কম খরচের ভেন্টিলেটর বানাচ্ছে আফগান কিশোরীরা

  © ডয়েচে ভেলে

আফগানিস্তানে মেয়েদের একটি দল গাড়ির যন্ত্রাংশ দিয়ে কম খরচে ভেন্টিলেটর তৈরির চেষ্টা করছে। তাদের এ আবিষ্কার করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে দেশটির লড়াইকে আরো গতিশীল করবে বলে আশা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের।

রোববার পর্যন্ত আফগানিস্তানে প্রায় এক হাজার জনের করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছেন ৩০ জন। যদিও যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির প্রকৃত অবস্থা এর থেকে কয়েকগুণ বেশি খারাপ। পর্যাপ্ত ‘টেস্টিং কিট’ না থাকায় সেখানে কোভিড-১৯ শনাক্তের পরীক্ষা যথাযথভাবে করা যাচ্ছে না।

পাঁচ সদস্যের ‘আফগান অল গার্লস রোবট টিম’-এর এই মেয়েদের বয়স ১৪ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। যদি তারা যন্ত্রটি সফলভাবে তৈরি করতে পারে এবং সরকারের অনুমোদন পায় তবে মাত্র তিনশ’ মার্কিন ডলারে সেটি বাজারে ছাড়তে পারবে বলে আশা এই কিশোরীদের। বাজারে একটি ভেন্টিলেটরের দাম প্রায় ৩০ হাজার মার্কিন ডলার।

বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯-এর কোনো ওষুধ বা টিকা এখনো আবিষ্কার হয়নি। নেই কোনো চিকিৎসাও। এই রোগে যেসব গুরুতর শারীরিক জটিলতা দেখা দেয় তার অন্যতম নিউমোনিয়া। মারাত্মক নিউমোনিয়ায় প্রায় অকেজো ফুসফুস নিয়ে রোগীর যখন আর শ্বাস নেওয়ার ক্ষমতা থাকে না, তখন ভেন্টিলেটর দিয়ে তাকে বাঁচিয়ে রাখার শেষ চেষ্টা করা হয়।

ফলে বিশ্বে এখন সবচেয়ে অমূল্য চিকিৎসা যন্ত্র হয়ে উঠেছে এই ভেন্টিলেটর। নামকরা সব বড় বড় গাড়ি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান এখন গাড়ি উৎপাদন করা বাদ দিয়ে ভেন্টিলেটর বানাচ্ছে।

ডয়েচে ভেলের এক প্রতিবেদনে বরা হয়েছে, আফগানিস্তানের একটি প্রযুক্তি কোম্পানি ওই কিশোরীদের ভেন্টিলেটর তৈরিতে অর্থ সহায়তা দিচ্ছে। কোম্পানিটির পরিচালক রোয়া মাহবুব বলেন, ‘দলটি স্থানীয় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির এক দল বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির একটি নকশার ভিত্তিতে প্রাথমিক যন্ত্র তৈরির কাজ করছে।’

অবশ্য কিশোরীদের এই দলটির খবরের শিরোনাম হওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। ২০১৭ সালে তারা ওয়াশিংটনে একটি রোবটিক্স প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ পেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসার জন্য আবেদন করেছিল। কিন্তু ‍তাদের ভিসা দিতে অস্বীকৃতি জানানো হয়। হইচই ‍শুরু হলে খোদ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হস্তক্ষেপে তারা যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার অনুমতি পেয়েছিল।

ভেন্টিলেটর তৈরিতে তারা ‘টয়োটা করোলা’ মডেলের গাড়ির ইঞ্জিন ও ব্যাটারি ব্যবহার করছে। আফগানিস্তানে প্রথম হেরাত প্রদেশে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়। প্রতিবেশী ইরানে ভাইরাসটি মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়ার পর বহু আফগান সেখান থেকে হেরাতে ফিরে আসেন।

করোনা সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলে হেরাতের গভর্নর সরকারের কাছে আরো বেশি ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা করার আহবান জানান। ওই আহবানে সাড়া দিয়েই এই কিশোরীরা ভেন্টিলেটর তৈরির প্রজেক্ট শুরু করে।

দলের সদস্য ১৭ বছরের সুমায়া ফারুকী এএফপিকে বলেন, ‘আমাদের যন্ত্র তৈরিতে সব থেকে জটিল অংশ হচ্ছে সময় ঠিক করা এবং কতটুকু পাম্প করতে হবে তার চাপ নির্ধারণ করা। ‍প্রত্যেক রোগীর আলাদা আলাদা মাত্রার অক্সিজেন প্রয়োজন হয়। কিভাবে এটা করা যায় সেটা নিয়েই এখন কাজ করছি।’

দেশটির প্রায় সাড়ে তিন কোটি মানুষের জন্য মাত্র ৩০০টি ভেন্টিলেটর আছে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা যন্ত্রপ্রকৌশলী ও বিশেষজ্ঞদের কিশোরী দলটিকে এ কাজে সাহায্য করার আহবান জানিয়েছেন।

আফগান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘পরিশ্রমী এই মেয়েরা, আমাদের বোনেরা দিনরাত খেটে ভেন্টিলেটর তৈরির চেষ্টা করছে। আমাদের উচিত তাদের সাহস ও উৎসাহ দেওয়া।’ তবে যেকোনো ধরনের ভেন্টিলেটর বাজারজাত করার আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও স্থানীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি প্রয়োজন হয়।


সর্বশেষ সংবাদ