প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিশ্বের দেশ কোনগুলো, কীভাবে নির্ধারণ করা হয়?

প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিশ্বের দেশ
প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিশ্বের দেশ  © সংগৃহীত

প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বিশ্ব হিসেবে দেশগুলোকে শ্রেণিবদ্ধ করার ধারণাটি তৈরি হয় ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির পরপরই। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন পর্যন্ত এটি ব্যবহৃত হয়েছিল। স্নায়ুযুদ্ধের সময়ে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত পশ্চিমা ব্লক ও বামধারার পূর্বাঞ্চলীয় ব্লকের বিভাজন থেকেই এ ধারণার উদ্ভব। তখন নিরপেক্ষ ও অন্যান্য দেশগুলোকে একত্রে তৃতীয় বিশ্ব হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

সাধারণত দরিদ্র বা 'অনুন্নত' দেশ বোঝাতে থার্ড ওয়ার্ল্ড বা তৃতীয় বিশ্বের দেশ শব্দটি ব্যবহার করা হলেও বর্তমানে একে ব্যাপক পুরোনো, অপ্রাসঙ্গিক ও অবিবেচিত বলে মনে করা হয়। ঐতিহাসিকভাবে প্রথম বিশ্ব বলতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ গণতান্ত্রিক ও শিল্পোন্নত দেশগুলোকে বোঝানো হতো। দ্বিতীয় বিশ্ব বলতে শ্রমিক ও কৃষকশ্রেণির নেতৃত্বাধীন বামধারার সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোকে আর তৃতীয় বিশ্ব বলতে- এ দুই ব্লকের কোনোটির সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট নয়-এমন অধিকাংশ দেশকে বোঝানো হতো।

প্রথম বিশ্ব 
যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গণতান্ত্রিক ও শিল্পোন্নত দেশগুলোকে প্রথম বিশ্ব বলা হতো। এর মধ্যে ছিল যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, পশ্চিম জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, স্পেনসহ পশ্চিম ইউরোপ, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়া। পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার কারণে আফ্রিকার কিছু অঞ্চল—স্পেনের অধীন পশ্চিম সাহারা, বর্ণবৈষম্য আমলের দক্ষিণ আফ্রিকা এবং দক্ষিণ-পশ্চিম আফ্রিকা (বর্তমান নামিবিয়া)—এই দলে গণ্য হতো।

এ ছাড়া অ্যাঙ্গোলা ও মোজাম্বিকও ১৯৭৫ সালে কমিউনিস্ট রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার আগ পর্যন্ত একই শ্রেণিতে ছিল। সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, অস্ট্রিয়া, আয়ারল্যান্ড ও ফিনল্যান্ডের মতো নিরপেক্ষ রাষ্ট্রগুলোও কার্যত প্রথম বিশ্বের অন্তর্ভূক্ত হিসেবে বিবেচিত হতো।

দ্বিতীয় বিশ্ব
দ্বিতীয় বিশ্বের অন্তর্ভুক্ত ছিল সোভিয়েতপন্থী রাষ্ট্রগুলো। সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রগুলো ও পূর্ব ইউরোপ-যার মধ্যে পোল্যান্ড, পূর্ব জার্মানি, চেকোস্লোভাকিয়া ও বলকান অঞ্চল এর অন্তর্ভূক্ত ছিল। এ ছাড়া চীনের সঙ্গে যুক্ত এশীয় কমিউনিস্ট দেশগুলোও এতে পড়ত, যেমন- মঙ্গোলিয়া, উত্তর কোরিয়া, ভিয়েতনাম, লাওস ও কম্বোডিয়া, কিউবা ও তাদের সহযোগী দেশ।

আরও পড়ুন: ট্রাম্প কাদের তৃতীয় বিশ্বের দেশ বললেন, কোন কোন দেশের অভিবাসন বন্ধ হতে পারে?

তৃতীয় বিশ্ব 
আলফ্রেড সাভি ‘তৃতীয় বিশ্ব’ শব্দটি ব্যবহার করে শীতল যুদ্ধের সময় প্রথম বিশ্ব (পুঁজিবাদী) বা দ্বিতীয় বিশ্বের (কমিউনিস্ট) সাথে জোটবদ্ধ নয় এমন দেশগুলিকে বর্ণনা করেছিলেন। এর মধ্যে ছিল মূলত আফ্রিকা, এশিয়া ও লাতিন আমেরিকার অপেক্ষাকৃত অনুন্নত কৃষিভিত্তিক রাষ্ট্রগুলো—আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা, এশিয়া ও ওশেনিয়ার দেশগুলো।

সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে এ ধারণা এখন পুরোনো, অপ্রাসঙ্গিক ও বিভ্রান্তিকর বলে বিবেচিত হয়। কারণ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতা আগের মতো জোটনির্ভর নয় এবং দেশগুলোর উন্নয়নমাত্রাও বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠেছে। 


সর্বশেষ সংবাদ