যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন
মুসলিম ভোটাররা কার দিকে ঝুঁকছেন, কমলা নাকি ট্রাম্প?
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:০১ PM , আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২৮ PM
আগামী মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। নির্বাচনের দিনক্ষণ একদম দোরগোড়ায়। দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, সংবাদমাধ্যমে আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে মুসলিম ভোটাররা কাকে ভোট দেবেন। রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে, নাকি ডেমোক্র্যাটিক পার্টির কমলা হ্যারিসকে?
যুক্তরাষ্ট্রে মোট জনসংখ্যার মাত্র ১ দশমিক ৩ শতাংশ মুসলিম। মুসলিম কমিউনিটি সংখ্যায় তত বড় নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ফল নির্ধারণে বড় ভূমিকা পালন করে মুসলিম ভোট। এজন্য মুসলিম কমিউনিটির ভোট টানার জন্য চেষ্টা করছে প্রধান দুই দলই।
গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, আমেরিকার মোট জনসংখ্যার এক শতাংশের একটু বেশি হতে পারে মুসলিমরা। খ্রিষ্টধর্ম ৬৭% এবং ইহুদি ধর্মের জনসংখ্যা ২.৪%; ইসলাম হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় বৃহত্তম ধর্ম। সে হিসেবে চার মিলিয়নেরও বেশি মুসলিম বাস করে আমেরিকায়।
মিশিগান ও পেনসিলভেনিয়ার মতো তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ রাজ্যগুলোর জন্য মুসলিম ভোট খুবই গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারক ভূমিকা পালন করে। আর এই বছরের মুসলিম ভোটের ক্ষেত্রে একটাই ইস্যু—গাজা। কেননা, গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর নির্বিচারে গণহত্যার কারণে অনেকেই দায়ী করেন বাইডেন-কমলা প্রশাসনকে। যার ফলে এবারের মুসলিম ভোটারদের অধিকাংশই ঝুঁকছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের দিকে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় প্রতিটি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনই হয়ে থাকে চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ভোটের গুরুত্ব তুলে ধরে দেশটির সিবিএস চ্যানেলের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘আরব আমেরিকান এবং মুসলিম ভোটাররা ২০২০ সালে বাইডেনকে নির্বাচনে জিততে সাহায্য করেছিলেন। এ বছর তারা কমলা হ্যারিসকে ডুবিয়ে দিতে পারেন।’
টাইমস অব ইসরাইল বলছে, গেল জুলাইয়ে ফ্লোরিডার বাসভবন মার-ই-লাগোতে ট্রাম্পের সাথে দেখা করেন নেতানিয়াহু। তখনই নেতানিয়াহুকে যুদ্ধ বন্ধের জন্য সময়সীমা বেঁধে দেন ট্রাম্প। ইসরাইল ও মার্কিন সূত্রগুলো বলছে, আগামী সপ্তাহের নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্প। জয়ের পর জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার আগেই যুদ্ধের অবসান চান সাবেক এই প্রেসিডেন্ট।
কমলা হ্যারিসকে প্রত্যাখ্যানকারী মুসলিম আমেরিকানরা ট্রাম্পকে ভোট দিতে পারেন। বেছে নিতে পারেন তৃতীয় কোনো প্রার্থীকে অথবা ভোট দেওয়া থেকে তাদের সম্পূর্ণভাবে বিরত থাকার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। মুসলিম ও ইসরাইল বিরোধী ভোটারদের দলে টানতে কমলা হ্যারিস ও ট্রাম্প প্রতিদিনই নিত্য নতুন প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলেছেন। মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের জন্য বাইডেন ও কমলা হ্যারিসকে দায়ী করে ট্রাম্প বলছেন, তিনি ক্ষমতায় না আসলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী। এমনকি, কয়েকদিন আগে লেবাননের মুসলিমদের উদ্দেশ্য করে দেয়া এক বার্তায় তাদের প্রতি সহানুভূতি জানিয়েছেন রিপাবলিকান এই প্রার্থী। আবার তিনি জয় না পেলে ইসরাইল ধ্বংস হয়ে যাবে বলে ইহুদি ভোটারদেরও মন জয়ের চেষ্টা করছেন ট্রাম্প।
বিভিন্ন গণমাধ্যম বলছে, মুসলিম ও ইহুদি ভোট নিয়ে উভয় সংকটে রয়েছেন কমলা। ইসরায়েলের পক্ষে কথা বললে আরব-মুসলিমরা নাখোশ হচ্ছেন। অন্যদিকে ইসরায়েলের সমালোচনা ও ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলতে গেলে ইহুদি ভোটারদের অসন্তুষ্ট করার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে, কিছুটা হলেও সুবিধাজনক অবস্থানে আছে ট্রাম্প। এবার মুসলিমদের ভোট তার দিকেই ঝুঁকবে বলে মনে করছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।
জানা গেছে, ২০১৬ সালের নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্প বারবার মুসলিমবিদ্বেষী নানা বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি মুসলিমদের তালিকাভুক্ত করার বিষয়েও বলেছিলেন। তথাপি এবারের নির্বাচনের শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ট্রাম্প আরব ও মুসলিম ভোটারদের বোঝানোর চেষ্টা করছেন, তাদের উচিত তাকে ভোট দেওয়া। যদিও বছরের পর বছর ধরে তিনি তাদের অপমান ও ধ্বংসের চেষ্টা করে গেছেন।
সম্প্রতি আরবি ভাষার টিভি চ্যানেল আল-আরাবিয়াকে সাক্ষাৎকার দেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘আমার অনেক বন্ধু আছে যারা আরব। তারা খুব সৌহার্দ্যপূর্ণ মানুষ।’ আরব ও মুসলিম জনবহুল গুরুত্বপূর্ণ দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য মিশিগানে ট্রাম্প জানান, তিনি মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতাদের একটি গ্রুপের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘আপনি জানেন তারা কী চান? তারা শান্তি চান। তারা দারুণ মানুষ।’
ট্রাম্প আক্রমণাত্মক সুরে বলেন, মুসলমানদের উচিত কমলাকে ভোট না দেওয়া। কারণ, তিনি মুসলিমদের অপছন্দের কাজ করেন। ওয়াইমিংয়ের সাবেক প্রতিনিধি লিজ চেনিকে বেছে নিয়েছেন কমলা। এ পদক্ষেপের সমালোচনা করেন ট্রাম্প। চেনি রিপাবলিকান হলেও কমলাকে সমর্থন করছেন। ট্রাম্পের প্রশ্ন, কেন একজন মুসলিম বা কেন একজন আরব এমন কাউকে ভোট দিতে চাইবে, যার নায়ক লিজ চেনির মতো নারী। ট্রাম্প তাকে স্পষ্টতই তার বাবা সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনির সঙ্গে তুলনা করেন। ডিক চেনি ইরাক যুদ্ধে ভূমিকা রেখেছিলেন। ওই যুদ্ধ চলাকালে প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের কাছে গণবিধ্বংসী অস্ত্র রয়েছে দাবি করে ইরাকে স্থল অভিযান শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। পরে এ ধরনের কোনো অস্ত্র পাওয়া যায়নি। ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মনে করি, এটি সারাবিশ্বের মুসলমানদের জন্য একটি বড় অপমান।’
বিবিসি বলছে, মুসলিম আমেরিকানরা বছরের পর বছর ধরে নির্ভরযোগ্যভাবে ডেমোক্র্যাটকে ভোট দিয়েছে। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে বাইডেন প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গি এবার ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলাকে ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে তাদের সন্দিহান করে তুলেছে। এ অবস্থায় অধিকাংশ মুসলিম ভোটার ট্রাম্পের দিকে ঝুঁকতে পারেন বলে জানা গেছে।