বৃত্তির সংশোধিত ফলেও পরীক্ষা ছাড়া ট্যালেন্টপুল

বৃত্তির সংশোধিত ফলেও পরীক্ষা ছাড়া ট্যালেন্টপুল
বৃত্তির সংশোধিত ফলেও পরীক্ষা ছাড়া ট্যালেন্টপুল  © সংগৃহীত

প্রাথমিকের সংশোধিত ফলে হবিগঞ্জ শহরের টাউন মডেল সরকারি বালক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থী ইসমাইল হোসেন কোনো পরীক্ষা না দিয়েই ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে। তার রোল নম্বর ১০৭২। স্কুলটির প্রধান শিক্ষক মোসা. সামছুন্নাহার গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সংশোধিত ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এতে সারাদেশেই এ রকম অসংখ্য পরিবর্তনের ঘটনা ঘটেছে। শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হওয়ায় অনেক বিদ্যালয়ের বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যায় হেরফের হয়ে গেছে। অবশ্য অনেক জায়গায় আগে যে ফল ছিল, সংশোধিত তালিকাতেও একই ফল আছে।

এর আগে গত ০১ মার্চ প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার সংশোধিত ফল প্রকাশ করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একইসঙ্গে আগের ফলে ভুলের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে তারা। তারও আগে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বৃত্তি পরীক্ষার ফল ঘোষণা করেছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। কিন্তু ‘কারিগরি ত্রুটির’ কারণ দেখিয়ে এদিন সন্ধ্যায় এ ফল স্থগিত করা হয়।

পরে মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, ‘কারিগরি ত্রুটির’ কারণে স্থগিত প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার ফলাফল সংশোধন করে গত বুধবার বিকেলে প্রকাশ করা হবে। পরে আবার সন্ধ্যায় মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, স্থগিত ফলাফল আজ রাতের মধ্যে প্রকাশ করা হবে। কিন্তু রাতে কখন প্রকাশ হবে, তা উল্লেখ করা হয়নি।

পরে রাত সাড়ে ১০টার পর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্থগিত করা ফলাফল পুনর্যাচাই করে প্রকাশ করা হলো।

নানা নাটকীয়তায় প্রকাশিত সংশোধিত বৃত্তির এ ফলেও ভরসা রাখতে পারছেন না শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এ ফলে আগে যেমন পরীক্ষা দিয়ে বৃত্তি পাওয়ার ঘটনা ঘটেছে, এবার সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। আবার মন্ত্রণালয়ের কথা অনুযায়ী প্রথমে প্রকাশিত ফলে যারা বৃত্তি পেয়েছেন সংশোধিত ফলে বাদ গেছেন তাদের অনেকেও।

আরও পড়ুন: প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার ফল যাচাইয়ের আবেদন করবেন যেভাবে

হবিগঞ্জ শহরের টাউন মডেল সরকারি বালক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা জিনিয়া আক্তার বলেন, তার মেয়ে খায়রুন জান্নাতও বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়। তার রোল নম্বর ৭২। ফলাফলে তার নাম এলেও রোল নম্বর প্রদর্শন করা হয় ৭৩। এই রোল নম্বরের ছাত্রী লোপা রানী দাশ।

এদিকে, প্রথম দফায় বৃত্তির তালিকায় থাকলেও সংশোধিত ফলাফলে অনেকে বাদ পড়েছে। এর উল্টোটাও ঘটেছে। এতে দ্বিতীয় দফার ফলে শিশুদের কারও মুখে ফুটেছে আনন্দের হাসি। কারণ, এ দফায় তারা বৃত্তি পেয়েছে। অন্যদিকে, প্রথম প্রকাশিত ফলে বৃত্তি পেয়েও সংশোধিত ফলে বাদ পড়া শিশুদের মন ভার, কেউ কেউ কেঁদেছেও রীতিমতো।

অভিভাবকরা তাদের নানাভাবে সান্ত্বনা দিয়েছেন। তবে তারা ক্ষুব্ধ। হতাশ এসব শিশুর শিক্ষকরাও। এমনটাই ঘটেছে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার ৪ নম্বর ঈশ্বরদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে। গেল মঙ্গলবার প্রাথমিক বৃত্তির ফল ঘোষণার পর দেখা যায়, এ বিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থী বৃত্তি পেয়েছে।

এতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরাও দারুণ খুশি হন। তাদের মধ্যে একজন ট্যালেন্টপুলে আর বাকিরা সাধারণ কোটায় বৃত্তি পায়। ফল পেয়ে শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা মিষ্টি নিয়ে বিদ্যালয়ে হাজির হন। হাসিমুখে শিক্ষকরা মিষ্টি খান, অন্যদের মধ্যেও বিলিয়েছেন। খেতে না পেরে অতিরিক্ত মিষ্টি শিক্ষকদের কেউ কেউ বাসায়ও নিয়ে যান।

কিন্তু বাদ সাধে এর কিছু সময় পরই গণমাধ্যমে সংবাদ আসে–ফল স্থগিত। বৃত্তিপ্রাপ্ত শিশুদের আনন্দ উচ্ছ্বাস থেমে গেল, চোখে ঘুম নেই। টেনশন ও আতঙ্কে খাওয়া-ধাওয়া বন্ধ প্রায়।

পরদিন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী বলেন, যারা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে এবং বৃত্তি পেয়েছে, তাদের নাম বাদ যাবে না। যারা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেনি, সংশোধিত ফলাফলে কেবল তাদের নাম বাদ যাবে এবং নতুন কিছু যুক্ত হবে। এতে বৃত্তিপ্রাপ্ত শিশুরা আশায় বুক বাঁধে।

তবে রাতে সংশোধিত ফল প্রকাশিত হলে দেখা যায়, ঈশ্বরদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আগের ফলাফলে পাঁচজন বৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীর একজনের রোল নম্বরও খুঁজে পাওয়া যায়নি। লজ্জায় পড়েন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা; চরম হতাশ হয়ে ফোন দিয়ে শিক্ষকদের কাছে এমন নজিরবিহীন ঘটনার কারণ জানতে চেয়েছেন।

একই জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলার জয়দেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সাতজন বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। আগের ফলাফলে ছয়জন বৃত্তি পেয়েছিল। তবে সংশোধিত ফলাফলে তাদের একজনও নেই। এতে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা সামাজিকভাবে হেয় হয়েছেন। আবার কোনো কোনো অভিভাবকের মারমুখী আচরণের শিকার হচ্ছেন শিক্ষকরা।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence