১০ম গ্রেড পাচ্ছেন প্রাথমিক প্রধান শিক্ষকরা, সহকারী শিক্ষকদের কি উন্নীত হবে?
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৫৯ PM
দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১০ম গ্রেডে উন্নীত করার প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তবে সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেডের বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তারা দীর্ঘদিন ধরে ১১তম গ্রেড দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন করছেন। দাবি আদায়ে আগামী ১৭ অক্টোবর থেকে তাদের অনশন কর্মসূচি পালন করার ঘোষণাও রয়েছে।
যদিও সহকারী শিক্ষকদের দাবির বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ইতিবাচক চিন্তাভাবনা করছে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা। আজ বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘শুরু থেকেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছেন। সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড দেওয়া নিয়ে মন্ত্রণালয়ের সবাই ইতিবাচক। আশা করি, তাদের বিষয়েও ভালো সিদ্ধান্ত আসবে।’
জানা গেছে, প্রধান শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ১০ম গ্রেডে উন্নীতকরণের ক্ষেত্রে দেওয়া হয়েছে ছয়টি শর্ত। এর মধ্যে অন্যতম হলো—প্রশিক্ষণবিহীন সব প্রধান শিক্ষককে সরকারি আদেশ জারির তারিখ থেকে ১৮ মাসের মধ্যে সেই বেসিক ট্রেইনিং ফর টিচার্স (বিটিপিটি) প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করতে হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে জানানো হয়, বিদ্যমান ১১তম (প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত) ও ১২তম (প্রশিক্ষণবিহীন) গ্রেডের মোট ৬৫ হাজার ৫০২ জন প্রধান শিক্ষককে এই উন্নীতকরণের আওতায় আনা হবে। মঙ্গলবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ওই চিঠিতে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
বুধবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব মো. শফিকুর রহমান বলেন, “জনপ্রশাসনের কাজ শেষ হয়েছে, এখন আঞ্চলিক দপ্তরগুলোর কাজ চলছে। যাদের প্রশিক্ষণ নেই, তারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করলে সবাই ১০ম গ্রেডে আসবেন।”
চিঠিতে বেতন উন্নীতকরণের জন্য যে ৬টি শর্ত দেওয়া হয়েছে তা হলো—অর্থ বিভাগের ব্যয় ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগের সম্মতি নিতে হবে; অর্থ বিভাগের বাস্তবায়ন অনুবিভাগ কর্তৃক বেতন স্কেল নির্ধারণ করতে হবে; প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির অনুমোদন নিতে হবে; পদোন্নতির বিষয়টি বিদ্যমান নিয়োগবিধিতে অন্তর্ভুক্ত করে নিয়োগবিধি সংশোধন করতে হবে; প্রশিক্ষণবিহীন প্রধান শিক্ষকরা সরকারি আদেশ জারির তারিখ থেকে ১৮ মাসের মধ্যে বিটিপিটি প্রশিক্ষণ শেষ করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হবে।
এ সম্মতির ফলে দীর্ঘদিন ধরে বেতন উন্নীতকরণের দাবি জানানো সরকারি প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা এখন ১০ম গ্রেডে উন্নীত হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। তবে সহকারী শিক্ষকরা ১১তম গ্রেডের বিষয়ে এখনও কোনও আপডেট পাননি বলে জানিয়েছেন। তারা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছেন।
প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় আহবায়ক ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি শামসুদ্দিন মাসুদ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমাদের ১১তম গ্রেডের দাবির বিষয়ে এখনও কোনও আপডেট পাইনি। আমরা সবার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। পাশাপাশি ১৭ অক্টোবরের অনশন কর্মসূচির বিষয়ে আজ অভ্যন্তরীণ সভায় বসব। সেখানে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে।’
আরও পড়ুন: ৫৪ বছরে ৮ পে স্কেল: কোনটিতে কত শতাংশ বেড়েছিল বেতন?
এর আগে পূর্ব ঘোষিত আমরণ অনশন কর্মসূচির তারিখ পরিবর্তন করেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। দুর্গাপূজা উপলক্ষে এ কর্মসূচি পিছিয়ে দেওয়ার কথা জানানো হয়। ২৬ সেপ্টেম্বরের পরিবর্তে আগামী ১৭ অক্টোবর থেকে ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ অনশন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান তারা।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর ‘সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ’ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়। এতে বলা হয়, ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে ঘোষিত আমরণ অনশন নিয়ে প্রাথমিকের প্রায় সব সংগঠনের একাত্মতা পোষণ করে একসঙ্গে পালন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সব সংগঠন নিয়ে অনলাইন মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী—হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পূজা, আবহাওয়ার প্রতিকূলতা, প্রধান উপদেষ্টার বিদেশে অবস্থান এবং আমরণ অনশন কর্মসূচির গুরুত্ব ও সর্বোচ্চ অংশগ্রহণের সুবিধার্থে ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া কর্মসূচির তারিখ পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়। সবার সম্মিলিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ১৭ অক্টোবর থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই আমরণ অনশণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।
তিন দফা দাবিতে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকরা আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে আসছেন। তাদের দাবিগুলো হলো: সহকারী শিক্ষকদের এন্ট্রি পদে বেতন ১১তম গ্রেডে নির্ধারণ; চাকরির শুরু থেকে ১০ বছর ও ১৬ বছরপূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড সমস্যার সমাধান ও প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ পদোন্নতি।