কেন ঢাবির অর্থনীতি বিভাগে পড়বেন?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়   © সংগৃহীত

অর্থনীতির একটা বড় গুণ হচ্ছে এ বিষয়ে পড়ালেখা করে বৈচিত্র্যপূর্ণ সব সেক্টরে কাজ করা যায়। নিজ মেধা এবং প্যাশন অনুযায়ী সুযোগ খুঁজে নেয়ার জন্যে অর্থনীতিতে পড়াশোনা খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখে। ব্যাংক, সরকারী, এনজিও, জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক, ডেভেলপমেন্ট সেক্টর, থিংক ট্যাংক, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান- সবখানেই চাকরির সুযোগটা পাবেন অর্থনীতিতে পড়াশোনা করার মাধ্যমে। পাশাপাশি অর্থনৈতিক বিশ্লেষণে পটু হবার কারণে উদ্যোক্তা হতে চাইলে সেই সুযোগও আপনার কাছে থাকছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে পড়ালেখা শেষ করে চাকরি পেতে আপনার খুব বেশি সমস্যা হবে না, এটা বলাই যায়! অর্থনীতি শিক্ষার্থীদের বিশ্ব কীভাবে পরিচালিত হয়- এ বিষয়ক ধারণা পেতে সাহায্য করে। কোন সামগ্রীর দাম নির্ধারণ করা থেকে শুরু করে একটি দেশে অর্থনৈতিক অসাম্য বিরাজ করার কারণ সবকিছুই শেখানো হয় অর্থনীতি বিষয়ে।

সমাজ-ব্যবস্থা, রাষ্ট্রনীতি, আন্তর্জাতিক ও দেশী বাজার, পুঁজিবাজার, রাজনৈতিক ব্যবস্থা সবকিছুই আপনি বুঝে উঠতে পারবেন অর্থনীতির বিভিন্ন থিওরি ও মডেলের সাহায্যে। আমরা আমাদের নিত্য জীবনে যেসব সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি তা সবই ওতপ্রোতভাবে অর্থনীতির সাথে জড়িত। বাস্তব জীবনের এসব ঘটনা, যেগুলোকে Real Life Example বলা চলে, সেগুলোর দিকে তাকালেও অর্থনীতির মাহাত্ম্যটা টের পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন : ঢাবির ‘খ’ ইউনিটে সফল হতে ১৫ কৌশল

উদাহরণ, সম্পদ কতোটুকু আছে সেই অনুযায়ী আমরা কতোটুকু ভোগ করবো, সেটার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। দৈনন্দিন জীবনে কীভাবে কতটুকু ব্যয় করা হবে- সবই অর্থনীতির সাথে জড়িত এবং অর্থনীতি পড়ার মাধ্যমেই আমরা এগুলো বুঝে উঠতে পারবো। 

অর্থনীতি বিভাগ আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমবয়সীই বলতে হয়। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড আর এই বিভাগের পথচলাটা একসাথেই, ১৯২১ সালে শুরু হয়ে এখনো সেই পথচলা থামেনি, ক্রমশ দৃঢ় হয়েছে। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন ১২ বিভাগের একটি অর্থনীতি বিভাগ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদাকে ক্রমশ বাড়িয়ে নিতে অর্থনীতির অবদান অসামান্য। অর্থনীতি বিভাগ স্ব-মহিমায় প্রতিষ্ঠিত, বিশ্ববিদ্যালয়টির সেরা বিভাগগুলোর একটি হিসেবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ কেবল একটি বিভাগ নয়, অর্থনীতির শিক্ষার্থীদের জন্যে এটি একটি পরিবারের মত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সুনাম রয়েছে অসামান্য শিক্ষাদান এবং দেশসেরা শিক্ষকদের এক মিলনমেলা হিসেবে। হার্ভার্ড, এমআইটি প্রভৃতি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা নিয়ে তাঁদের অনেকেই সেই শিক্ষা বিলিয়ে দেন প্রিয় ছাত্রদের মাঝে। এই মুহূর্তে বিভাগটিতে ৪৭ জন গুণী শিক্ষক রয়েছেন, যাঁদের প্রত্যেকেই অর্থনীতির স্ব-স্ব ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ। অর্থনীতিকে ভালবাসতে শেখাবেন তাঁরা।

অর্থনীতি বিভাগকে বলা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব থেকে শক্তিশালী অ্যালামনাই নেটওয়ার্কগুলোর একটি। এই বিভাগের অ্যালামনাইরা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন সম্মানিত পদে। কেউবা জাতিসংঘ বা বিশ্বব্যাংকে সেবা দিচ্ছেন, কেউ আবার দেশে ও বিদেশে গুরুত্বপূর্ণ সব গবেষণায় রয়েছেন। অনেকেই আবার দেশ ও বিদেশী বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতাও করছেন। 

আরও পড়ুন : বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাবার ১২ কৌশল

বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল বিজয়ী, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. মো. ইউনুস কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতিরই ছাত্র ছিলেন! এছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমানও আমাদের সম্মানিত অ্যালামনাই। এছাড়াও অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি রয়েছেন এ তালিকায়।

অর্থনীতিতে চার বছরে বিভিন্ন কোর্সের মাধ্যমে আপনার অর্থনীতি জ্ঞান প্রগাঢ় হবে। প্রথম বর্ষেই মাইক্রো-ইকোনমিক্স এবং ম্যাক্রো-ইকোনমিক্স নিয়ে সাধারণ ধারণাটা পেয়ে যাবেন, সাথে শিখবেন গণিত আর পরিসংখ্যানও। দ্বিতীয় বর্ষে মাইক্রো আর ম্যাক্রোর পাশাপাশি ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে নিতে পারবেন দর্শন, রাজনৈতিক বিজ্ঞান কিংবা সমাজবিজ্ঞানের মতো বিষয়কে। ঐচ্ছিক হিসেবে শিখতে পারেন সফটওয়্যার ও এর উচ্চতর প্রয়োগগুলোও!

তৃতীয় বর্ষে আপনার সাথে পরিচয় হবে ইকোনমেট্রিক্সের- অর্থনীতি নামক ঘোড়ায় সওয়ার হলে যে জিনিসটি বাকি জীবন কাজে লাগবে। এছাড়াও ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিক্স, পাবলিক ইকোনমিক্স, মানিটারি ইকোনমিক্স, লেবার ইকোনমিক্সের মতো অর্থনীতির উচ্চতর বিষয়গুলো নিয়েও পড়তে হবে আপনাকে। তারপর ১ বছর এর মাস্টার্স এও পাবেন বিভিন্ন অ্যাপ্লাইড কোর্স। পাঁচ বছরে এসব কোর্স করবার পরে অর্থনীতির দুনিয়ায় প্রবেশ করবেন জ্ঞানীর বেশে- চমৎকার একটা বিষয় হবে কিন্তু!

আরও পড়ুন : ঢাবির ভর্তি পরীক্ষার আগের ১০ দিনে করণীয়

অর্থনীতি বিষয়টির ডালপালা অনেক প্রসারিত। অর্থনীতিতে গবেষণা করার সুযোগ রয়েছে অসংখ্য। মানুষের আচার-আচরণ যেমন আপনি অর্থনীতি দিয়ে বিশ্লেষণ করতে পারবেন ঠিক তেমনি আপনি একটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য কোন ধরনের কৌশল গ্রহণ করা প্রয়োজন তা ও বিশ্লেষণ করতে পারবেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ আপনার গবেষণার জন্যে সর্বাত্মক সাহায্য করবে। গবেষণা করার ক্ষেত্রে অর্থনীতির বিভিন্ন বিষয় কে আপনি বেছে নিতে পারেন যা আমাদের এই ডিপার্টমেন্ট এ পড়ানো হয়ে থাকে। এসব বিষয়ে নিয়ে গবেষণা করে আপনি আপনার প্রবলেম সলভিং স্কিলের উন্নতি করতে পারেন। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় যে কেস সলভিং করতে হয়, সেগুলোতেও সাহায্য করে অর্থনীতির জ্ঞান।

বিভিন্ন কেস নির্ভর পড়ালেখার পদ্ধতি অর্থনীতিকে করেছে অনন্য। এই নমুনা ঘটনাগুলো শিক্ষার্থীদের বাস্তব জীবনে অর্থনীতির প্রয়োগ বুঝতে সহায়তা করে। তাই এটা বলাই যায়, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে বিভিন্ন গবেষণা করতে অর্থনীতি বিভাগের থেকে ভালো বিভাগ আর হয় না!

আরও পড়ুন : ঢাবির ভর্তি প্রস্তুতিতে শেষ সময়ে যেসব বিষয় লক্ষণীয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর কোন বিভাগে তিনটি ক্লাব আছে বলে আমাদের জানা নেই। শুধুমাত্র অর্থনীতি বলেই বোধকরি, তিন ধরণের কার্যক্রমের জন্যে এই বিভাগে রয়েছে তিনটি ক্লাব। ইকোনমিক্স স্টাডি সেন্টার সব থেকে প্রাচীন, ইকোনমিক্স ক্যারিয়ার অ্যালায়্যান্স এবং ইকোনমিক্স কালচারাল ক্লাব সেই তুলনায় নবীন।

ইকোনমিক্স স্টাডি সেন্টারের (ESC) শুরুটা সেই ১৯৭৩ সালে। এরপর থেকেই ক্লাবটি অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা, উচ্চশিক্ষা, গবেষণা থেকে শুরু করে অর্থনীতি নিয়ে নানা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা সহ বিভিন্ন বিষয়ে সাহায্য করে আসছে।

ইএসসির একটি সচল ও কার্যকর ব্লগ রয়েছে, যেখানে নিয়মিত অর্থনীতি, রাজনীতি, বিশ্ববাজার থেকে শুরু করে নানা বিষয়ে অর্থনীতির শিক্ষার্থীরা লেখালেখি করে থাকেন। 

ইএসসি এই ব্লগের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের একটি অনন্যসাধারণ প্ল্যাটফর্ম দিয়েছে, যার সাহায্যে তারা নিজের লেখালেখির স্কিলটা আরও বাড়িয়ে নিতে পারে। এছাড়াও অর্থনীতির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লেকচার সিরিজ, স্টাডি সার্কেল তো রয়েছেই! অর্থনীতি বিভাগের ইতিহাসে প্রথম EconDUDay এর শুরুটাও ইএসসির হাত ধরেই।

ইকোনমিক্স ক্যারিয়ার অ্যালায়েন্সের (ECA) বয়স বছর দুয়েক হতে চললো। অর্থনীতির শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার নিয়ে সম্যক ধারণা দিতে এবং তাদের চাকরির বাস্তব জগতের অভিজ্ঞতা দান করাই ক্লাবটির লক্ষ্য, পাশাপাশি বেশকিছু অর্থনীতি বিষয়ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল ক্লাবটি।

আরও পড়ুন : বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রস্তুতি কীভাবে নেবেন

ইকোনমিক্স কালচারাল ক্লাবের (ECC) শুরুটা ক্যারিয়ার অ্যালায়েন্সের সাথেই। অর্থনীতি বিভাগের শিল্পী মনের মানুষগুলোর মিলনস্থল এই ক্লাবটি বিভাগের সাংস্কৃতিক অংশগুলো দেখে। সম্প্রতি চট্টগ্রামে হয়ে যাওয়া SAESM-এ কালচারাল ক্লাবের সাংস্কৃতিক প্রতিভার ঝলক দেখা যায়।

মজার ব্যাপার কী জানো? অর্থনীতিতে সুযোগ পেতে আপনাকে নাওয়া খাওয়া ভুলে, সব ছেড়ে সারাদিন বইয়ে মুখ গুঁজে থাকতে হবে না। আমরা কেউই থাকিনি। যেটা করতে হবে, সেটা হলো একটা নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে পড়ালেখা করতে হবে। যেটুকু পড়বেন, বুঝে পড়বেন।

বিষয় তো তিনটা, ইংরেজি, বাংলা আর সাধারণ জ্ঞান। তিনটা বিষয়ের মধ্যে ইংরেজিতে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিৎ, এসএসসি পরীক্ষায় সাধারণ গণিত বিষয়ে A গ্রেড না থাকলে অর্থনীতি পাওয়া যায় না। পাশাপাশি সাধারণ জ্ঞানে একটুখানি গুরুত্ব দিয়ে প্রচুর নম্বর তুলে ফেলতে পারেন আপনি! 

ডি ইউনিট হোক বা বি ইউনিট, পরীক্ষা অনেকেই দেয়, অনেক ভালো নম্বরও পায়। সমস্যা কোথায় জানেন? ইংরেজিতে ন্যূনতম একটা নম্বর আছে বেশিরভাগ ভালো বিভাগেই, সেটা আর তারা পায় না। আপনি এই সুযোগটাকেই কাজে লাগান, ইংরেজিতে ভালো করুন, অর্থনীতি আপনার কাছে এসে ধরনা দেবেই!

এতকিছু পড়ার পর আপনারও নিশ্চয়ই মনে স্বপ্ন জাগছে, একদিন অর্থনীতি পড়ে বিশ্বমঞ্চে দেশের প্রতিনিধিত্ব করার? এই স্বপ্ন সবারই। অর্থনীতি আপনার জন্যে অপেক্ষা করছে, তাহলে আর দেরি।

লেখক: সুমনা জান্নাত,

শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence