ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুতে কথা বলে এবার চাকরি হারাচ্ছেন আইইউবির ড. সরোয়ার!

ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন ও ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ লোগো
ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন ও ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ লোগো  © টিডিসি ফটো

পাঠ্যবইয়ে ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুতে কথা বলে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাবকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয় সারাদেশে। একই অনুষ্ঠানে ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুতে প্রতিবাদ করায় এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কোর্স থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (আইইউবি)’র স্কুল অফ এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড লাইফ সায়েন্সের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেনকে।

এর আগে গত শুক্রবার রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে ‘বর্তমান কারিকুলামে নতুন পাঠ্যপুস্তক: বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক সেমিনারে নতুন কারিকুলামের সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান পাঠ্যবইয়ের শরীফ থেকে শরীফা হওয়ার গল্পের অংশটুকু প্রতিবাদ করেন ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন। তার এ প্রতিবাদের ভিডিও ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।  

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের বিষয়ে জানতে ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেনকে মেইল করা হলে তিনি প্রতিউত্তরে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে এখনো অফিশিয়ালি টার্মিনেট করেনি। লেটার পাইনি। তবে সব ক্লাস থেকে আমাকে প্রত্যাহার করেছে যা দুঃখজনক’

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি  (আইইউবি) প্রক্টর অধ্যাপক খসরু মোহাম্মদ সেলিম দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ডক্টর মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেনকে ক্লাস থেকে প্রত্যাহারের কোনো আনুষ্ঠানিক চিঠি ইস্যুি হয়নি। এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক চিঠি আসলে তখন আমরা নিশ্চিত হতে পারবো। 

শিক্ষকদের সেমিনারে যা বলেছিল ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন

রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে ‘বর্তমান কারিকুলামে নতুন পাঠ্যপুস্তক: বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি বলেন, ‘ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুতে আপনাদের যদি ভেঙে ভেঙে বুঝাইতাম তাহলে আপনারা রাতে ঘুমাইতে পারবেন না। ট্রান্সজেন্ডার ইস্যু মারাত্মক ইস্যু। আমি এ বিষয়ে ৬ বছর পিএইচডি করেছি’ 

তিনি আরো বলেন, ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুতে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়কে আমার সন্দেহ হয়েছিল তাই চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলাম। ট্রান্সজেন্ডার ইস্যু বুঝতে হলে জনস্বাস্থ্য বুঝতে হবে। তাহলে ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুটা বুঝতে পারবেন। 

তিনি আরো বলেন, সমকামিতা কোনো আলোচনার বিষয় ছিল না। এর কারণে কওমে লূত ধ্বংস হয়েছে। সব ধর্মে নিষিদ্ধ এ সমকামিতা। 

‘গতকাল শুনলাম আমার প্রতিষ্ঠানে আমার জন্য পলিসি তৈরি করেছে। যেন চাকরি খেয়ে দিতে পারে। ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুতে যে কথা বলবে তাকে চাকরি খেয়ে দিতে পারবে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়’ 

তিনি আরো বলেন, সপ্তম শ্রেণীর বইতে শরীফ শরীফার গল্প আসছে। মনে মনে নারী এবং মনে মনে পুরুষ এটা ভয়ংকর জিনিস। 

তিনি আরো বলেন, আমার লাইফ ঝুঁকির মধ্যে, আপনারা কি জানেন?  আমার পিছনে অনেক লোক ঘুরতেছে। আমি বাহিরে যেতে পারি না।  আমাকে টার্গেট করে ওরা কমপ্লেইন করেছে , চাপে ফেলেছে। আমি বললাম এটা কীভাবে সম্ভব। আমরা জাতি গঠন করি। আমরা চাই সাসটেইনেবল সোসাইটি হোক, আমরা কি চাই অসুস্থ সোসাইটি হোক?  

অনেকে এ বিষয়ে কথা বলতে চায় না উল্লেখ করে এই গবেষক বলেন,  আপনাদের কি বলি আপনার ছেলে সন্তান যদি বলে আমি মনে মনে মেয়ে হয়ে গিয়েছি, অথবা মেয়ে যদি বলে মনে মনে ছেলে হয়ে গিয়েছি। এটা কি আপনারা মেনে নিতে পারবেন? সহ্য করতে পারবেন?  

তিনি আরো বলেন, ‘দুঃখ লাগে। এই দেশের জন্য আমার পরিবারের ৫ জন মুক্তিযুদ্ধ করেছে। আমার বাবা মুক্তিযুদ্ধ করেছে। অ্যাপলের টিম কুক যখন বলে আমি সমকামী তখন সবাই সেলিব্রেট করে আর আমি একজন মুসলিম একাডেমিশিয়ান এ পরিচয় দিতে পারি না’  

‘আমার জীবন বিপন্ন, কেউ আমার পাশে দাঁড়ায়নি। আমার কি পরিবার নেই। আমি কি কারো ক্ষতি করেছি? আমি জেন্ডার ইস্যুতে এক্সপার্ট । আর আমাকে এ বিষয়ে বলতে দেওয়া হচ্ছে না’ 

তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘২০২২ সালের আদমশুমারির ফাইনাল রিপোর্ট অনুযায়ী হিজড়া, ট্রান্সজেন্ডার সবাই মিলে মাত্র ৮ হাজার। আর এ ৮ হাজারের জন্য বিলিয়ন ডলার খরচ করতে রাজি পশ্চিমারা। কিন্তু কেনো ?

শরীফা গল্প পর্যালোচনার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি গঠন 

এদিকে সমালোনার মুখে সপ্তম শ্রেণির পাঠ্য বইয়ের শরীফ থেকে শরীফা হওয়ার গল্প পর্যালোচনার জন্য পাঁচ সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কমিটির প্রধান করা হয়েছে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আবদুর রশীদকে।

কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গভর্নর মুফতি মাওলানা কফিল উদ্দীন সরকার, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সদস্য অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক আবদুল হালিম এবং ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আবদুর রশিদ।

উল্লেখ্য ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন ২০ বছর যাবৎ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা এবং লাইফ সায়েন্স ও জনস্বাস্থ্য সেক্টরে গবেষণা করছেন। তিনি ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ সিঙ্গাপুর থেকে মলিকিউলার বায়োলজিতে পিএইচডি সম্পন্ন করে ডিউক-এনইউএস গ্র্যাজুয়েট মেডিকেল স্কুল এবং ন্যাশনাল ক্যান্সার সেন্টার সিঙ্গাপুর (এনসিসি)-এ পোস্টডক্টরাল রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করেছেন। 

ড. হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাইক্রোবায়োলজিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। তিনি দীর্ঘ ১০ বছর সিঙ্গাপুরে গবেষণার প্রশিক্ষণ নিয়ে বাংলাদেশে ফিরে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। এরপর দেশের স্বনামধন্য এক ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতেও বায়োফার্মাসিউটিক্যাল ড্রাগ তৈরির প্রজেক্টে সিনিয়র ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। 

সর্বশেষ তিনি ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (আইইউবি) স্কুল অফ এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড লাইফ সায়েন্স–এ সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এর পাশাপাশি তিনি অনারারি প্রিন্সিপাল ফেলো হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার উলংগং ইউনিভার্সিটির সাথে যুক্ত রয়েছেন। ড. হোসেন বায়োমেডিকেল রিসার্চ ফাউন্ডেশন (বিআরএফ)-এর নির্বাহী পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। বিআরএফের উদ্যোগে মাঠ পর্যায়ে (জামালপুর) থ্যালাসেমিয়া রোগ প্রতিরোধ নিয়ে দীর্ঘ ৬ বছর যাবৎ গবেষণা করছেন। তিনি সায়েন্স কমিউনিকেটর হিসেবে গত ২৫ বছর ধরে লেখালেখি করছেন। করোনা অতিমারির সময় তিনি জনস্বাস্থ্য বিষয়ক নীতি-নির্ধারণে সহযোগিতা করতে জনপ্রিয় মূলধারার সংবাদ মাধ্যম এবং টিভি চ্যানেলগুলোতে অবদান রেখেছেন।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence