ভারতে বাড়ছে বাংলাদেশি নারী পাচার, বাধ্য করা হচ্ছে দেহ ব্যবসায়
- এনডিটিভি
- প্রকাশ: ১৮ আগস্ট ২০২৫, ১১:৩১ AM , আপডেট: ২০ আগস্ট ২০২৫, ১২:২৫ PM
বাংলাদেশ থেকে ভারতে নারী পাচারের হার দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। সাম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে পাচারকৃত একাধিক জোরপূর্বক দেহ ব্যবসায় বাধ্য কিশোরীকে উদ্ধার করেছে সেদেশের পুলিশ। এ ঘটনায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সক্রিয় আন্তদেশীয় মানব পাচার চক্রের বিষয়টি আবারও আলোচনায় এসেছে। খবর এনডিটিভি
গতকাল ভারতের হায়দরাবাদ থেকে জোরপূর্বক দেহ ব্যবসায় বাধ্য করা এক বাংলাদেশি কিশোরীকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। গত একমাসে বাংলাদেশি নারী উদ্ধারের চতুর্থ ঘটনা এটি। খাইরতাবাদ, চাদেরঘাট ও বান্দলাগুডার বিভিন্ন যৌনপল্লি থেকে পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করেছে।
এর আগে সোমবার মহারাষ্ট্রের পালঘর জেলায় একটি যৌন র্যাকেট থেকে উদ্ধার হওয়া ১৪ বছর বয়সী বাংলাদেশি কিশোরী পুলিশকে জানায়, তিন মাসের মধ্যে কমপক্ষে ২০০ জন পুরুষ তাকে যৌন নির্যাতন করেছে।
মানব পাচার বিরোধী ইউনিট (এএইচটিইউ), এনজিও এক্সোডাস রোড ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন এবং হারমনি ফাউন্ডেশনের এক যৌথ অভিযানে মীরা-ভায়ন্দর ভাসাই-ভিরার পুলিশ গত ২৬ জুলাই ভাসাইয়ের নাইগাঁওয়ের একটি ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে নাবালিকাকে উদ্ধার করা করেছিল।
ভারতের হায়দারাবাদ শহরের যৌনপল্লি থেকে বাংলাদেশি নারীদের উদ্ধারের ঘটনা নতুন নয়। ২০০০-এর দশকের শুরু থেকেই সংঘবদ্ধ মাফিয়াদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এসব যৌনপল্লিতে আটকে পড়া নারীদের উদ্ধার করছে পুলিশ। শুধু বাংলাদেশ থেকেই নয়, উজবেকিস্তান, রাশিয়া, ইউক্রেন, শ্রীলঙ্কা ও নেপাল থেকেও নারীদের এনে যৌন পেশায় নামানো হচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে পাচারের ক্ষেত্রে, পাচারের শিকার নারীরা সীমান্তে এজেন্টদের সাহায্য নিয়ে স্থল বা নৌপথে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করে। ভারত ও বাংলাদেশে থাকা পাচার চক্রের হোতাদের নেটওয়ার্ক খুবই শক্তিশালী। তারা দালাল ও অন্যদের অর্থের ব্যবস্থা করে।’
পাচারের শিকার নারীদের চাকরির প্রলোভন ও ভালো বেতনের আশ্বাস দেখিয়ে ভারতে নিয়ে আসা হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের কিছু অঞ্চলে চরম দারিদ্র্য রয়েছে। শিকার বা মাছ ধরার ছদ্মবেশে এজেন্টরা অসহায় নারী বা কিশোরীদের খুঁজে বের করে। এরপর তাঁদেরকে ভালো জীবিকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভারতে আসতে প্ররোচিত করে। ভারতে আসার পর স্থানীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে তাঁদেরকে বিভিন্ন শহরে পাঠানো হয়।’
এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘দারিদ্র্যের কারণে বাংলাদেশ থেকে পুরুষ, নারী ও শিশুরা অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করে। ধরা না পড়া পর্যন্ত তাঁরা নিজেদের বাঙালি পরিচয় দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন।’
সেন্ট্রাল সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার বোর্ড (সিএসডব্লিউবি) পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ভারতে বাণিজ্যিক যৌনশোষণের শিকার হওয়া নারীদের মধ্যে ২ দশমিক ৭ শতাংশই বাংলাদেশের নাগরিক। বাংলাদেশ থেকে পাচার নারীদের কলকাতা, দিল্লি, হায়দরাবাদ, মুম্বাইসহ বিভিন্ন শহরে দালালদের কাছে বিক্রি করা হয়।
হায়দরাবাদে পাচার চক্রের হোতারা আত্তাপুর, বান্দলাগুডা, চিন্তালমেট, হিমায়াতসাগর রোড ও চম্পাপেটে সক্রিয়ভাবে এসব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে।