বগুড়া-৭, ফেনী-১, দিনাজপুর-৩ আসনে

খালেদা জিয়ার পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা, প্রতি আসনে আছে বিকল্প প্রার্থীও

খালেদা জিয়া
খালেদা জিয়া  © ফাইল ছবি

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্য বগুড়া-৭, দিনাজপুর-৩ ও ফেনী-১ আসন থেকে তার পক্ষে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) দেশের দিন অঞ্চলের এই তিন নির্বাচনী আসনে তার পক্ষে মনোনয়ন জমা দেয়া হয়। তবে, অসুস্থতাজনিত কারণে বিএনপি চেয়ারপারসন নির্বাচনে অংশ নিতে না পারলে তার জন্য এসব আসনে বিকল্প প্রার্থীও রেখেছে দলটি।

নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফশিলের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণে ইচ্ছুক প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ জানিয়েছেন, মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময় বাড়ছে না। সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি।

তফসিল অনুযায়ী, সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ সময় ২৯ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ৩০ ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল দায়েরের ৫ জানুয়ারি থেকে ৯ জানুয়ারি। আপিল নিষ্পত্তি হবে ১০ থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত।

প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২০ জানুয়ারি। রিটার্নিং কর্মকর্তা চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে প্রতীক বরাদ্দ করবেন ২১ জানুয়ারি। নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হবে ২২ জানুয়ারি। প্রচার চালানো যাবে ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে সাতটা পর্যন্ত। আর ভোটগ্রহণ ১২ ফেব্রুয়ারি।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, বগুড়ার গাবতলী ও শাজাহানপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত বগুড়া-৭ আসনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষে মনোনয়নপত্র দাখিল করা হয়েছে। সোমবার বেলা তিনটার দিকে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হেলালুজ্জামান তালুকদার লালুর নেতৃত্বে বগুড়ার জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা তৌফিকুর রহমানের কাছে এই মনোনয়নপত্র দাখিল করা হয়। মনোনয়নপত্রে প্রার্থীর স্বাক্ষরের স্থানে আঙুলের ছাপ নেয়া হয়েছে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের পক্ষে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শাজাহানপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি এনামুল হক, গাবতলী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক ও গাবতলী পৌর বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।

মনোনয়নপত্র দাখিলের পর উপস্থিত সাংবাদিকদের বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হেলালুজ্জানান তালুকদার বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অসুস্থ। তিনি ইশারা-ইঙ্গিতে যোগাযোগ করছেন। মনোনয়নপত্রে খালেদা জিয়া স্বাক্ষরের বদলে তার আঙুলের ছাপ দিয়েছেন।

বগুড়ার গাবতলীতে বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বাড়ি। ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার স্ত্রী খালেদা জিয়া প্রথমবারের মতো বগুড়া-৭ আসনে বিএনপির প্রার্থী হয়ে জয়ী হন, তবে জয়ের পর প্রতিবারই খালেদা জিয়া আসনটি ছেড়ে দিলে উপনির্বাচন হয়। তিনটি উপনির্বাচনে বিজয়ী হন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা হেলালুজ্জামান তালুকদার। ২০০৮ সালের উপনির্বাচনে দলের স্থায়ী কমিটির প্রয়াত সদস্য নোয়াখালীর ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ জয়ী হন।

জেলা বিএনপির সূত্র জানায়, আসছে জাতীয় নির্বাচনে এই আসনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষে মনোনয়নপত্র দাখিল করা হলেও একই আসন থেকে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন গাবতলী উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোরশেদ মিল্টন। সোমবার বিকেলে গাবতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে তিনি এই মনোনয়নপত্র দাখিল করেন বলে জানিয়েছেন।

মোরশেদ মিল্টন গণমাধ্যমকে বলেন, দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তেই চেয়ারপারসনের আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করছি। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের নির্ধারিত সময়েই এ বিষয়ে হাইকমান্ড চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

মোরশেদ আরও বলেন, বগুড়া-৭ থেকে ম্যাডামের মনোনয়ন জমা দেয়া হয়। ম্যাডামের সাপোর্টিং হিসেবে আমাকে মনোনয়ন সংগ্রহ করতে বলা হয়েছিল। ম্যাডামের পাশাপাশি আমার মনোনয়ন জমা দিয়েছি।

দিনাজপুর-৩ (সদর) আসনে বিএনপি চেয়ারপারসনের পক্ষে মনোনয়ন জমা দেয়া হয়েছে। এই আসনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন দলটির নির্বাহী কমিটির সদস্য সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম।

সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুর ২টার সময় জাহাঙ্গীর জেলা রিটানিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক মো. রফিকুল ইসলামের কাছে এই মনোনয়নপত্র জমা দেন। তবে এ সময় তার সঙ্গে বিএনপির জেলা কমিটির কোনো নেতৃবৃন্দকে দেখা যায়নি।

এর আগে রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে এই আসনে থেকেই খালেদা জিয়ার পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দেন জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোফাজ্জল হোসেন দুলাল, সাধারণ সম্পাদক বখতিয়ার আহম্মেদ কচি, সিনিয়র সহসভাপতি মো. মোকারম হোসেনসহ বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।

মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমাকে দলীয় হাইকমান্ড থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে জমা দিতে বলা হয়েছে। আমি নির্দেশনা অনুযায়ী, আজ মনোনয়নপত্র জমা দিলাম। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জিলহাজ উদ্দিন মনোনয়নপত্র জমা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে, দিনাজপুর-৩ (সদর) আসনে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিকল্প প্রার্থী হিসেবে বিএনপির রংপুর বিভাগীয় কমিটির সহসাংগঠনিক ও দিনাজপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।

সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুরে তিনি দিনাজপুর জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামের কাছে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। মনোনয়নপত্র দাখিল শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দিনাজপুর সদর আসনে বিএনপির মূল প্রার্থী দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তবে তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমাকে বিকল্প প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই আজ আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, জেলা বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসহ ছাত্রদল, যুবদল, মহিলা দলসহ বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধভাবে উপস্থিত হয়ে মনোনয়নপত্র দাখিলে অংশ নিয়েছেন। এটি প্রমাণ করে যে বিএনপি দিনাজপুর সদর আসনে সুসংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ।

এদিকে, ফেনী-১ (ফুলগাজী-পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া) আসনে খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র জমা দেয়া হয়েছে। সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) বেলা সোয়া একটায় ফেনী জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে তার মনোনয়নপত্র জমা দেয়া হয়।

দলীয় চেয়ারপারসনের পক্ষে সোমবার এই মনোনয়নপত্র জমা দেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু। তবে, দলীয় প্রধানের মনোনয়নের পাশাপাশি এই আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক ও খালেদা জিয়ার নির্বাচনী সমন্বয়ক মুন্সি রফিকুল আলম ওরফে মজনু নিজেও মনোনয়নপত্র জমা দেন।

খালেদা জিয়ার পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দেন তার নির্বাচনী সমন্বয়ক মুন্সি রফিকুল আলম, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবদীন ওরফে ভিপি জয়নাল।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য রেহানা আক্তার রানু, আবু তালেব, শাহানা আক্তার শানু, ফেনী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ বাহারসহ কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতারা।

মনোনয়ন জমা শেষে মুন্সি রফিকুল আলম বলেন, বিএনপির দলীয় প্রার্থী চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তার পক্ষেই আমরা কাজ করছি।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু জানান, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থতার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে বিকল্প প্রার্থী নির্ধারণ করে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, নেত্রী শেষ মুহূর্তে ভোটে অংশ নিতে না পারলে বিকল্প চিন্তা করা হবে। তবে তিনি মাঠে না থাকলেও তার পক্ষে প্রচার–প্রচারণা চলমান থাকবে।

এর আগে গত ২১ ডিসেম্বর বিকালে ফেনী-১ আসনে খালেদা জিয়ার পক্ষে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু তালেবের নেতৃত্বে দলের নেতারা।

ফেনী জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মনিরা হক জানান, ফেনী-১ আসনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও মুন্সি রফিকুল আলম ওরফে মজনু মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

ফেনী-১ আসনে বিএনপি ছাড়াও জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ কংগ্রেস, ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ ও গণমুক্তি জোটসহ মোট ১৬ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!