ভালোবাসা দিবসে অবহেলিত সুন্দরবন দিবস, আমেজ নেই বসন্তেরও
- হাবিপ্রবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১২:২৯ PM , আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১২:৫৬ PM
দক্ষিণের দুয়ারে বইছে ফাগুনের হাওয়া। ডালে ডালে আজ বসন্তের আগমনী গান। ফুলে ফুলে ভ্রমরও করছে খেলা। গাছে গাছে পলাশ আর শিমুলের মেলা। সবকিছুই জানান দিলেও সংশোধিত বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী আজ পহেলা ফাল্গুন। সঙ্গে ঋতুরাজ বসন্তের আগমন। বসন্তের আগমনে প্রকৃতির সঙ্গে তরুণ হৃদয়েও লেগেছে দোলা। ফাগুনের রঙে বসন্তের রূপটা যেন একটু বেশিই রঙ্গিন হয়েছে,কেননা আজ ভালোবাসা দিবস।
প্রিয়জনদের সাথে মনের সুপ্ত ভালোবাসা বিনিময়ের দিন। কিন্তু করোনায় কারণে এবারের বসন্ত জীবনটাকে বদলে দিয়েছে, শ্লথ করেছে মানবের গতি, ম্লান করেছে পরিবেশের সৌন্দর্যকে। আগের সেই কোলাহল নেই, নেই সেই আনন্দ! করোনায় দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় নিস্তব্ধ নিরব হয়ে আছে আড্ডায় মুখর থাকা স্থানগুলো। এ অবস্থা দেখা গেছে দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) রিমা চত্ত্বর, শহীদ মিনার চত্ত্বর, লাইব্রেরী চত্ত্বরসহ বিভিন্ন আড্ডাস্থল গুলোতে। ফলে বন্ধ ক্যাম্পাসের বাসন্তী আমেজ এবার রঙিন করতে পারছে না চত্বরকে।
তাই ফাগুনের রঙে রঙে ভালোবাসা ছড়িয়ে উৎসব মুখর করা হলো না এবারের ভালবাসা দিবস ও বাসন্তী উৎসব। উৎসবে রাঙানো হলো না শিক্ষার্থীদের মন!রঙিন শাড়ি, কাচের চুড়ি, কপালে টিপ, ঠোঁটে লিপস্টিক ও মাথায় ফুল গুঁজা তরুণী এবং গোলাপ হাতে রঙিন পাঞ্জাবি পরা তরুণদের পদচারণায় ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণ মুখরিত হওয়ার কথা থাকলেও আজ নেই সেই উৎসবমুখর পরিবেশ। প্রতিবছর প্রেমিক যুগল গোলাপকলি গুঁজে দিয়ে একে অপরকে ভালোবাসা কথা জানানোর সুযোগ পেলেও এবার হচ্ছে না সেই সুযোগটি।
তবে রঙিন শাড়ি-পাঞ্জাবি আর মাথায় গোঁজা ফুলে ক্যাম্পাস মুখরিত না হলেও প্রকৃতি তাঁর নানা রুপে না ঢংয়ে সজ্জিত হয়ে জানান দিচ্ছে বসন্তের আগমন। প্রকৃতি দক্ষিণা দুয়ার খুলে দিয়েছে আর সে দুয়ারে বইছে ফাগুনের মাতাল হাওয়া। কৃষ্ণচূড়ার রঙে রঙিন হয়েছে দিগন্ত।
কবি বেঁচে থাকলে হয়তো আজকের এইদিনে তাঁর ভাষ্যটি এমন হতো- ‘ক্যাম্পাস খোলা থাক আর না থাক, দেখা হোক আর না হোক, ফুল হাতে থাক আর না থাক, উৎসবে ক্যাম্পাস মেতে উঠুক আর না উঠুক, রঙিন শাড়িতে প্রিয়তমাকে দেখা যাক আর না যাক, শোভাযাত্রা বের হোক আর না হোক, গাছে ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক তবুও আজ বসন্ত।’
যদিও এ বসন্ত শুধু শুধু উচ্ছ্বাসের রং ছড়ায় না। এ বসন্ত আমাদের ঐতিহাসিক রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে শহীদদের রক্ত রঙিন স্মৃতির কথাও মনে করিয়ে দেয়। ১৯৫২ সালের ৮ ফাল্গুন বা একুশের পলাশরাঙা দিনের সঙ্গে তারুণ্যের সাহসী উচ্ছ্বাস আর বাঁধভাঙা আবেগের জোয়ারও যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে। বাঙালির জীবনের সঙ্গে একাকার হয়ে আছে বসন্ত। বসন্তের বন্দনা আছে কবিতা, গান, নৃত্য আর চিত্রকলায়।
বসন্তের প্রথম দিনকে বাঙালি পালন করে ‘পহেলা ফাল্গুন-বসন্ত উৎসব’ হিসেবে। একই সাথে এ দিনটি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ‘সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে’ পালিত হয় সারা বিশ্বে। ২৬৯ খ্রিষ্টাব্দে ইতালির রোম নগরীতে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন’স নামে একজন খৃষ্টান পাদ্রীকে ধর্ম প্রচারের অভিযোগে তৎকালীন রোম সম্রাট দ্বিতীয় ক্রাডিয়াস বন্দী করেন। কারণ তখন রোমান সাম্রাজ্যে খৃষ্টান ধর্ম প্রচার নিষিদ্ধ ছিল।
বন্দী অবস্থায় তিনি জনৈক কারারক্ষীর দৃষ্টিহীন মেয়েকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলেন। এতে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়। আর তাই তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে রাজা তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। সেই দিনটিই ১৪ ফেব্রুয়ারি ছিল। বর্তমানে বাংলাদেশে পাশ্চাত্য সংস্কৃতি ও বাংলাদেশের নিজস্ব সংস্কৃতির মিশ্রণে ভিন্নভাবে এ দিনটি ‘বিশ্ব ভালোবাসা দিবস’ নামে পালিত হয়।
অন্যদিকে ২০০১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে পরিবেশ সচেতন ব্যক্তিগণ সুন্দরবনের প্রতি ভালোবাসা আর মমতা সৃষ্টিতে এ দিনটাকে সুন্দরবন দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। কিন্তু বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের আড়ালে দিনটি ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। সেই সাথে ঢাকা পড়েছে ১৪ ফেব্রুয়ারি তারিখে পালিত হয়ে আসা স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবসও।