প্রতিষ্ঠার ১৭ বছরেও সংকট ও অপূর্ণতার বেড়াজালে কুবি

প্রতিষ্ঠার ১৭ বছরেও সংকট ও অপূর্ণতার বেড়াজালে কুবি
প্রতিষ্ঠার ১৭ বছরেও সংকট ও অপূর্ণতার বেড়াজালে কুবি  © ফাইল ছবি

প্রতিষ্ঠার ১৬ বছর পেরিয়ে সতেরোতে পা দিয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি)। ২০০৬ সালের ২৮ মে দেশের ২৬তম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিল লালমাটির ক্যাম্পাস খ্যাত এই বিদ্যাপীঠ। শালবন বিহারের কোল ঘেঁষে উঁচু-নিচু টিলা সমৃদ্ধ লালমাই পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত এই বিদ্যাপীঠে বর্তমানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় সাত হাজারেরও বেশি। জ্ঞান বিতরণ কাজে নিয়োজিত আড়াইশোরও বেশি শিক্ষক। 

বৃহত্তর কুমিল্লা অঞ্চলের একমাত্র সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার কারণে প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়টিকে ঘিরে প্রত্যাশা ছিল তুঙ্গে। কিন্তু প্রতিষ্ঠার ১৭ বছরে এসেও এসব প্রত্যাশার অধিকাংশই পূরণ হয়নি। বরং নানা-সংকট ও অপূর্ণতার বেড়াজালে আটকে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির অগ্রগতি।

অপ্রতুল আবাসন ব্যবস্থা, চিকিৎসা সেবার দুর্বলতা, অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা, অপরিসর গ্রন্থাগার, পরিবহনগত সীমাবদ্ধতা, খাদ্যে ভর্তুকির অভাব এবং অপর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাবসহ নানা সংকটের ধুম্রজালে আবদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়টি।

একটি গবেষণা এবং নতু জ্ঞান সৃষ্টি বান্ধব বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা হলেও এখনও রয়েছে পর্যাপ্ত শ্রেণীকক্ষের অভাব। কিছু কিছু অনুষদে প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে নেই পর্যাপ্ত ল্যাব, ফলে বিঘ্নিত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণ এবং ব্যাবহারিক জ্ঞানের মত মৌলিক বিষয়গুলো।

একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমের জন্য অপরিহার্য অনুষঙ্গ হলো পর্যাপ্ত বই, জার্নালসহ সুপরিসর গ্রন্থাগার। কিন্তু প্রতিষ্ঠার সতেরো বছরেও গড়ে ওঠেনি কোনো পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থাগার। এর বিপরীতে গ্রন্থাগার হিসেবে ব্যববহৃত হচ্ছে প্রশাসনিক ভবনের পঞ্চম তলায় দুটি কক্ষ যার ধারণক্ষমতা মাত্র ৮০ জন শিক্ষার্থীর। তবে নেই পর্যাপ্ত পরিমানে বইয়ের যোগান।

এদিকে, সাত হাজারেরও বেশী শিক্ষার্থীর বিপরীতে আবাসিক হল রয়েছে ছেলেদের জন্য মাত্র তিনটি এবং মেয়েদের জন্য একটি। চার হলের স্বাভাবিক ধারণ ক্ষমতা একহাজারের আশেপাশে। জ্যামিতিক হারে বাড়া শিক্ষার্থীদের সাথে পাল্লাদিয়ে আবাসিক হলের সংখ্যা বাড়েনি, যার কারণে বর্তমানে প্রায় ৮৬ ভাগ শিক্ষার্থীই আবাসিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

আরও পড়ুন: তিন দিবস উদযাপনেই শেষ বার্ষিক বরাদ্দের ৫৬ ভাগ

মেয়েদের জন্য নতুন করে শেখ হাসিনা হল নির্মাণকাজ প্রায় সম্পন্ন হলেও এখনও তাতে শিক্ষার্থীদের আবাসিক সুবিধা নিশ্চিত হয়নি। তবে এর জন্য প্রশাসনের অদক্ষতাকে দায়ী করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। একই দৃশ্য ছেলেদের জন্য নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে। কাজের সিংহভাগ সম্পন্ন হলেও নানা জটিলতায় সেটি প্রশাসন বুঝে পায়নি। 

স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে প্রশাসনিক ভবনের নিচ তলায় কোনরকমে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের কার্যক্রম। মেডিকেল সেন্টারটিতে জনবলের অভাব রয়েছে। এছাড়া আবাসিক চিকিৎসক না থাকায় সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কিংবা রাতে কোন শিক্ষার্থী অসুস্থ হলে পড়তে হয় বিপাকে। পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দের অভাবে মেডিকেল সেন্টারটি হতে যে ঔষধ সরবারহ করা হয় তা খুবই নগন্য।

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের প্রকৌশল অনুষদ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল পর্যন্ত অংশে নেই কোন সীমানাপ্রচীর। এ অংশে আগে তারাকাটার বেড়া থাকলেও বর্তমানে সেখানে শুধু খুঁটি রয়েছে। এতে রাতের আঁধারে ক্যাম্পাসের পিছনের অংশে বহিরাগতসহ মাদকসেবীদের আনাগোনা বাড়ে।

এছাড়াও সংকট রয়েছে নিরাপত্তা কর্মীর। ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নজরদারীর জন্য সিসি ক্যামেরার সংখ্যাও অপর্যাপ্ত, যেগুলো রয়েছে সেগুলোও ত্রুটিপূর্ণ। সম্প্রতি নিরাপত্তা ব্যবস্থার দূর্বলতার সুযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ডর্মেটরিতে চুরির ঘটনা ঘটেছে। 

আবাসিক হলগুলোতে নেই কোনো স্বতন্ত্র ডায়নিং ব্যবস্থা। আবার শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে মিল পদ্ধতিতে খাবারের ব্যবস্থা করা হলেও তাতে অধিক দামে খাবার খেতে হয় শিক্ষার্থীদের। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে খাবারে ভর্তুকির নিয়ম থাকলেও এখন পর্যন্ত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেরকম কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।

একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে পরিমাপ করার জন্য বিভিন্ন মাপকাঠি থাকতে পারে। তবে একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে পরিমাপ করা হয় সেখানে ইনপুট হিসেবে আসা ছাত্রদের জ্ঞান, গবেষণা এবং জ্ঞান বিতরণের মান দিয়ে। সর্বপরি আউটপুট হিসেবে এটি কেমন গ্র্যাজুয়েট  তৈরী করছে তা দিয়ে। 

প্রত্যাশা রাখি প্রাণপ্রিয় বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে যাক বহুদুর। জ্ঞান পিপাসুদের তৃষ্ণা নিবারণে পাল্লা দিক বিশ্বের শ্রেষ্ঠ জ্ঞান বিতরনের কেন্দ্রগুলোর সাথে। সৌন্দর্য ছড়াক সবুজের মাঝে রক্তিম কৃষ্ণচূড়ার মতো ও সজীব থাকুক সদ্য ফোটা গোলাপের মতো।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence