মোগলি নয়, বাস্তব! ৬ কুকুরের সঙ্গে বেড়ে ওঠা বালকটি এখন ঘেউ ঘেউ করেই মনের ভাব প্রকাশ করে
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৫, ০৯:৩৮ PM , আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৫, ০৯:০৫ PM

ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক রুডইয়ার্ড কিপলিঙের বিখ্যাত উপন্যাস ‘মোগলি’র কথা কে না জানে! কিপলিঙের উপন্যাসের সেই চরিত্রকে নিয়ে সিনেমা, কার্টুনও হয়েছে। বন্যপশুদের মাঝে এক মানবসন্তানের বেড়ে ওঠার কাহিনি। পশুদের মতোই আচার-আচরণ, ঝাঁকড়া ঝাঁকড়া চুলের সেই মানবশিশুই কিপলিঙের উপন্যাসের দৌলতে যেন জীবন্ত চরিত্র হয়ে উঠেছে।
কিন্তু জানা আছে কি, বাস্তবেও ‘মোগলি’র খোঁজ মিলেছে একাধিক বার! ভারতেও এক ‘মোগলি’কে পাওয়া গিয়েছিল। তা-ও আবার উপন্যাস প্রকাশিত হওয়ার অনেক আগেই। তাঁর নাম ছিল দিনা সানিচর।
উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহরের জঙ্গলে দিনার খোঁজ মিলেছিল ১৮৭৩ সালে। একদল নেকড়ের সঙ্গে ওই জঙ্গলে দিনাকে দেখতে পেয়েছিলেন শিকারিরা। দিনার বয়স তখন মাত্র ছয়। তবে আধুনিক সমাজের সঙ্গে শেষজীবন অবধি তিনি ভাল ভাবে খাপ খাওয়াতে পারেননি। ১৮৯৫ সালে মাত্র ৩৪ বছর বয়সে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় দিনার।
সম্প্রতি থাইল্যান্ডে আরও এক জনের খোঁজ মিলেছে। তার সঙ্গেও ‘মোগলি’র মিল খুঁজে পেয়েছেন অনেকে। আট বছর বয়সি ওই বালক মানুষ হয়েছে ছ’টি কুকুরের সঙ্গে।
জানা গিয়েছে, আট বছর বয়সি ওই বালককে তার পরিবার বছরের পর বছর ধরে পরিত্যক্ত করে রাখার কারণে সে ছ’টি কুকুরের সঙ্গে বড় হচ্ছিল। মানুষের মতো কথা বলার বদলে কুকুরের মতো ঘেউ ঘেউ করে ডাকতেও শিখেছে ওই বালক।
স্থানীয় এক স্কুলের অধ্যক্ষ এবং এক জন শিশু অধিকার কর্মী ছেলেটির অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করার পর বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে।
চিনা সংবাদমাধ্যম ‘সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট’-এর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই বালক স্কুলে না গেলেও তার মা পুত্রের পড়াশোনার খরচ বাবদ ৪০০ ভাট (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় হাজার টাকা) সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি বাবদ নিতেন। তবে সেই টাকা পুত্রের পড়াশোনার জন্য কখনও খরচ করেননি তিনি।
প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, ওই বালকের ৪৬ বছর বয়সি মা নিয়মিত কাছাকাছি গ্রাম এবং মন্দিরগুলিতে খাবার ও অর্থের জন্য ভিক্ষা করতে যান। উত্তর তাইল্যান্ডের উত্তরাদিত প্রদেশের একটি ছোট কাঠের বাড়িতে একা ফেলে রেখে যেতেন সন্তানকে। সেই সময়ে তার সঙ্গী ছিল ছ’টি কুকুর।
স্কুলের অধ্যক্ষ তথা রাজনীতিবিদ পাভিনা হংসাকুল সম্প্রতি ওই বালকের সম্পর্কে জানতে পেরে প্রশাসনের দ্বারস্থ হন। সরকারের তরফে ওই বালকের সঙ্গে দেখা করতে যায় প্রতিনিধিদল। কাঠের বাড়িটি পরিদর্শন করেন দলের সদস্যেরা।
প্রশাসনিক কর্তারা দেখেন, বাড়ির বাইরে ছয় কুকুরের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছে বালক। আর জরাজীর্ণ ওই কাঠের বাড়ির ভিতরে রয়েছেন তার মা এবং ২৩ বছর বয়সি দাদা।
তাঁরা দেখেন, মহিলা এবং তাঁর বড় ছেলে মাদকাসক্ত। তাঁদের রক্তপরীক্ষা করার পরে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই মহিলা এবং তাঁর বড় ছেলে দিনের পর দিন বালকটিকে একা ফেলে রেখেছিলেন। দেখাশোনাও করেননি।
সেই প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে পাভিনা বলেন, ‘‘ওর সঙ্গে কথা বলতে গেলেও ও আমার সঙ্গে কথা বলেনি। শুধু ঘেউ ঘেউ করেছে। সেই দৃশ্য দেখে কষ্ট হয়েছে।’’
প্রশাসনিক কর্তারা তদন্ত চালিয়ে এ-ও দেখেছেন যে, ওই বালক জীবনে এক দিন মাত্র স্কুল গিয়েছিল, তা-ও খুব ছোটবেলায়। তার পর তাকে তার মা আর কখনও স্কুলে পাঠাননি। পাভিনার কথায়, ‘‘শিক্ষার জন্য সরকারের পাওয়া ভর্তুকি আত্মসাৎ করার লোভেই ওকে আর কখনও স্কুলে পাঠাননি ওর মা।’’
প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলেও ওই বালকের মায়ের কুকীর্তির কথা জানতে পেরেছেন প্রশাসনিক কর্তারা। প্রতিবেশীদের মতে, কুকুরগুলোর সঙ্গেই সারা দিন সময় কাটাত বালকটি। অন্য মানুষের সংস্পর্শে না আসার কারণে কুকুরগুলিকেই অনুকরণ করতে শুরু করে সে।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই বালকের মা এবং দাদাকে মাদকসেবনের অভিযোগে আটক করা হয়েছে এবং চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। স্থানীয় একটি আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে বালকটিকে। বালকটির যাতে ঠিকঠাক যত্ন হয় এবং সে যাতে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব নিয়েছেন পাভিনা।