ছাত্রলীগের কমিটিতে হাসনাতের পোস্টের সেই ভুয়া প্যাড শেয়ার করলেন রুমিন ফারহানা

রুমিন ফারহানার শেয়ার করা ছাত্রলীগের সেই ভুয়া প্যাডটি
রুমিন ফারহানার শেয়ার করা ছাত্রলীগের সেই ভুয়া প্যাডটি  © টিডিসি সম্পাদিত

বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানা এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণ অঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর মধ্যে কথার লড়াই তীব্র আকার নিয়েছে। হাসনাত আবদুল্লাহ তাকে ‘বিএনপির আওয়ামী লীগ বিষয়ক অন্যতম সম্পাদক’ হিসেবে উল্লেখ করা জবাবে রুমিন ফারহানা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হাসনাত আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করে তাকে ‘ফকিন্নির বাচ্চা’ বলেন। সেই সঙ্গে তিনি হাসনাত আবদুল্লাহ নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের পোস্টেড নেতা হিসেবে যুক্ত থাকার একটি প্যাডও ফেসবুকে পোস্টে সংযুক্ত করেছেন। এ ধরনের কথায় ফেসবুকে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। তোলপাড় শুরু হয়েছে নেটিজেন মহলে।

তবে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, রুমিন ফারহানা শেয়ার করা ছাত্রলীগের সেই প্যাডটিই ভুয়া। এর আগে এনসিপি উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমকে নিয়েও এরকম ছাত্রলীগের ভুয়া প্যাড ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছিল। শুধু তাই নয়, অনেকেই মজাচ্ছলে ছাত্রলীগের এই একই প্যাডটিতে ফুটবলার লিওনেল মেসির নাম যুক্ত করেও ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। অর্থাৎ, ২০২২ সালে ছাত্রলীগের কমিটিতে হাসনাতের পোস্টের সেই ভুয়া প্যাড এবার শেয়ার করলেন রুমিন ফারহানা।

জানা গেছে, রুমিন ফারহানা শেয়ার করা ছাত্রলীগের সেই প্যাডটি ইস্যুর তারিখ ছিল ২০২২ সালের ৩১ জুলাই। তবে তৎকালীন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ থেকে নিশ্চিত করেছিল যে, ওই তারিখে তাদের কোনো প্যাড ইস্যু করা হয়নি এবং সবগুলোই ভুয়া ছিল। বিষয়টি নিশ্চিত করে তৎকালীন কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-দপ্তর সম্পাদক মিরাজুল ইসলাম খান শিমুল বলেছিলেন, ‘‘ওই তারিখে আমাদের কোনো সদস্য (প্যাড) ইস্যু করা হয়নি। ২০২২ সালের ৩১ জুলাইয়ের যতগুলো বিজ্ঞপ্তি ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে তার সবগুলোই ভুয়া।’’ এ সংক্রান্ত নিউজ পড়ুন এখানে

এদিকে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পটপরিবর্তনের পর হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলমকে নিয়ে ছাত্রলীগের এমন দুটি ভুয়া প্যাড ফেসবুকে শেয়ার করেছিলেন ময়মনসিংহ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মোহিত উর রহমান শান্ত। ওই বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর তিনি এটি শেয়ার করেন। এ সংক্রান্ত পোস্টটি দেখুন এখানে।

সেই প্যাডে দুইজনকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ‘সহ-সম্পাদক’ বলে প্রচার করা হয়েছিল। অর্থাৎ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সেই সময় ‘সহ-সম্পাদক’ পদ পেয়েছিলেন হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম। এছাড়া চলতি বছরের ৬ মার্চ মোহাম্মদ জুয়েল মৃধা নামে ফেসবুকের একটি আইডি থেকে ‘সারজিস-হাসনাতই হাসিনার বি-টিম!’ শিরোনামে সারজিস আলমের নামে সেই প্যাডটি শেয়ার করা হয়। এ সংক্রান্ত পোস্টটি দেখুন এখানে

তাছাড়া ২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর Justice for Al-AMIN নামে একটি আইডি থেকে একই প্যাডটিতে ফুটবলার লিওনেল মেসির নাম যুক্ত করে ফেসবুকের একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। তবে সেখানে লিওনেল মেসির পদ ‘সহ-সভাপতি’ উল্লেখ ছিল। সেই পোস্টটি দেখুন এখানে

হাসনাত আব্দুল্লাহর ছাত্রলীগের সংশ্লিষ্টতার সত্যতা পাওয়া যায়নি, এমনটাই উল্লেখ করে আমজাদ হোসেন হৃদয় নামে এক সাংবাদিক ফেসবুকে লেখেন, ‘‘বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানা হাসনাত আব্দুল্লাহকে 'ফকিন্নির বাচ্চা' উল্লেখ ছাত্রলীগের একটি প্যাড শেয়ার করেছেন, যেখানে হাসনাত আব্দুল্লাহ ছাত্রলীগের কমিটিতে ছিলেন বলে দাবি করা হয়। তবে এর কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। ছাত্রলীগের কমিটি দূরে থাক কখনোই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতাও পাওয়া যায়নি তার। ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা করতে গিয়ে বিগত বছরগুলোতে কখনোই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে হাসনাত আব্দুল্লাহকে দেখিনি বরং ক্যাম্পাসে গেস্টরুম-গণরুম ও ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে যেকোনো আন্দোলনে অংশগ্রহণ ও তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন।’’

সুতরাং, ছাত্রলীগের পোস্টে হাসনাত আবদুল্লাহ ছিল, বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানার এমন দাবিটির কোনো ভিত্তি নেই। যা সম্পূর্ণ ভুয়া।


সর্বশেষ সংবাদ