ইতিহাসের ভয়ঙ্করতম বিমান দুর্ঘটনায় কতজনের মৃত্যু হয়েছিল, জেনে নিন

কেএলএম বিমানের ধ্বংসাবশে
কেএলএম বিমানের ধ্বংসাবশে  © সংগৃহীত

ভারতের পশ্চিম উপকূলীয় রাজ্য গুজরাটের আহমেদাবাদের সরদার প্যাটেল বল্লভভাই বিমানবন্দর থেকে ২৪২ আরোহীকে নিয়ে উড্ডয়নের পরপরই একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। দেশটির বেসরকারি বিমান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনারের ওই ফ্লাইটটি যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দরের উদ্দেশে উড্ডয়নের কয়েক মিনিটের মধ্যে বিধ্বস্ত হয়। আজ বৃহস্পতিবার (১২ জুন) স্থানীয় সময় দুপুর ১টা থেকে ২টার মধ্যে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। বিমানটি উড্ডয়নের কিছুক্ষণের মধ্যেই আকস্মিকভাবে নিচে নামতে শুরু করে। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, বিমানটি প্রায় ৮২৫ ফুট উচ্চতায় পৌঁছানোর পর হঠাৎ নিচে নামতে থাকে।

বিমান বিধ্বস্তের কিছুক্ষণ পর ওই ফ্লাইটে থাকা যাত্রীদের তালিকা প্রকাশ করেছে এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষ। এতে বলা হয়েছে, এয়ার ইন্ডিয়ার বিধ্বস্ত এআই ১৭১ ফ্লাইটে ১৬৯ ভারতীয় নাগরিক, ৫৩ ব্রিটিশ নাগরিক, কানাডীয় এক নাগরিক ও পর্তুগালের সাতজন নাগরিক ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে বিমানে থাকা কেউই আর বেচে নেই। এখন পর্যন্ত ১৩৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। 

তবে এটি বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী বিমান দুর্ঘটনা নয়। ১৯৭৭ সালের ২৭ মার্চ, স্পেনের কানারি দ্বীপপুঞ্জের তেনেরিফে দ্বীপে সংঘটিত হয় ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাণঘাতী বিমান দুর্ঘটনা। সেদিন বিকেলে লস রোদেওস বিমানবন্দরের রানওয়েতে মুখোমুখি সংঘর্ষে পড়ে দুটি বোয়িং ৭৪৭ বিমান। ভয়াবহ সেই সংঘর্ষে প্রাণ হারান অন্তত ৫৮৩ জন যাত্রী। ‘তেনেরিফে বিপর্যয়’ নামেই পরিচিত এই দুর্ঘটনাটি আজও বৈমানিক ইতিহাসে সবচেয়ে মর্মান্তিক দুর্ঘটনাগুলোর একটি হিসেবে স্মরণীয়।

আফ্রিকার পশ্চিম উপকূল ঘেঁষা কানারি দ্বীপপুঞ্জের সবচেয়ে বড় দ্বীপ তেনেরিফে, যা স্পেনের অধীন একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল। ওই দিন স্পেনের আরেকটি দ্বীপ গ্রান কানারিয়ার লাস পালামাস বিমানবন্দর থেকে দুটি ফ্লাইট ছাড়ার কথা ছিল। তবে সেখানে ঘটে যাওয়া একটি সন্ত্রাসী বোমা হামলার ঘটনায় বিমান দুটি নিরাপত্তার কারণে বিকল্প গন্তব্য হিসেবে পাঠানো হয় লস রোদেওস বিমানবন্দরে, যেখানে শেষ পর্যন্ত ঘটে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা।

লস রোদেওস তুলনামূলক ছোট বিমানবন্দর। সেখান থেকে স্থানীয় ফ্লাইটগুলো পরিচালনা করা হয়। তা ছাড়া রোববার ছুটির দিন হওয়ায় বিমানের আনাগোনাও কম ছিল। কন্ট্রোল টাওয়ারের দায়িত্বে কেবল দুইজন কাজ করছিলেন।

এদিকে লস রোদেওস থেকে বিমানগুলোকে গ্রান কানারিয়া বিমানবন্দরের স্থানান্তরের চেষ্টা করা হয়। এই বিমানগুলোর দুটি হলো কেএলএম রয়্যাল ডাচ এয়ারলাইনসের ফ্লাইট ৪৮০৫ এবং প্যান অ্যামেরিকান ওয়ার্ল্ড এয়ারওয়েজের (প্যান অ্যাম) ফ্লাইট ১৭৩৬।

লস রোদেওসে এয়ারস্ট্রিপ ছিল একটি। ওদিকে পাহাড় থেকে ঘন কুয়াশা নেমে আসতে শুরু করে। কন্ট্রোল টাওয়ারের থেকে কেএলএমের পেছনে প্যান এম যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। কেএলএম বিমান উড্ডয়নের জন্য এগিয়ে যেতে শুরু করলে রানওয়েতে থাকা প্যান অ্যাম বিমানে সরাসরি গিয়ে ধাক্কা দেয়। কেএলএম বিমানের ২৩৪ জন যাত্রীর ভেতর ৫৩টি শিশু ছিল। আর প্যান এম বিমানে ৩৮০ যাত্রী ও ১১ ক্রু ছিল। সংঘর্ষে কেএলএমের সব যাত্রী ও ক্রু মারা যান। আর প্যান অ্যাম বিমানের সামনের দিকের কেবল ৬১ আরোহী বেঁচে ছিলেন।

পরবর্তীতে স্প্যানিশ কর্তৃপক্ষের অনুসন্ধানে জানা যায়, কন্ট্রোল টাওয়ারের নির্দেশনা ঠিকভাবে বুঝতে পারেননি কেএলএমের পাইলট। ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। মূলত এতেই দুর্ঘটনা ঘটে। তা ছাড়া প্রতিকূল আবহাওয়া এবং স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বিমানও একটা ব্যাপার। ঘটনাটি ইতিহাসে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। এরপর বিমান চলাচলে বেতার যোগাযোগের ধরনের পরিবর্তন এনে একটি প্রমিত মান দাঁড় করানো হয়।


সর্বশেষ সংবাদ