিশ ও ছাত্রলীগের যৌথ বাহিনী হামলা করে। টিয়ারগ্যাস, ছত্রভঙ্গের চেষ্টা, রাবার বুলেটের গুলিবর্ষণ। কানাডিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে রনি সরাসরি গুলিবিদ্ধ হন। তার শরীরে একে একে ১৪টি রাবার বুলেট বিদ্ধ হয়।

গুরুতর আহত রনিকে সহপাঠীরা এমএমজেড হাসপাতালে নেয়। এরপর ঢাকায় কোনোভাবেই চিকিৎসা করা সম্ভব হচ্ছিল না, কারণ ছাত্রলীগের তৎপরতা ছিল সর্বত্র। রনিকে গোপনে রামপুরায় আত্মীয়ের বাসায় রাখা হয়। কয়েকদিন পরে বুড়িগঙ্গা নদীপথে কৌশলে পাঠানো হয় গ্রামের বাড়িতে।

সেখানে কিশোরগঞ্জের জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার শরীর থেকে অপারেশন করে বের করা হয় ৯টি বুলেট। গলার ভেতরের বুলেটটি আলাদা করে অপারেশন করে বের করতে হয়। কিন্তু এখনো তার শরীরে রয়ে গেছে অন্তত ৪টি রাবার বুলেট, যেগুলো শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে থাকায় বের করা সম্ভব হয়নি।

আজও রনি সেই বুলেটগুলোর ভার বইছেন। শারীরিক কষ্ট থাকলেও তার কণ্ঠে অনুশোচনা নেই— ‘আমি জানি, আমি একা না। আমার গায়ে গুলি লাগলেও সেটা হাজার শিক্ষার্থীর কণ্ঠরোধের চেষ্টা ছিল। কিন্তু আমি থামিনি। আজও থামিনি।’


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!