কারাগার থেকে সর্বশেষ পোস্টে কী বলেছিলেন ইমরান খান

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান  © সংগৃহীত

কারাবন্দি পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের স্বাস্থ্য ও কারামুক্তি–সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা ঘনীভূত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার মৃত্যুর গুঞ্জনও ছড়িয়ে পড়েছে। এর মাঝেই তার তিন বোন অভিযোগ করে বলেছেন, তারা ভাইয়ের সঙ্গে কারাগারে সাক্ষাতের দাবি জানাতে গিয়ে পুলিশের হাতে ‘নৃশংস মারধরের’ শিকার হয়েছেন। 

এমন পরিস্থিতিতে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে আটক অবস্থায় তার পক্ষ থেকে এক্স–এ প্রকাশিত সর্বশেষ বার্তাটি নতুন করে তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে। পরিবার, দলীয় নেতা ও সমর্থকেরা তার খোঁজ জানতে মরিয়া হয়ে এই বার্তাকে গুরুত্বপূর্ণ সূত্র হিসেবে বিবেচনা করছেন।

গত ৫ নভেম্বর খানের বোনের সঙ্গে জেল–মিটিংয়ের পর তার পক্ষে প্রকাশিত দীর্ঘ এই পোস্টে একাধিকবার সেনাবাহিনীপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরকে দোষারোপ করা হয়। বার্তায় তার নাম ছয়বার উল্লেখ করে তাকে পাকিস্তানের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য এককভাবে দায়ী ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

ইমরান খান অভিযোগ করেন, পাকিস্তান আর সংবিধান বা রাষ্ট্রীয় আইনে পরিচালিত হচ্ছে না; বরং ‘আসিম ল’য়ে’ চলছে দেশ। তার দাবি, সেনাপ্রধান রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করছেন এবং ‘ক্ষমতার লোভ মেটাতে সক্ষম ইতিহাসের সবচেয়ে স্বৈরাচারী শাসক’—এভাবে তিনি আসিম মুনিরকে আখ্যা দেন।

আরও পড়ুন: ইমরান খানের মৃত্যুর খবরে যা জানাল পাকিস্তান সরকার

ইমরান খান অভিযোগ করেন, আসিম মুনিরের শাসনামলে নির্যাতনের মাত্রা নজিরবিহীন পর্যায়ে পৌঁছেছে। নারীদের প্রতি কোনো সম্মান এবং শিশু–বৃদ্ধদের প্রতি কোনো করুণা নেই বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তার দাবি, ‘ক্ষমতার লোভ মেটাতে’ সেনাপ্রধান যেকোনো কিছু করতে সক্ষম।

তিনি বলেন, ‘এক ব্যক্তির নির্দেশেই এখন পুরো দেশ পরিচালিত হচ্ছে এবং সেই ফলে ‘নৈতিকতা সম্পূর্ণরূপে সমাহিত’ হয়েছে। সাধারণ নাগরিকদের ওপর অতীতে কখনো এমন গণহত্যা হয়নি বলে উল্লেখ করে ইমরান খান গত ৯ মে ২০২৩, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, আজাদ কাশ্মির ও মুরিদকের ঘটনাগুলোকে ‘নির্মম রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের ভয়াবহ উদাহরণ’ হিসেবে তুলে ধরেন। তার দাবি, এসব ঘটনায় অস্ত্রহীন জনগণের ওপর যে ধরনের গুলি চালানো হয়েছে, তা কোনো সভ্য সমাজে অকল্পনীয়।

স্ট্যাটাসে ইমরান খান অভিযোগ করেন, ড. ইয়াসমিন রাশিদের মতো বয়স্ক ক্যান্সার–সারভাইভারকে কেবল পিটিআই ত্যাগ না করায় কারাগারে রাখা হয়েছে। তার স্ত্রী বুশরা বিবিকেও নির্জন কক্ষে আটকে রাখা হয়েছে শুধু তার ওপর চাপ প্রয়োগের উদ্দেশ্যে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘কোন আইনের শাসন যেখানে পিটিআই ত্যাগকারীরা দায়মুক্তি পাচ্ছে, অথচ যারা আমার আদর্শে অটল, তারা নির্মম নিপীড়নের শিকার?’

Imran

তিনি সাফ জানিয়ে দেন, ‘আমরা দাসত্ব স্বীকারের চেয়ে মৃত্যুকেই শ্রেয় মনে করি।’ ইমরান খানের দাবি, তার ও তার স্ত্রীর ওপর ‘সম্ভব সব ধরনের নির্যাতন’ চালানো হচ্ছে এবং কোনো রাজনৈতিক নেতার পরিবার অতীতে এমন আচরণের শিকার হয়নি। তিনি বলেন, ‘যা-ই করা হোক, আমি কখনো মাথা নত করব না, কখনো সমর্পণ করব না।’

এ পোস্টে ইমরান খান বলেন, ‘পিটিআই কোনোভাবেই ‘ফর্ম-৪৭ সরকার’ বা সেনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনায় বসবে না। তার ভাষায়, এই ‘পাপেট সরকার’ এমন এক নীতি মেনে চলে—‘জিজ্ঞেস করে জানাবো’ এ কারণে তাদের সঙ্গে আলোচনায় কোনো ফল আসে না। তিনি অভিযোগ করেন, প্রতি দফায় আলোচনা শুরু হলে পিটিআইয়ের ওপর দমন-পীড়ন আরও বাড়ে।’

ইমরান দাবি করেন, দেশে সব ক্ষমতা এক ব্যক্তির হাতে আসিম মুনির, যিনি ক্ষমতা ধরে রাখতে যেকোনো পর্যায়ে যেতে পারেন। আলোচনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন তেহরিক তাহাফুজ–এ–আইন পাকিস্তানের মিত্ররা মেহমুদ খান আচাকজাই ও আল্লামা রাজা নাসির আব্বাস।

ইমরান খান পিটিআই–এর সব পদধারী নেতাকর্মী, এমপি, ইনসাফ ল’ইয়ার্স ফোরাম এবং জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের হাইকোর্টে গিয়ে শুনানির তারিখ না পাওয়া পর্যন্ত আদালত ত্যাগ না করার আহ্বান জানান। তার অভিযোগ, তার ও বুশরা বিবির মামলা ইচ্ছাকৃতভাবে দীর্ঘায়িত করা হচ্ছে, শুনানির তারিখ দেওয়া হচ্ছে না—যাতে তারা কারাগারেই থেকে যান। তার দাবি, ‘সবারই জানা, এসব মামলার কোনো ভিত্তি নেই এবং একসময় এগুলো ভেঙে পড়বে,’ তাই শুনানি এড়ানো হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, তিনি সম্পূর্ণভাবে সালমান আকরাম রাজার ওপর আস্থা রাখেন। দলের সব নির্দেশনা ও মিটিং–সংক্রান্ত তথ্য তার মাধ্যমেই জানানো হবে এবং এসব বাস্তবায়নের দায়িত্বও সালমান আকরাম রাজার।

স্ট্যাটাসটি ৫ নভেম্বর ২০২৫ রাত ১১টা ২০ মিনিটে পোস্ট করা হয়। পরে ওই রাতে প্রায় ৮ লাখের বেশি ভিউ হয়। তার মৃত্যুর পর পোস্টটি আবারও আলোচনায় আসে।


সর্বশেষ সংবাদ