ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনে হামলার দায় স্বীকার ইসরায়েলের, নিহত একাধিক
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২৫, ০৮:৩৫ AM , আপডেট: ১৭ জুন ২০২৫, ০৮:২৪ PM
তেহরানের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনে ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সোমবার (১৬ জুন) ভোরে ঘটে যাওয়া এই হামলায় ঘটনাস্থলে প্রাণ হারিয়েছেন একাধিক সাংবাদিক ও কর্মী। সরাসরি সম্প্রচারের সময় হঠাৎ বিস্ফোরণে থমকে যায় সম্প্রচার, ধোঁয়া আর ধ্বংসস্তূপে ঢেকে যায় স্টুডিও। এরপর ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সরাসরি এই হামলার দায় স্বীকার করেছেন।
ঘটনার পরপরই ইসরায়েল সতর্কবার্তা জারি করে। তেহরানের বিস্তীর্ণ এলাকায় জনসাধারণকে শহর ছাড়তে বলা হয়। এসব এলাকায় ছিল রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবন, পুলিশ সদর দফতর এবং তিনটি বড় হাসপাতাল। এর মধ্যে একটি হাসপাতাল ছিল বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর মালিকানাধীন। মোট প্রায় ৩ লাখ ৩০ হাজার মানুষকে সেখান থেকে সরিয়ে নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর ভাষ্য অনুযায়ী, এর আগে ইরান থেকে ছোড়া একাধিক ক্ষেপণাস্ত্রে তাদের দেশে আটজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন, যার পাল্টা জবাব হিসেবেই এ হামলা চালানো হয়।
এ নিয়ে চতুর্থ দিনের মতো মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের এই দুই আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী। সংঘাতের মাত্রা ক্রমেই তীব্র হচ্ছে, আর উভয় পক্ষই যেন এক অনিবার্য যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: সাংবাদিকের প্রশ্ন— খমেনিকে হত্যার পরিকল্পনা আছে কিনা, যা বললেন নেতানিয়াহু
ঘটনার সময় রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের অ্যাঙ্কর সাহার এমামি সরাসরি সম্প্রচার করছিলেন। হঠাৎ বিস্ফোরণের পর ক্যামেরার ফ্রেম কেঁপে ওঠে, স্টুডিওতে ধোঁয়া ঢুকে পড়ে এবং সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই এক ভিন্ন স্টুডিও থেকে এমামি পুনরায় সম্প্রচারে আসেন এবং জানান, প্রথম স্টুডিওতে কয়েকজন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। পরবর্তীতে সম্প্রচারে ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন ভবন, আগুনের লেলিহান শিখা ও ধ্বংসস্তূপের চিত্র তুলে ধরা হয়।
সেই সময় তেহরানে অবস্থানরত সিবিএস নিউজের প্রতিবেদক সৈয়দ বাত্তাহেয়ি জানান, শহরের আকাশজুড়ে শোনা গেছে বিমান বিধ্বংসী অস্ত্রের গর্জন। হাজার হাজার মানুষ শহর ছাড়ার চেষ্টা করায় মূল সড়কগুলোতে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট। বাত্তাহেয়ি আরও জানান, রাজধানীর ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল সারা দিনজুড়ে।
এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ লেখেন, ‘ইরানকে বহু আগেই সেই চুক্তিতে সই করা উচিত ছিল, যেটার কথা আমি বলেছিলাম। এখন সবাইকে অবিলম্বে তেহরান ছাড়তে হবে।’ তিনি আরও লেখেন, ‘কী ভয়াবহ দুঃখজনক মানবিক ক্ষয়ক্ষতি। সরাসরি বলছি—ইরান কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র পাবে না।’
ট্রাম্প বর্তমানে কানাডায় অনুষ্ঠিত জি-৭ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। তবে মধ্যপ্রাচ্যের চলমান পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে তিনি সোমবার রাতেই ওয়াশিংটনে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তার প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট জানিয়েছেন, মধ্যপ্রাচ্যে যা ঘটছে, সে কারণে প্রেসিডেন্ট সময়ের আগেই দেশে ফিরছেন।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, তাদের সামরিক অভিযানে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বহু বছর পিছিয়ে গেছে। অন্যদিকে, বিশ্লেষকদের মতে, পরিস্থিতি দ্রুত একটি পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের দিকে ধাবিত হচ্ছে, যার পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার চরম অবনতি।