বাবা শিক্ষক, ভাই ইমাম ও খতিব—৬ ভাই বোনের ‘হাদি পরিবারে’ কে কী করেন?
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:১২ PM
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপত্র শহীদ শরীফ ওসমান হাদির পরিবারের প্রায় সবাই আলেম। ছোটবেলা থেকেই কোরআন হাদিসের শিক্ষায় বেড়ে উঠেছেন তিনি। আধিপত্যবাদবিরোধী আন্দোলনের সম্মুখ সারি এ যোদ্ধার জীবন প্রদীপ নিভে গেছে দুর্বৃত্তদের গুলিতে।
জানা গেছে, ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলায় খাসমহল এলাকায় জন্ম শহীদ ওসমান হাদির। তার বাবা মাওলানা আব্দুল হাদি ছিলেন মাদ্রাসা শিক্ষক। হাদির বড় ভাই মাওলানা আবু বক্কর ছিদ্দিক বরিশালের গুঠিয়ার একটি জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব। তার মেঝো ভাই মাওলানা ওমর ফারুক। তিনি ঢাকায় ব্যবসা করেন।
ওসমান হাদির তিন বোনের স্বামীও শিক্ষক এবং আলেম। বড় বোনের স্বামী নলছিটি ফুলহরি আব্দুল আজিজ দাখিল মাদ্রাসার সুপার ও মসজিদের ইমাম মাওলানা আমির হোসেন। মেঝো বোনের স্বামী মাওলানা আমিরুল ইসলাম ঢাকায় ব্যবসা করেন এবং ছোট বোনের স্বামী মাওলানা মনির হোসেন নলছিটি ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় শিক্ষক।
জানা গেছে, ওসমান হাদির শিক্ষাজীবন শুরু হয়েছিল ঝালকাঠির এন এস কামিল মাদ্রাসায়। পরে প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। মেধাবী হাদি প্রাইভেট পড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। সবশেষ তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন।
ঝালকাঠির এনএস কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা গাজী মুহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, ঝালকাঠির এনএস কামিল মাদ্রাসায় পঞ্চম শ্রেণি থেকে আলিম পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন হাদি। এখানে রয়েছে তার অসংখ্য স্মৃতি। ছাত্রজীবন থেকে ছিলেন অসম্ভব মেধাবী। সুবক্তার পাশাপাশি অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন ছাত্রজীবন থেকেই।
হাদির জীবনে বড় ভাইয়ের অবদান লিখতে গিয়ে জুনায়েদ মাসুদ নামে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘জুলাইয় অভ্যুত্থানের পর যখন ইনকিলাব মঞ্চ যাত্রা শুরু করলো, তখন থেকে ব্যাকস্টেজে যাকে সবচেয়ে বেশি মেধা ও শ্রম দিতে দেখেছি, তিনি শরিফ উমর বিন হাদি। ওসমান হাদি ভাইয়ের আপন বড়ভাই হিসেবে উনি ওনার দায়িত্ব ও স্নেহে কোনো কমতি রাখছেন বলে মনে হয়নি।
ওসমান ভাইকে সব ধরনের সাপোর্ট দিয়া আসছেন, বিভিন্ন জায়গায় কো-অর্ডিনেশন, প্ল্যানিং, ম্যানেজমেন্ট উমর ভাই দেখছেন। যতবার তার সাথে আলাপ হইছে, সবসময় ঘুরেফিরে মূল পয়েন্ট ছিল ভারতীয় আধিপত্যবাদ, সাংস্কৃতিক আগ্রাসন মোকাবিলা করে আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করা, জুলাই চেতনায় বাংলাদেশি সংস্কৃতির ধারা তৈরি করা; চলমান কালচারাল ফ্যাসিজমের যত ন্যারেটিভ, সব ভেঙে দিয়ে জুলাইয়ের লক্ষ্য-উদ্যেশ্যকে সমুন্নত রাখা। এইসব সব স্বপ্ন নিয়ে ইনকিলাব মঞ্চ চলছিল। উমর ভাইরা পেছন সবসময় গার্ডিয়ানের ভূমিকায় ছিলেন।’
গত ১২ ডিসেম্বর দুপুর সোয়া ২টার দিকে রাজধানীর বিজয়নগর পানির ট্যাংকির সামনে রিকশায় করে যাওয়ার সময় ওসমান হাদির উপর আক্রমণ হয়। ওই সময় মোটরসাইকেলে করে এসে দুজন তাকে খুব কাছ থেকে গুলি করে পালিয়ে যায়।
পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় দ্রুত তাকে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। একপর্যায়ে পরিবারের ইচ্ছায় তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এরপর সেখানে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তার চিকিৎসা চলে। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য সোমবার এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে হাদিকে সিঙ্গাপুর নেওয়া হয়। তবে সেখানে নিয়েও বাঁচানো যায়নি হাদিকে। সবাইকে কাঁদিয়ে গত ১৮ ডিসেম্বর রাতে না ফেরার দেশে পারি জমান ওসমান হাদি।