শিশু সাজিদের শেষ প্রেসক্রিপশনে যা লিখলেন চিকিৎসক

শিশু সাজিদের মৃত্যু
শিশু সাজিদের মৃত্যু  © টিডিসি সম্পাদিত

রাজশাহীর তানোরে ভূগর্ভস্থ পানি তোলার জন্য তৈরি করা গভীর গর্তে পড়ে যাওয়া শিশুটিকে ৩২ ঘণ্টা পর অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) রাত ৯টার ৪০ মিনিটে তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এর আগে রাত ৯ টা ২ মিনিটে তাকে এ জীবিত উদ্ধার করা হয়েছিল কি না সে ব্যাপারেও কেউ নিশ্চিত করে কিছু বলেননি।তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক তার চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্রেও (প্রেসক্রিপশন)  উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করে কিছু বলেনি। 

মেডিকেল অফিসার উল্লেখ করেন, শিশুটির ভাইটাল সাইন চেক করা হয়। তবে তার পালস ও ব্লাড প্রেশার পাওয়া যায়নি। ইসিজি করে অবস্থা নিশ্চিত হওয়া যায়।

ডা. বার্নাবাস হাসদা জানান, হাসপাতালে আনার আগেই শিশুটি মারা গিয়েছিল। অতিরিক্ত ঠাণ্ডা এবং অক্সিজেন না পাওয়ায় শিশু সাজিদের মৃত্যু হয়েছে।

উদ্ধারের সময় এক ফায়ার সার্ভিস সদস্য জানান, শিশুটি জীবিত থাকতে পারে বলে তাদের ধারণা। এ সময় উদ্ধার অভিযানে গর্তের ভেতরে নামা ফায়ার সার্ভিসের আরেক সদস্য আকাশের দিকে দুহাত ওপরে তুলে ইশারা করেন। উপস্থিত জনতা 'আল্লাহু আকবার' স্লোগান দেওয়া শুরু করেন।

01 মেডিকেল

তবে শিশুর নানা আইয়ূব আলী বলেন, উদ্ধারের সময় সাজিদ বেঁচে ছিল। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলছিলেন সে বেঁচে আছে। আমি নিজে দেখেছি সে বেঁচে ছিল। কিন্তু হাসপাতালে আসার পর মারা গেল। মরদেহ তার বাড়ি তানোর কুড়িরহাট পূর্বপাড়া নেওয়া হয়েছে।

এর আগে, এদিন রাত ৯ টা ২মিনিটের দিকে প্রায় ৩২ ঘণ্টা পর গভীর নলকূপের জন্য খনন করা গর্তে পড়ে যাওয়া দুই বছর বয়সী শিশুটিকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস।

পরে রাত ১০টার দিকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী জানান, আমরা যখন শিশু সাজিদকে অচেতন অবস্থায় পাইপের ভেতর থেকে তুললাম, তখন আমাদেরও আবেগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো হলেও পরে জানা যায়—শিশুটি আর নেই। তার পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান এ কর্মকর্তা।

এ উদ্ধার অভিযানকে অত্যন্ত জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ বলে ব্যাখ্যা করেন তাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, এটি সাধারণ কোনো উদ্ধার কার্যক্রম ছিল না। আগুন নেভানো বা পানিতে ডুবে যাওয়া মানুষের উদ্ধার কাজের চেয়ে এটি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন ও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। পাইপটির ব্যাস ছিল মাত্র ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি। ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই স্থানীয়রা আবেগের বশবর্তী হয়ে পাইপে নিজ উদ্যোগে উদ্ধার চেষ্টা চালান। এতে হিতে বিপরীত হয়ে পাইপের ভেতরে প্রচুর মাটি ও খড়কুটো জমে যায়, যার নিচে চাপা পড়ে শিশুটি।

আরও পড়ুন: শিশু সাজিদ মারা গেছে

তিনি বলেন, আমরা সার্চ ভিশন ক্যামেরা প্রবেশ করানোর পর দেখতে পাই পাইপের ভেতরে কেবল মাটি ও খড়কুটো—ভিকটিমের কোনো অস্তিত্ব বা হাত-পা দেখা যাচ্ছিল না। তখনই আমরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি। তবুও শিশুটি বেঁচে আছে—এই আশায় সর্বোচ্চ সতর্কতা ও সেফটি মেনে উদ্ধার কাজ চালানো হয়।

স্থানীয়রা জানান, গত বছর স্থানীয় এক ব্যক্তি এখানে গভীর নলকূপ স্থাপনের চেষ্টা করেন। কিন্তু ১২০ ফুট নিচেও পানি না পাওয়ায় পাইপটি পরিত্যক্ত অবস্থায় মুখ খোলা রেখেই ফেলে রাখা হয়। গত বছরের বৃষ্টিতে গর্তটির মুখ আরও বড় হয়। কোনো সতর্কতামূলক ব্যবস্থা বা ঢাকনা না থাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

ঘটনাস্থলে ভিড় করেন হাজারো উৎসুক জনতা। গর্তের পাশেই নির্ঘুম রাত কাটান সাজিদের মা। সন্তানকে ফিরে পাওয়ার আশায় চলে বিরামহীন কান্না ও দোয়া। দুর্ঘটনার পরপর শিশুটির সাড়াশব্দ পাওয়া গেলেও সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভেতর থেকে আওয়াজ আসা বন্ধ হয়ে যায়; যা উদ্ধারকর্মীদের শঙ্কিত করে তোলে। তবে গর্তের ভেতরে অক্সিজেন সরবরাহ অব্যাহত রাখে ফায়ার সার্ভিস। মেডিকেল টিম ও স্থানীয় প্রশাসন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলো।

এর আগে, বুধবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তানোর উপজেলার পাচন্দর ইউনিয়নের কোয়েলহাট পূর্বপাড়া গ্রামে গভীর নলকূপের গর্তে পড়ে নিখোঁজ হয় শিশু সাজিদ। এরপর ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দীর্ঘ সময় ধরে উদ্ধার অভিযান চালান। প্রায় ৪০ ফুট মাটি খনন করে ৩২ ঘণ্টা পর শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। রাত ৯টার দিকে তাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত সাজিদ কোয়েলহাট পূর্বপাড়া গ্রামের রাকিব উদ্দীনের ছেলে। তার মৃত্যুতে পুরো উপজেলাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence