ইসরায়েলের হামলায় তেহরানের জ্বালানি স্থাপনায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ

ইরানের  ‘শাহরান ফুয়েল ডিপো’তে বিস্ফোরণ
ইরানের ‘শাহরান ফুয়েল ডিপো’তে বিস্ফোরণ  © সংগৃহীত

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাত ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। রবিবার (১৫ জুন) সকালে ইসরায়েলের পাল্টা হামলায় তেহরানের আকাশ ধোঁয়া ও আগুনে ঢেকে যায়। শহরের গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি স্থাপনা ‘শাহরান ফুয়েল ডিপো’তে একের পর এক বিস্ফোরণে বিস্তীর্ণ এলাকা কেঁপে ওঠে।

ইসরায়েল-ইরান পাল্টাপাল্টি হামলা শুরু হয়েছে শুক্রবার থেকে, যা ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে এক ভয়াবহ সংঘাতের ইঙ্গিত দিচ্ছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

ইরানের তেল মন্ত্রণালয় জানায়, রাজধানীর শাহরান এলাকায় অবস্থিত গ্যাস ডিপোতে ইসরায়েলি হামলায় আগুন ধরে যায়। ১১টি সংরক্ষণ ট্যাঙ্কের একাধিক ট্যাঙ্ক বিস্ফোরিত হয়। আশপাশের বাসিন্দারা জানান, বিস্ফোরণের কম্পনে মনে হচ্ছিল যেন ভূমিকম্প হয়েছে। পাহাড়ঘেরা তেহরানের চারপাশে আগুনের আলো ছড়িয়ে পড়ে।

এদিকে শনিবার রাতেও ইরান থেকে ইসরায়েলের জেরুজালেম এবং হাইফা শহর লক্ষ্য করে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়। ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করলেও বিস্ফোরণের আলো আকাশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।

আরও পড়ুন: ‘ইসরায়েলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভারী ও ধ্বংসাত্মক হামলা’

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানায়, তারা ইরানের সামরিক স্থাপনাগুলোতে বিমান হামলা চালাচ্ছে। ইরানও পাল্টা হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

গত কয়েক দশকে দুই দেশের মধ্যে এমন সহিংস সংঘর্ষ আর দেখা যায়নি। শুক্রবার শুরু হওয়া হামলায় প্রথমেই ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো, আকাশ প্রতিরক্ষা ও সামরিক ঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা চালায়। শনিবার সেই আঘাতের বিস্তার হয় জ্বালানি অবকাঠামোতেও।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইফি ডেফরিন বলেন, তেহরানের আকাশে তারা “ফ্রিডম অব অ্যাকশন” অর্জন করেছে, অর্থাৎ বড় কোনো বাধা ছাড়াই তারা ইরানে হামলা চালাতে পারছে।

ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত ৭০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ছয়জন উচ্চপদস্থ নিরাপত্তা কর্মকর্তা রয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইরানের নাতাঞ্জ পারমাণবিক স্থাপনাও।

অন্যদিকে, ইরান শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে ইসরায়েলের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনায় পাল্টা হামলা চালিয়েছে। তবে সেই হামলার কার্যকারিতা তুলনামূলক কম। এ পর্যন্ত তিনজন নিহত ও বহু আহতের খবর পাওয়া গেছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বরাতে জানা গেছে, দুই দিনে ইসরায়েল প্রায় ১৫০টি স্থানে হামলা চালিয়েছে, আর ইরান থেকে প্রায় ২০০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে।

আর যা জানা গেছে:

হুথিদের লক্ষ্য করে ইসরায়েলি হামলা:

ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহীদের এক বৈঠকে ইসরায়েল হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির কর্মকর্তারা। ইরানের আঞ্চলিক মিত্রদের দুর্বল করার কৌশলের অংশ হিসেবে এই হামলা বলে মনে করা হচ্ছে।

পারমাণবিক আলোচনা বাতিল:

ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের নির্ধারিত পারমাণবিক আলোচনা বাতিল হয়েছে। ওমানে রবিবার এই আলোচনা হওয়ার কথা থাকলেও চলমান সংঘাতের কারণে তা স্থগিত হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান:

ইসরায়েল আশা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র যৌথ হামলায় অংশ নেবে। তবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এমন কোনো জড়িত থাকার বিষয় অস্বীকার করেছেন। তবে মার্কিন সামরিক বাহিনী ইসরায়েল ও অঞ্চলে অবস্থানরত নিজেদের বাহিনী সুরক্ষায় মোতায়েন বাড়াচ্ছে।

ইরানের শীর্ষ কমান্ডার নিহত:

ইরানি সশস্ত্র বাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরায়েলি হামলায় আরও দুইজন জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত তিন দিনে নিহত কমান্ডারের সংখ্যা দাঁড়াল ছয়জন। নিহতদের মধ্যে পারমাণবিক আলোচনার দায়িত্বে থাকা আলি শামখানিও রয়েছেন।

সার্বিকভাবে, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার এই সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যকে নতুন করে অস্থিতিশীল করে তুলছে। এর পরিণতি কেবল দুই দেশ নয়, গোটা অঞ্চলকে প্রভাবিত করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence