এক পরিবারের দুই ভাই ৩০ বছর দুঃশাসন চালিয়েছে: নির্বাচনী শোডাউনে বুলবুল

৩০০০ বাইক নিয়ে শোডাউন করেছেন জামায়াতের সংসদ সদস্য প্রার্থী নূরুল ইসলাম বুলবুল, পাশে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে
৩০০০ বাইক নিয়ে শোডাউন করেছেন জামায়াতের সংসদ সদস্য প্রার্থী নূরুল ইসলাম বুলবুল, পাশে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে  © সংগৃহীত ও সম্পাদিত

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় ৩০ বছর ধরে একই পরিবারের দুই ভাই দুঃশাসন চালিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল। একই সাথে জেলাবাসীর ভাগ্যের কোনো উন্নয়ন হয়নি বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। আজ শনিবার (৮ নভেম্বর) দুপুরে জেলা শহরে তিন হাজার মোটরসাইকেলের একটি শোডাউন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।

নূরুল ইসলাম বুলবুল চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী। এ আসনটি ১৯৯৬ সাল থেকে বিএনপির বর্তমান কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব হারুন অর রশীদ ও তার চাচাত ভাই আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল ওদুদের দখলে রয়েছে। এর মধ্যে আব্দুল ওদুদ নবম, দশম ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন। এ ছাড়া ২০২৩ সালের উপ-নির্বাচনেও তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন। আর হারুন অর রশীদ ১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ ও সপ্তম, ২০০১ সালে অষ্টম ও ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদে নির্বাচিত হয়েছিলেন।

এর আগে ১৯৮৬ ও ১৯৯১ সালে এ আসন থেকে বিজয়ী হয়েছিলেন জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ও বর্তমান জেলা নায়েবে আমির লতিফুর রহমান। ২০১৮ সালের নির্বাচনে এ আসন থেকে প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন নূরুল ইসলাম বুলবুল।

নির্বাচনী আসন দীর্ঘ দিন দুই ভাইয়ের দখলে থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে বুলবুল বলেন, ‘এক পরিবারের দুই ভাই ৩০ বছর ধরে এখানে দুঃশাসন চালিয়েছেন, শাসন করেছেন। মানুষ অতিষ্ঠ। স্বাভাবিক-স্বতঃস্ফূর্তভাবেই চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষ এবার পরিবর্তন চায়। এই যে একটা অস্থিতিশীল অবস্থা, এই অস্থিতিশীল অবস্থা থেকে একটা প্রশান্তি তারা খুঁজে পেতে চায়।’

বিএনপি নেতা হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘তিনি জামায়াতে ইসলামীর এবং জামায়াতের প্রার্থীর বিরুদ্ধে একের পর এক বক্তব্য দিচ্ছেন। অন্য কোন বক্তব্যই নাই। মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকার উন্নয়ন- এগুলো নিয়ে আসলে তাদের কোন বক্তব্য নাই। বক্তব্য একটাই, জামায়াতে ইসলামী এবং জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো। আমার মনে হয়, জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি এবং চিন্তার পরিবর্তন হয়েছে। এখন জনগণ একে অপরের বিরুদ্ধে এই ধরনের অপবাদ, অপপ্রচার, সমালোচনা- এগুলো শুনতে চায় না। বাংলাদেশের জনগণ সত্য এবং সুন্দরের পক্ষে, ন্যায় এবং ইনসাফের পক্ষে। বসবাসযোগ্য বাংলাদেশ, বসবাসযোগ্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ যারা গড়ে তুলবে তাদের পক্ষেই জনগণ থাকবে।’

বিএনপির প্রার্থীর প্রতি ইঙ্গিত করে বুলবুল বলেন, ‘তারা বক্তব্য দিচ্ছেন যে তারা বিগত দিনে পাঁচবার-সাতবার এমপি হয়েছেন। কোনবার কিভাবে হয়েছেন সে বক্তব্য আমরা দিলাম না, এটা জনগণের জানা আছে। তাহলে এতবার সুযোগ পাওয়ার পরেও চাঁপাইনবাবগঞ্জে একটা মেডিকেল কলেজ নাই কেন? চাঁপাইনবাবগঞ্জের কলেজ একটা পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে পরিণত হয় নাই কেন? এই চাঁপাইনবাবগঞ্জ কলেজের অনার্স আমি নিয়ে এসেছি। আমি যখন এই কলেজের ভিপি ছিলাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরকে এখানে এনে চারটি সাবজেক্টে আমরা অনার্স এখানে এনেছিলাম।’

তিনি বলেন, ‘চাঁপাই নবাবগঞ্জ একটা কৃষিভিত্তিক এলাকা। অথচ এখানে কোনদিনও শুনলাম না যে চাঁপাইনবাবগঞ্জে একটা কৃষিভিত্তিক ইপিজেড গড়ে তোলার জন্য কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কী করলেন এতদিন ওনারা? বহু কিছু করতে চান, তো এতদিন কি করেছেন? নদীভাঙন কবলিত বিপর্যস্ত মানুষের এই স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য তারা কী করেছেন? কেন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি? এ প্রশ্নগুলোর উত্তর তাদের কাছে নাই।’

নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জে একটা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি করছি, এখানকার তরুণ এবং যুবকরা যাতে আগামী দিনে উচ্চশিক্ষার জন্য সুযোগ পায়। এখন পর্যন্ত কেউ কেন এই কাজটা করে নাই? চাঁপাইনবাবগঞ্জের রোড-ঘাটসহ যেগুলো কার্যক্রম রয়েছে, এগুলোর যে বেহাল অবস্থা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষের বিশুদ্ধ পানির যে অভাব এবং মানুষ যে  স্বাস্থ্যগত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, এই বিষয়গুলো তো আজকে নতুন না। কিন্তু নতুন নতুন প্রতিশ্রুতির নামে ফুলঝুরি আমরা শুনছি ৩০ বছর, তাহলে তারা কী করেছেন? এই প্রশ্ন জনগণের, আমার প্রশ্ন না। আমার কথা হচ্ছে, যে যা করবে সে তা পাবে। আমি পজিটিভ রাজনীতি করতে চাই, আমি মানুষের উন্নয়ন এবং কল্যাণে দল-মতের ঊর্ধ্বে ভূমিকা রাখতে চাই।’

জামায়াত নেতা বুলবুলের বাইক শোডাউন নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠ থেকে শুরু হয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক বিশ্বরোড, হরিপুর, বটতলা হাট, নতুনহাট, টিকরামপুর, টোলঘর ও শান্তিমোড় প্রদক্ষিণ করে বড় ইন্দারা মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। শোডাউনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর-৩ আসনের সাবেক এমপি অধ্যাপক লতিফুর রহমান, সাবেক পৌর মেয়র অধ্যক্ষ মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা আবু জার গিফারি ও সেক্রেটারি অধ্যাপক আবু বক্করসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।


সর্বশেষ সংবাদ