শাস্তি প্রত্যাহার শুরু, ক্লাসে ফিরছেন ইউআইইউ শিক্ষার্থীরা
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২০ জুন ২০২৫, ১২:২৯ PM , আপডেট: ২২ জুন ২০২৫, ০৮:২৯ PM
দীর্ঘ অনিশ্চয়তা ও সংকটময় পরিস্থিতি উত্তরণ শেষে সশরীরে ক্লাসে ফিরছেন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকদের গণপদত্যাগ ও প্রশাসনিক অস্থিরতার পর গত ২৭ এপ্রিল অনির্দিষ্টকালের জন্য সরাসরি ক্লাস স্থগিত করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সে হিসেবে প্রায় ৫৪ দিন পর কাল শ্রেণিকক্ষে ঢুকতে যাচ্ছেন উচ্চশিক্ষালয়টির কয়েক হাজার ছাত্র-ছাত্রী; যদিও একাডেমিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে গত ২০ মে থেকে অনলাইনে ক্লাস চালু রেখেছিল প্রতিষ্ঠানটি।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, অনলাইনে ক্লাস চালু থাকলেও বিষয়টি পুরোপুরিভাবে একাডেমিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারছিল না। ক্যাম্পাসে ফেরা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ায় শিক্ষার্থীরাও এক ধরনের মানসিক চাপে ভুগছিল। মূলত এসব বিষয়গুলোই শিক্ষার্থীদের মধ্যে সরাসরি ক্লাসে ফেরার আগ্রহ বাড়িয়েছে। তারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ক্লাস-পরীক্ষার সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেমন স্বস্তি এনেছে; তেমনি হীন উদ্দেশ্য হাসিলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদেরকেও দিয়েছে কঠোর বার্তা।
জানতে চাইলে সিএসই বিভাগের শেষ বর্ষে পড়ুয়া সাজ্জাদুর রহমান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, ‘এক ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটছিল। কখন সেমিস্টার শেষ করব, কবে গ্র্যাজুয়েশন শেষ হবে— কিছুই জানি না। ঈদের আগে অনলাইন ক্লাসে নিয়মিত হলেও পড়াশোনাটা ঠিকঠাক হচ্ছে না। ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, আন্দোলনের কারণে শুধু ‘একাডেমিক লাইফ’ নয়, ক্যারিয়ারও ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। আমরা চাই সবার স্বার্থে দ্রুত সমাধান হোক। কারণ, আন্দোলনের যৌক্তিকতা যতই হোক, তা বিশ্ববিদ্যালয় খোলা-ক্লাস চালুর বিকল্প হতে পারে না।’
বিবিএ শিক্ষার্থী মুহাইমিন হাসান জানান, ‘যারা আন্দোলন করছেন, তাদের দাবির প্রতি সম্মান আছে। কিন্তু পুরো ইউনিভার্সিটির কার্যক্রম বন্ধ রাখা যুক্তিযুক্ত নয়। দুই পক্ষ মিলে সমাধানে না গেলে ক্ষতি শিক্ষার্থীদেরই।’ নাফিস নামে একজন শিক্ষার্থী জানান, যারা আন্দোলন করছে, তাদের সংখ্যা একেবারেই সীমিত। আরও বড় বিষয় হলো— আন্দোলনের উৎসাহদাতার সংখ্যা হাতেগোনা ৩-৪ জন। তারা কী উদ্দেশ্যে শিক্ষার্থীদের বৃহৎ অংশের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে, সেটা তারাই ভালো বলতে পারেন।’ ‘তবে বিষয় যাই হোক, আমরা ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরতে চাই’, যোগ করেন নাফিস।
১৯ জুন (বৃহস্পতিবার) প্রথম দফায় ৫ জন শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হয়েছে। বাকিরা ২১ ও ২২ জুন অভিভাবকসহ ক্যাম্পাসে আসবেন— ডিসিপ্লিনারি কমিটি তাদের বিষয়টিও ইতিবাচকভাবে দেখবেন বলে আশা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। শাস্তি প্রত্যাহার হওয়ার শিক্ষার্থীরা হলেন— মেহেদী হাসান মামুন, হাসান মাহমুদ, আনিক আনজুম মনা, ফায়াজ কবির ও সাদিয়া রহমান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ থাকায় জুন মাসের শুরুর দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪ জনকে স্থায়ী ও ১৬ জনকে সাসপেন্ডেড বহিষ্কার (ভবিষ্যতে শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে বহিষ্কার হবে) এবং ১ জনকে সতর্কবার্তা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। যদিও ‘স্থায়ী বহিষ্কার’ যে চূড়ান্ত নয়, সে সময় বিষয়টি স্পষ্ট করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শাস্তির আদেশপত্রে উল্লেখ করা হয়— শিক্ষার্থীরা যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ই-মেইলের মাধ্যমে আবেদন করে এবং ভবিষ্যতে শৃঙ্খলাবিধি অনুসরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়, তাহলে পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে শাস্তি মওকুফের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার সুযোগ থাকছে।
ইউআইইউ কর্তৃপক্ষ জানায়, গত ৩ জুন চিঠি প্রাপ্তির পর বহিষ্কার হওয়া ২৪ শিক্ষার্থীর মধ্যে ২২জনই ক্ষমা প্রার্থনা করে শাস্তি মওকুফের আবেদন জানান। এর প্রেক্ষিতে ১৯ জুন (বৃহস্পতিবার) প্রথম দফায় ৫ জন শিক্ষার্থীকে অভিভাবকসহ ডাকা হয়েছে এবং তাদের স্থায়ী বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হয়েছে। বাকিরা ২১ ও ২২ জুন অভিভাবকসহ ক্যাম্পাসে আসবেন; আশা করা যায়— ডিসিপ্লিনারি কমিটি তাদের বিষয়টিও ইতিবাচকভাবে দেখবেন। প্রথম দফায় শাস্তি প্রত্যাহার হওয়ার শিক্ষার্থীরা হলেন— মেহেদী হাসান মামুন, হাসান মাহমুদ, আনিক আনজুম মনা, ফায়াজ কবির ও সাদিয়া রহমান।
শাস্তি মওকুফ হওয়া ৫ শিক্ষার্থীর মধ্যে অন্তত তিনজনের সঙ্গে কথা বলেছে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস। প্রত্যেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্ত দিয়ে ‘শাস্তি থেকে মুক্তি পাওয়া’র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তারা জানিয়েছেন, ‘স্থায়ী বহিষ্কারের বিষয়টি প্রত্যাহার করে তাদেরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। শর্ত দেওয়া হয়েছে, ভবিষ্যতে এমন কাজে জড়ালে ফের বহিষ্কার করা হবে।’ বিষয়টিকে ‘ইতিবাচক’ আখ্যা দিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রথম দফায় পাঁচজনের শাস্তি প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষের চাওয়া— সর্বোচ্চ সংখ্যক শিক্ষার্থীকে শাস্তিমূলক সিদ্ধান্ত থেকে অব্যাহতি দেওয়া। সেজন্য ২২ শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবক প্রত্যেককেই ডাকা হয়েছে। ব্যস্ততা ও ঢাকার বাইরে অবস্থান করার কারণে অনেক অভিভাবক বৃহস্পতিবার আসতে পারেনি। কাল-পরশু (২১-২২ জুন) ডিসিপ্লিনারি কমিটির সঙ্গে দেখা করলে তাদের ব্যাপারেও ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসবে বলে আশা করা যায়।
‘আন্দোলনের জেরে শিক্ষার্থীদের অন্যায়ভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে; এটা প্রত্যাহার করতে হবে। আমরা ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার গিয়েছি। কিন্তু কেউ আমাদের সমস্যা সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি।’ —আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী
যদিও শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারাদেশ এখনও প্রত্যাহার না হওয়ায় কেউ কেউ অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী সালমান বারী রিজাল বলেন, আন্দোলনের জেরে শিক্ষার্থীদের অন্যায়ভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ কারণেই তারা ২১ জুন (শনিবার) রাজধানীর নতুনবাজার এলাকায় ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। তার দাবি, শর্ত ছাড়া সকল শিক্ষার্থীর বহিষ্কার প্রত্যাহার করতে হবে। তিনি আরও বলেন, তারা ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার গেছেন। কিন্তু কেউ তাদের সমস্যা সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি।’
যদিও ইউজিসির এক সূত্র জানিয়েছে, ইউআইইউ শিক্ষার্থীরা অন্তত ৭ বার তাদের কাছে এসেছেন। তারাও যথাসম্ভব শিক্ষার্থীদের সহায়তার চেষ্টা করেছেন। শিক্ষার্থীদের শাস্তি মওকুফে মন্ত্রণালয়ে চিঠিও দিয়েছেন। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্র-ছাত্রীদের শাস্তি মওকুফের ব্যবস্থা রেখেছেন এবং এ ব্যাপারে ইতিবাচক। তাই শিক্ষার্থীদের উচিত— মাঠ ছেড়ে ক্লাসে ফিরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে বসা। এটাই তাদের জন্য মঙ্গলজনক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বান
এদিকে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার আহ্বান জানিয়ে সম্প্রতি একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে ইউআইইউ । এতে বলা হয়েছে, গুটিকয়েক শিক্ষার্থীর অনৈতিক ও মবমূলক আচরণের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ হাজারের বেশি সাধারণ শিক্ষার্থী চরম হতাশার মধ্যে পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের দুঃখ প্রকাশের পাশাপাশি শীঘ্রই সাধারণ শিক্ষার্থীর সহায়তায় ক্যাম্পাসে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। বিজ্ঞপ্তিতেও এও বলা হয়, 'স্বার্থান্বেষী কোন মহলের প্ররোচনায় বিপথে যাওয়া কিছু শিক্ষার্থীর কারণে যাতে আমাদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগ্রহণ ব্যাহত না হয়, সে বিষয়ে আমরা সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করছি।'
আন্দোলনকে 'ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধি' আদায়ের মাধ্যমে হিসেবে উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, 'আজ সময় এসেছে, শিক্ষাঙ্গনে মব সংস্কৃতির অবসান ঘটানোর। স্বার্থান্বেষী মহলের প্ররোচনায় মুষ্টিমেয় কিছু শিক্ষার্থীর হাতে আমরা আমাদের হাজার হাজার সাধারণ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন জিম্মি হতে দিতে পারি না। এসব শিক্ষার্থীর একাডেমিক সুরক্ষার জন্য আমরা যা কিছু করার দরকার, সবকিছুই করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।'