কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

তিন দিবস উদযাপনেই শেষ বার্ষিক বরাদ্দের ৫৬ ভাগ

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

শুধু র‍্যালি, আলোচনা সভা ও কেক কাটার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবি থাকলেও বাজেটের অভাব দেখিয়ে 'জাঁকজমকপূর্ণভাবে' দিবস উদযাপন থেকে বিরত থাকছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শিক্ষার্থীদের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে কুবি প্রশাসন।

ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা নিজ উদ্যোগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু দিবস উদযাপনের জন্য আলাদা বরাদ্দকৃত খাত থাকলেও সেই খাতের টাকা কোথায় গেল? এমন প্রশ্ন উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ দফতরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে অন্যান্য দিবস উদযাপন খাতে ১২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন দিবস উদযাপনে ব্যয় করা হয়েছে ৮ লাখ ৮১ হাজার ৩৮৫ টাকা। এর মধ্যে দুটি দিবস উপলক্ষে খরচ হয়েছে ৪ লাখ ৯০ হাজার ৪২২ টাকা। আর অপর দিবসে খরচ হয়েছে ১ লাখ ৮১ হাজার ৬৩১ টাকা। অর্থাৎ তিন দিবস উদযাপনেই খরচ হয়েছে ৬ লাখ ৭২ হাজার ৫১ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৫৬ ভাগ।

এ ছাড়া এ খাত থেকেই শিক্ষক ও কর্মকর্তা সমিতিসহ অন্যান্য সংগঠনের কর্মসূচি বাস্তবায়নে ৩ লাখ ১৩ হাজার টাকা ব্যায় করা হয়েছে। নবীনবরণসহ আরও কয়েকটি অনুষ্ঠানে ব্যয়ের পর দিবস উদযাপন খাতে বরাদ্দ রয়েছে মাত্র ৫ হাজার ৬১৬ টাকা। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন করতে মূল্য সংযোজন করসহ ৮ লাখ ১ হাজার টাকার একটি বাজেট প্রস্তাবনা দিয়েছিল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস-২০২২ উদযাপনের জন্য গঠিত ১৬ সদস্যের কমিটি। তবে টাকার অভাব দেখিয়ে প্রস্তাবিত বাজেট থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বাদ দিয়ে শুধুমাত্র র‌্যালি, জাতীয় পতাকা উত্তোলন, পায়রা উড়ানো ও কেক কাটা এবং সংক্ষিপ্ত আলোচনার জন্য 'বিবিধ' খাত থেকে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৮৬৪ টাকা বরাদ্দ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। 

দিবস উযাপনের বরাদ্দের টাকা অন্যান্য খাতে ব্যয় করে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপনে টাকা বরাদ্দ দিতে না পারায় ওবায়দুল্লাহ খান নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘প্রশাসন দিবস উদযাপনের টাকা বরাদ্দকৃত খাতের বাইরে গিয়ে অন্যান্য জায়গায় ব্যয় করে এখন বিশ্ববিদ্যালয় দিবসই উদযাপন করতে পারছে না। এ দায় এড়াতে পারে না।’

এদিকে বরাদ্দের অভাবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর উদযাপনে 'সদামাটা' আয়োজনে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গ্রুপে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। নিজেদের অর্থায়নে আয়োজন করেছেন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও। 

মো. নূর আলম নামে আইন বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ভিক্ষা চাই। বিশ্ববিদ্যালয় দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে।’ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার অন্যতম আয়োজক নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও বৃত্ত কুবির টিম এডভাইজার মুনিম হাসান বলেন, ‘আমরা মুক্তমঞ্চে শিক্ষার্থীদের নিজেদের টাকায় বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে একটি সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আয়োজন করেছি। এখানে সবাইকে এনে আমরা দেখিয়ে দিতে চাই একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতে একটুখানি সদিচ্ছা হলেই হয়। সাধারণ শিক্ষার্থীদের আবেগ নিয়ে ছেলেখেলা বন্ধ করার জন্য বিশেষ অনুরোধ রইল।’

বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম ইনজামাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় দিবস নিয়ে সকল শিক্ষার্থীর মধ্যে এক ধরনের ফেসিনেশন কাজ করে। কিন্তু কুবি প্রশাসন শিক্ষার্থীদের চাওয়া পাওয়ার তোয়াক্কা না করে দিবসটি দায়সারাভাবে পালন করার ঘোষণা দিয়েছে। বিষয়টি চরম হতাশার ও লজ্জাকর।’

আরো পড়ুন: ১৭ বছরে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, বড় হয়েছে পরিসর

শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী উপাচার্যের সাথে দেখা করে ১১ দফা দাবি পেশ করেছিলাম। উপাচার্য শিক্ষার্থীদের দাবীকে ন্যূনতম কর্ণপাত না করেই স্বেচ্ছাচারী মনোভাব প্রকাশ করেছেন। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ দিবস এভাবে কোন আয়োজন ছাড়া পালন হবে, এটি আমাদের জন্য লজ্জাজনক।’ 

উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ড. দুলাল চন্দ্র নন্দী বলেন, 'আমরা প্রশাসনের কাছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বাজেট প্রস্তাব করেছি। প্রশাসন আমাদেরকে বাজেট না দিয়ে স্পন্সর ব্যবস্থা করতে বলেছে। কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে বাজেট না দিলে কিছু করার নেই।’ 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড এ. এফ. এম. আবদুল মঈন বলেন, দিবসটি উদযাপনের জন্য ফান্ডে শুধুমাত্র চার হাজার টাকা ছিল। তবু আমরা ১ লাখ ৮৭ হাজার টাকার অনুমোদন দিয়েছি। কমিটি যে বাজেট নিয়ে এসেছে, আমরা তার পুরোটাই অনুমোদন দিয়ে দিয়েছি। তবে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য কমিটি স্পন্সর জোগাড় করতে না পারায় অনুষ্ঠানটি সবার উপস্থিতিতেই তারা বাদ দিয়েছে। 

শুধু দুই দিবস উদযাপনে বরাদ্দের বড় অংশ খরচ করে ফেলার বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে এ বিষয়ে তৎকালীন উপাচার্যকে প্রশ্ন করতে বলেন তিনি। আর দিবস উদযাপনের বরাদ্দের টাকা অন্যান্য খাতে ব্যয় করার বিষয়টি এড়িয়ে যান অধ্যাপক আবদুল মঈন। 

উল্লেখ্য, ২০০৬ সালের ২৮ মে দেশের ২৬তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। গত কয়েকবছর করোনা ও ঈদের ছুটির কারণে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে প্রশাসনের তেমন কোনো আয়োজন চোখে পড়েনি। তবে সবকিছু স্বাভাবিক থাকলেও বরাদ্দের অভাব দেখিয়ে এবার 'জাকজমকপূর্ণ' আয়োজন থেকে বিরত থাকছে কুবি প্রশাসন।


সর্বশেষ সংবাদ