দিল্লিতে তুমুল সংঘর্ষে নিহত ৭, জরুরি বৈঠকে সরকার
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১১:৪২ AM , আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১১:৪২ AM
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) বিরোধিতায় বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে চরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে ভারতের উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে। পাথর ছোঁড়া, যানবাহনে অগ্নিসংযোগ, এবং দোকানে দোকানে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার ঘটনায় রীতিমতো রণক্ষেত্রে পরিণত হয় রাজধানীর বিস্তীর্ণ এলাকা।
সোমবারের ওই ভয়ঙ্কর সহিংসতার ঘটনায় নিহত হন ১ পুলিশকর্মী সহ মোট ৭ জন এবং আহত হন বহু মানুষ। এই ঘটনার পর এলাকার পরিস্থিতি বিবেচনায় দিল্লি পুলিশের প্রধান, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব এবং অন্যান্য উর্ধ্বতন সরকারি আধিকারিকদের সঙ্গে গভীর রাতে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
জানা গেছে, সংঘর্ষ চলাকালীন দমকলের ইঞ্জিনেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় এবং বিক্ষোভকারীদের ছোঁড়া পাথরের আঘাতে আহত হন তিন দমকলকর্মী। সেই ঘটনার রেশ এখনও রয়েছে সেখানে। আজ মঙ্গলবারও উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে উত্তেজনা বজায় রয়েছে, চলছে অবাধে লুটপাট।
সোমবারই ভারত সফরে এসেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর সফরকালেই রাজধানীতে এই সহিংসতার ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। মঙ্গলবার দিল্লিতে সময় কাটাবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট, তাই রাজধানীর এই পরিস্থিতিতে চিন্তার ভাঁজ সকলের কপালে।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল হিংসাবিধ্বস্ত অঞ্চলগুলির বিধায়ক এবং কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি জরুরি বৈঠকে বসছেন। তিনি টুইট করেন, ‘দিল্লির কয়েকটি অঞ্চলের বর্তমান থমথমে পরিস্থিতি নিয়ে আমি খুব উদ্বিগ্ন। শহরে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্যে আমাদের সবারই একসঙ্গে চেষ্টা করা উচিত। আমি আরও একবার সকলের প্রতি আবেদন করছি, দয়া করে হিংসা ছড়ানো থেকে বিরত থাকুন।’
তবে এখনও মৌজপুর সহ উত্তর-পূর্ব দিল্লির বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাথর ছোঁড়ার খবর মিলেছে, দমকল বিভাগ এখনও আপদকালীন বার্তা বা এসওএস কল পাচ্ছে। সংঘর্ষ চলাকালীন দমকলের ইঞ্জিনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় এবং বিক্ষোভকারীদের ছোঁড়া পাথরে আহত হন তিন দমকলকর্মী।
মৌজপুরে, মঙ্গলবার সকালে একটি ই-রিকশায় চলা যাত্রীদের পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে এবং তাদের মূল্যবান জিনিসপত্রও লুট করা হয়েছে বলে অভিযোগ। দিল্লি পুলিশ এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘পরিস্থিতি অত্যন্ত উত্তেজনাপূর্ণ। আমরা উত্তর-পূর্ব দিল্লি থেকে ক্রমাগত সহিংসতার খবর পাচ্ছি।’
গতকাল (সোমবার) রাতে গোকুলপুরী এলাকায় একটি টায়ারের বাজারে আগুন ধরিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্যে দিল্লির মন্ত্রী গোপাল রাই, ইমরান হুসেন এবং আম আদমি পার্টির অন্যান্য বিধায়করা গভীর রাতে লেফটেন্যান্ট গভর্নর অনিল বৈজালের বাসভবনে যান। বৈজাল বলেন যে তিনি ‘দিল্লী পুলিশকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় করণীয় সমস্ত কিছুর বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন।’
অরবিন্দ কেজরিওয়াল, দিল্লি পুলিশ আধিকারিকের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেন। অমিত শাহকে উদ্দেশ্য করে তিনি টুইট করেন, ‘দিল্লির কিছু অংশ থেকে শান্তি বিঘ্নিত হওয়ার এবং সম্প্রীতি নষ্ট হওয়ার খবরে খুবই মন খারাপ হচ্ছে। আমি মাননীয় লেফটেন্যান্ট গভর্নর এবং মাননীয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ করছি এখানকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ফিরিয়ে এলাকার শান্তি এবং সৌহার্দ্য বজায় রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে। এই ধরণের কাজ কোনও কারণেই মেনে নেওয়া উচিত নয়।’ রাজনৈতিক বিশ্লেষক যোগেন্দ্র যাদবও টুইট করে নিজের উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করেন।
সরকারি সূত্রগুলো জানিয়েছে যে, ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন ভারত সফর করছেন এমন সময় দেশের রাজধানীতে এই ধরণের সহিংসতার ঘটনায় উদ্বেগ বেড়েছে। অনেকেই বলছেন, এই ধরণের ঘটনা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই ঘটানো হয়েছে। সহিংসতার ঘটনায় আগাম সতর্কতা স্বরূপ দিল্লি সরকার উত্তর-পূর্ব দিল্লি জেলায় সমস্ত বেসরকারি এবং সরকারি স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে।
দিল্লি মেট্রো জাফরাবাদ, মৌজপুর-বাবরপুর, গোকুলপুরী, জোহরি এনক্লেভ এবং শিববিহার স্টেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা, যার ফলে সেখানে কোনও বড় সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এরই মধ্যে জেএনইউ স্টুডেন্টস ইউনিয়ন বিক্ষোভ মিছিল করার আহবান জানিয়েছে। যদিও দিল্লি পুলিশ তাঁদের এই মিছিলে অনুমতি দেয়নি।
ভারতে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, এমন সম্ভাবনা রয়েছে। সোমবার, আমেদাবাদের নবনির্মিত সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আয়োজিত বিশাল জনসভায় উপস্থিত দর্শকদের সম্বোধন করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন ভারত হল ‘এমন একটি জাতি যেখানে হিন্দু, মুসলমান ... পাশাপাশি একসঙ্গে থাকে একসঙ্গে প্রার্থনা করে।’ খবর: এনডিটিভি।