গণঅভ্যুত্থানে আহতদের টিউশন ফি মওকুফ করছে না নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয়

নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয়
নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয়  © সম্পাদিত

গত ২৯ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, জুলাই-আগস্টে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহত মাধ্যমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের সকল সরকারি-বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, কারিগরি ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বেতন/টিউশন ফি মওকুফের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, আহত শিক্ষার্থীরা নিজ শিক্ষালয় প্রধানের নিকট চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্রসহ এ বিষয়ে আবেদন করবেন। প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে আবেদনসমূহ যাচাইপূর্বক শিক্ষার্থীদের বেতন/টিউশন ফি মওকুফের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

তবে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সরকারি এই নির্দেশনার বিষয় মানছে না রাজধানীর বেসরকারি নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ। এমনকি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই প্রজ্ঞাপন বাস্তবায়নের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি খোদ উচ্চশিক্ষার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। একইসঙ্গে বিষয়টি অবগত না থাকার কথা স্বীকারও করেছেন ইউজিসি সংশ্লিষ্টরা।

বিষয়টি নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন জুলাই আন্দোলনে আহত হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। তারা জানান, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে তারা এমন কোনো নির্দেশনার বিষয়ে অবগত নয়। ইউজিসি থেকে নির্দেশনা না আসলে বিষয়টি বাস্তবায়ন করতে পারবে না তারা। 

এদিকে টিউশন ফি মওকুফ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে সমাধান না পেয়ে শিক্ষার্থীরা ছুটে আসেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) কাছে। কিন্তু সেখানেও আহত শিক্ষার্থীদের এক দফতর থেকে আরকে দফতরে প্রেরণ করছেন ইউজিসি সংশ্লিষ্টরা। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

রবিবার (১৭ নভেম্বর) ইউজিসিতে মো. মঈন উদ্দিন নামে নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থীর সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমি আন্দোলনে আহত হয়ে দীর্ঘদিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। ২ লক্ষ টাকার উপরে খরচ হয়। এই মুহূর্তে টিউশন ফি দেওয়ার মতো সামর্থ্য নেই। আগামী ডিসেম্বরের শুরুতে সেমিস্টার পরীক্ষা। তার আগে টিউশন ফি জমা দিতে হবে।

‘নটরডেম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সকল শিক্ষার্থীর এক সেমিস্টারের ২০ শতাংশ টিউশন ফি মওকুফ করেছে। এর বাইরে আন্দোলনে আহতদের টিউশন ফি মওকুফের বিষয়টি নিয়ে কোনো শিক্ষার্থী তাদের সাথে যোগাযোগ করেননি বলে জানান— তথ্য প্রদানকারি কর্মকর্তা, নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ

ভোগান্তির কথা জানিয়ে এই শিক্ষার্থী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় বলছে তারা নির্দেশনা পায়নি। তারা ইউজিসির কাছে পাঠিয়েছে। ইউজিসিতে আসলাম, কিন্তু তারা এক দফতর থেকে আরেক দফতর পাঠাচ্ছে। তারা এ সম্পর্কে কিছুই জানে না। বিভিন্ন দফতরে দুই ঘণ্টা ঘুরে কোন কূল কিনারা করতে পারেনি। 

ক্ষোভ প্রকাশ করে মঈন উদ্দিন জানান, আমরা বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলাম। কিন্তু আন্দোলনের পর নিজেরা এখন হয়রানির শিকার হচ্ছি। ইউজিসির মতো প্রতিষ্ঠান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের বিষয়ে কিছুই জানে না। আমার প্রশ্ন হলো আমাকে এখানে আসতে হলো কেন? একটা নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে কতদিন লাগে? 

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন থেকে জানা যায়, প্রজ্ঞাপনের অনুলিপি ইউজিসি এবং সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট বোর্ডগুলোতেও পাঠানো হয়। যদিও নটরডেম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন বলে জানান।

‘আমরা এ সম্পর্কে তেমন কিছু জানি না। কোনো নোটিশ পাইনি। অন্য কোথাও কোনো নির্দেশনা আছে কি-না বলতে পারব না। ইউজিসির সচিব কিংবা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্য ভালো জানবেন— ড. সুলতান মাহমুদ ভুইয়া, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক, ইউজিসি

বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রার ড. ফাদার লিওনার্দো শংকর রোজারিওর অফিসিয়াল নাম্বারে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তথ্য কর্মকর্তা পরিচয়ে একজন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, নটরডেম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সকল শিক্ষার্থীর এক সেমিস্টারের ২০ শতাংশ টিউশন ফি মওকুফ করেছে। এর বাইরে আন্দোলনে আহতদের টিউশন ফি মওকুফের বিষয়টি নিয়ে কোনো শিক্ষার্থী তাদের সাথে যোগাযোগ করেননি বলে জানান। তবে ওই কর্মকর্তা নিজের পরিচয় জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক ড. সুলতান মাহমুদ ভুইয়া জানান, আমরা এ সম্পর্কে তেমন কিছু জানি না। কোনো নোটিশ পাইনি। অন্য কোথাও কোনো নির্দেশনা আছে কি-না বলতে পারব না। ইউজিসির সচিব কিংবা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্য ভালো জানবেন।

শিক্ষার্থীরা তার দফতরে এসে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ সম্পর্কে লিখিত কোন অভিযোগ পাইনি। খোঁজ নিলে বিষয়টি জানাতে পারব। ইউজিসির সচিব ড. মো. ফখরুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনিও কোনো সাড়া দেননি।

বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন জানান, সরকারের পক্ষ থেকে এ ধরনের কোনো নির্দেশনা আছে বলে আমার জানা নেই। যদি নির্দেশনা থাকে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সেটা অনুসরণ করা উচিত।

আরও পড়ুন: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি চালু নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান কী?

ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা সবাইকে অনুসরণ করতে হবে। যারা বিষয়টি মানছেন না আমরা জানতে পারলে তাদের সাথে যোগাযোগ করব। কেন তারা টিউশন ফি মওকুফ করছে না বিষয়টি খোঁজে নেব। আহত শিক্ষার্থীরা চাইলে আমার কাছে আসতে পারেন।


সর্বশেষ সংবাদ