জাবির সাবেক ছাত্রনেতা কল্লোল বনিক ঢাকা-১২ আসনে প্রার্থী, বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠনের অঙ্গীকার
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:৪২ PM
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সাবেক ছাত্রনেতা কল্লোল বনিক আসন্ন নির্বাচনে ঢাকা-১২ আসনে অংশগ্রহণ করছেন। তিনি বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) মনোনীত প্রার্থী হিসেবে কাস্তে প্রতীক নিয়ে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
কল্লোল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের যুগ্ম আহ্বায়ক এবং পরে আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ছাত্রজীবন থেকেই বিভিন্ন আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন কল্লোল। বর্তমানে ঢাকা-১২ আসনের ভোটারদের সঙ্গে নিয়মিত গণসংযোগ চালাচ্ছেন এবং সিপিবি ও নিজস্ব এলাকায় তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড তুলে ধরছেন।
কল্লোল বনিক ভোটারদের কাছে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন শোষণ ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গঠনের, যেখানে নতুন প্রজন্মের জন্য নিরাপদ, সমৃদ্ধ ও সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা হবে। কল্লোলের বক্তব্য, কমিউনিস্ট পার্টি ক্ষমতায় এলে সরকার মুনাফার স্বার্থে পরিচালিত হবে না, বরং সব নাগরিকের জন্য মানসম্মত শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবা, কর্মসংস্থান নিশ্চিত করবে। এছাড়া দ্রব্যমূল্য ও বাড়ি ভাড়া সাধারণ মানুষের আওতার মধ্যে রাখা, স্থানীয় সরকারের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা, কৃষকদের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা, জাতীয় সম্পদের জনগণের মালিকানা রক্ষা করা এবং দণ্ডবিধি ও দুর্নীতি প্রতিরোধ করা হবে।
কল্লোল বনিক ১৯৮৩ সালে মগবাজারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা নিখিল বনিক ছিলেন গণিত শিক্ষক, মা মীনা বনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। স্ত্রী নন্দিতা বনিক বর্তমানে রোগতত্ত্ব অধিদপ্তরে কর্মরত।
তিনি সেন্ট জোসেফ হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় কৃতকার্য হন এবং পরে ভর্তি হন নটর ডেম কলেজে। কলেজ জীবনে কমিউনিস্ট নেতাদের জীবনীর প্রতি আগ্রহ তৈরি হয় এবং তখনই তিনি ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত হন। ২০০২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামছুন্নাহার হলের ছাত্রীদের ওপর পুলিশী নিপীড়নের প্রতিবাদে আন্দোলনে অংশগ্রহণের সময় গুরুতর আহত হন।
এইচএসসিতে কৃতকার্য হয়ে কল্লোল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তিনি শিক্ষার গণতান্ত্রিক পরিবেশ, ভর্তি ফি ও ডাইনিং ফি বৃদ্ধি, যৌন নিপীড়ন, ক্যাম্পাসে সন্ত্রাস বিরোধী আন্দোলন ও গবেষণার বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। একাধিকবার শারীরিক নিপীড়নের শিকার হন।
জাতীয় আন্দোলনেও সক্রিয় ছিলেন কল্লোল। ২০০৬ সালে কৃষক হত্যার প্রতিবাদে এবং বিদ্যুৎ, ডিজেল ও সার সংকট দূর করার দাবিতে দেশের ব্যাপী হরতালে অংশগ্রহণের সময় গ্রেফতার হন। ২০০৭ সালে জরুরি আইন চলাকালীন ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে আবারও গ্রেফতার হন।
ছাত্র আন্দোলন থেকে বের হয়ে কল্লোল ক্ষেতমজুর আন্দোলনে যুক্ত হন। এরপর মাস্টার্সের জন্য সুইডেনের স্কোভদি বিশ্ববিদ্যালয়ে যান এবং ‘Testing Methods for Aspect-Oriented Software’ বিষয়ে গবেষণা সম্পন্ন করেন। দেশে ফিরে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজের পাশাপাশি কমিউনিস্ট পার্টি ও ক্ষেতমজুর সমিতির কর্মকাণ্ডে সক্রিয় থাকেন। ২০২৩ সালের মে মাসে নির্বাচিত হন বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক।
বর্তমানে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির ঢাকা মহানগর উত্তর জেলা কমিটির সদস্য। ২০২২ সাল থেকে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সক্রিয় এবং ২৪-এর গণঅভ্যুত্থান ও পরবর্তী শ্রমিক অধিকার রক্ষার আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
কল্লোলের বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে ‘সাপ্তাহিক একতা’ পত্রিকায়। তিনি ভোটারদের কাছে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন সমৃদ্ধ, নিরাপদ, পরিবেশবান্ধব ও বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে অবদান রাখার, এবং ঢাকার ১২ নম্বর আসনে কাস্তে মার্কায় ভোট চাচ্ছেন।