দেশে ফিরতে চান তসলিমা নাসরিন, ড. ইউনূসের কাছে লিখলেন খোলা চিঠি

 ড. ইউনূস ও তসলিমা নাসরিন
ড. ইউনূস ও তসলিমা নাসরিন  © ফাইল ফটো

সোশ্যাল মিডিয়ায় সর্বদাই সোচ্চার থাকেন বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। আরজি কর থেকে বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থান, হিন্দুদের উপর অত্যাচার, সব নিয়েই ফেসবুকে সরব হন তসলিমা নাসরিন। কট্টরপন্থীদের চোখ রাঙানিকে কোনোদিনই পাত্তা দেননি তিনি। শেখ হাসিনা সরকারকে তুলাধুনা করেছেন বরাবর। বাংলাদেশের অন্তবর্তীকালীন সরকারও রেহাই পায়নি তার প্রশ্নবাণ থেকে। 

এবার বাংলাদেশের অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে খোলা চিঠি লিখলেন তসলিমা নাসরিন। গতকাল সোমবার (২৪ সেপ্টেম্বর) খোলা চিঠিতে তসলিমা, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তার সাক্ষাতের বর্ণনা দেন, যেখানে বিতর্কিত লেখিকাকে দেশে ফেরার কথা বলেছিলেন তিনি। 

তসলিমা লেখেন, আপনার কি মনে আছে আমাদের দেখা হয়েছিল, একবার বা দ ‘বার, ইউরোপে? সম্ভবত ফ্রান্সের দোভিলে। উইমেন'স ফোরামের প্রোগ্রামে। সম্ভবত সাল ছিল ২০০৫। গালা ডিনারে অথবা লাঞ্চে এক টেবিলে আমাদের বসার ব্যবস্থা হয়েছিল, যে টেবিলে বড় বড় লোক ছিলেন। চেরি ব্লেয়ার ছিলেন, সে কথা মনে আছে। আমি সম্ভবত কি-নোট স্পিকার ছিলাম সেবার। আপনি খাবার টেবিলে বেশ কিছুক্ষণ আমার সঙ্গে কথা বলেছিলেন, খাবার শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও কিছুক্ষণ। আপনি বারবার বলছিলেন, ‘দেশে চলে আসুন, দেশে চলে আসুন’। আমি বলেছিলাম, ‘কী করে যাবো? আমাকে তো দেশের সরকার যেতে দেয় না দেশে’। আপনি বলেছিলেন, ‘যেতে দেয় না আবার কী? ওটা তো আপনার দেশ, আপনার দেশে আপনার যাওয়ার, থাকার অধিকার আপনার জন্মগত, আপনাকে বাধা দেওয়ার রাইট কোনও সরকারের নেই’। আমি দুঃখ করে বলেছি, ‘আমি তো দূতাবাসে গেলাম কতবার, আমাকে ভিসাও দেয় না, আমার বাংলাদেশের পাসপোর্ট রিনিউও করে না’। আপনি বলেছিলেন, ‘রিনিউ করবে না, বললেই হলো? দেশের মেয়ে দেশে চলে আসুন তো!’ আমি বলেছিলাম, ‘আপনি তাহলে চেষ্টা করুন। সরকারকে বলুন। আপনি বললে নিশ্চয়ই হবে।’ আপনি কথা দিয়েছিলেন আপনি চেষ্টা করবেন। আজ বহু বছর পর জানতে ইচ্ছে করছে, আপনি কি আমাকে দেশে ফেরাবার চেষ্টা করেছিলেন? সরকারকে বলেছিলেন আমার সম্পর্কে কিছু? হয়তো তখন, যে কোনও কারণেই হোক কিছু করা আপনার পক্ষে সম্ভব হয়নি।

কিন্তু এখন তো আপনি দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতা ধারণ করে আছেন। এখন কি আর আগের মতো বলবেন না, ‘কী এত বাইরে বাইরে থাকছেন, দেশের মেয়ে দেশে চলে আসুন’? আগের মতো কি বলবেন না ‘ও দেশ তো আপনার দেশ, আপনার দেশে আপনার যাওয়ার, থাকার অধিকার আপনার জন্মগত, আপনাকে বাধা দেওয়ার রাইট কোনও সরকারের নেই’? বলুন আবার আগের মতো। দেশে ফিরতে দিন। এখন তো আপনার হাতেই সব।

নাকি ভয় পাচ্ছেন? আপনাকে ঘিরে আছে যারা, তারা যে সবাই ইসলামী মৌলবাদী, তা তো আমার চেয়ে বেশি আপনি জানেন। আপনি কি ভয় পাচ্ছেন আমাকে সাহায্য করলে আপনার বিরুদ্ধে সরব হবে আপনার নতুন জিহাদি বন্ধুরা? শুধু আমার মুণ্ডুই নয়, আপনার মুণ্ডুও কেটে ফেলে রাখবে ঢাকার রাস্তায়?

তসলিমা যোগ করে বলেন, কাদের নিয়ে শেষ বয়সে সংসার করছেন? অনুতাপ হয় না? আমার তো নির্বাসনেই কেটে গেল ৩০ বছর। বাকি ক'টা বছর, যতদিন আছি, কেটে যাবে। এই অহংকার নিয়ে অন্তত আমি মরতে পারবো যে, কোনও সুযোগ সুবিধার জন্য দেশের শত্রুদের সঙ্গে আপোস করিনি। আপনার কি এমন কোনও অহংকার আছে?

আপাতত দিল্লিতে বসবাস করেন তসলিমা। ১৯৯৪ সালে দেশ ছাড়তে হয়েছিল তসলিমাকে। ইসলাম বিরুদ্ধে লেখালেখির জন্য তাঁর বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি হয়েছিল। এরপর দীর্ঘদিন ইউরোপ-আমেরিকায় থাকার পর ভারতে ঠাঁই হয় তাঁর। ২০০৪ সাল থেকে টানা তিন বছর পশ্চিমবঙ্গে ছিলেন তসলিমা। এরপর ‘দ্বিখণ্ডিত’ নিষিদ্ধ হওয়ার পর হুমকির মুখে পড়ে কলকাতা ছাড়তে বাধ্য হন। কিছুদিন আগেই লেখিকা জানিয়েছিলেন, তাঁর ভারতে থাকার পারমিট রিনিউ হয়নি। সেই নিয়ে আতঙ্কিত তসলিমা। ভারত ছাড়তে হলে, তিনি মরেই যাবেন! এমন কথাও বলতে শোনা গিয়েছে তসলিমা নাসরিনকে। 

সূত্র: হিন্দুস্থান টাইমস বাংলা


সর্বশেষ সংবাদ