ইবোলায় নিভে যাওয়া রেমডেসিভির ড্রাগ কি করোনা অন্ধকারের আলো?
- ড. মু. আলী আসগর
- প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২০, ০৯:১০ AM , আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২০, ০৯:১০ AM
চলমান মারাত্মক সংক্রমক সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের কারণে বিশ্বে ইতোমধ্যে ২২ লক্ষ ৫৮ হাজারের অধিক মানুষ আক্রান্ত হয়েছে এবং প্রায় ১ লক্ষ ৫৪ হাজারের অধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে (তথ্য সূত্রঃ জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর সিস্টেমস সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং)। বাংলাদেশেও বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্তের প্রায় ১৫ শতাংশ মারাত্মকভাবে ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত হয়েছে।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক দৈনিক পত্রিকা গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেক বছর ধরেই বিভিন্ন করোনাভাইরাস মানুষের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করেছে। ল্যানসেট জার্নাল এবং দ্য নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন নামক দুইটি জার্নালের প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী, SARS-CoV-1 ভাইরাস ২০০২-২০০৩ সালে চীনের গুয়াংডং প্রদেশে ও MERS-CoV ভাইরাস ২০১২ সালে মধ্যেপ্রাচ্যে মহামারি সৃষ্টি করেছিল।
নতুন মেডিসিন আবিস্কারে বছরের পর বছর সময় লেগে যেতে পারে বিবেচনায়, বর্তমানে বিশ্বের গবেষকগণ ও জনস্বাস্থ্য সংস্থগুলো অন্য রোগের জন্য ইতোপূর্বে অনুমোদনকৃত (Approved) ব্যপক নিরাপদ ড্রাগগুলোর পুনঃপরীক্ষণ করছেন। তাঁরা অননুমোদিত (Unapproved) ড্রাগগুলোর দিকেও দৃষ্টিপাত করছেন যা ইতোপূর্বে প্রাণীদেহে স্ট্যাডিজতে (পরীক্ষণগুলোতে) অন্য দুইটি মারণ করোনাভাইরাস, SARS-CoV (severe acute respiratory syndrome-CoV) ও MERS-CoV (Middle East respiratory syndrome-CoV) রোধে ভালো ফল দিয়েছিল (সূত্রঃ যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক বিজ্ঞান সাময়িকী ‘সায়েন্স’)। সার্স-কোভ-১ ও মার্স-কোভ—এ দুটি করোনাভাইরাসের সঙ্গে কোভিড-১৯ রোগের জন্য দায়ী সার্স-কোভ-২ ভাইরাসটি খুব ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত ও একই গোত্রের।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০ মার্চ, ২০২০ তারিখে নতুন করোনাভাইরাস দ্বারা শ্বসনতন্ত্রের মারাত্মক রোগের চিকিৎসা খুঁজতে মানবদেহে ব্যাপক বিশ্বব্যাপী পরীক্ষার (large global trial) ঘোষণা দিয়েছে, যাকে ‘SOLIDARITY’ বলা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক বিজ্ঞান সাময়িকী ‘সায়েন্স’ প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিদ্যমান চারটি সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ওষুধ পরীক্ষার জন্য গুরুত্ব দিচ্ছেন। সেগুলো হলো-১) এন্টিভাইরাল কমপাউন্ড রেমডেসিভির; ২) ম্যালেরিয়ার ওষুধ ক্লোরোকুইনিন ও হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনিন; ৩) অ্যান্টি-এইচআইভি কমবিনেশন ড্রাগ লোপিনাভির ও রিটোনাভির এবং ৪) অ্যান্টি-এইচআইভি কমবিনেশন ড্রাগ লোপিনাভির ও রিটোনাভির প্লাস ইন্টারফেরন-বেটা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘SOLIDARITY’ উদ্দ্যেগের প্রেক্ষিতে বর্তমানে বিশ্বে কোভিড-১৯ রোগের চিকিৎসা অনুসন্ধানে দুই শতাধিক ক্লিনিক্যাল ট্র্যায়াল চলছে।
রেমডেসিভির/Remdesivir ড্রাগ (ডেভলপমেন্ট কোড GS-5734) মূলত ইবোলা ও সংশ্লিষ্ট ভাইরাসগুলোকে প্রতিহত করতে আমেরিকার জিলেড সায়েন্সেস কর্তৃক আবিষ্কৃত হয়েছিল। জিলেড সায়েন্সেস ওয়েবসাইটে প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, রেমডেসিভির হচ্ছে গবেষনাধীন নিউক্লিওটাইড এনালগ (nucleotide analog) যা বিস্তীর্ণ স্পেক্ট্রমের এন্টি-ভাইরাল ড্রাগ। রেমডেসিভির ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় (in vitro) and প্রাণী মডেলে (in vivo) মার্স-কোভ ও সার্স-কোভ-১ করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সক্রিয়তা দেখিয়েছিল। রেমডেসিভির বিশেষভাবে একটি এডিনোসাইন এনালগ; এটি ভাইরাসের আরএনএ শিকলে (RNA chains) প্রবেশ করে, ফলে শিকলের অকাল ভাঙ্গন (premature termination) ঘটে। এডভ্যান্সেস ইন ভাইরাস রিসার্চ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী, করোনাভাইরাস হচ্ছে আবরণ বিশিষ্ট RNA (Ribonucleic acid) ভাইরাস পরিবার যা মানুষের শ্বসনতন্ত্রে (মূলত ফুসফুস) সংক্রমণ করে। করোনাভাইরাসসহ অধিকাংশ ভাইরাস তিনটি মৌলিক উপাদান, রাইবোনিউক্লিক এসিড/আরএনএ (ribonucleic acid/RNA), প্রোটিনস (proteins) এবং লিপিডস (lipids) দ্বারা গঠিত হয়।
রেমডেসিভির ড্রাগ ভাইরাসের রেপ্লিকেশনের (অনুলিপন) প্রধান এনজাইম RNA-dependent RNA polymerase কে বাধাগ্রস্থ করে ভাইরাসের বংশ বিস্তার বন্ধ করে। ইবোলা ভাইরাসকে রোধে ব্যর্থতার পর নভেল করোনাভাইরাস রেমডেসিভির ড্রাগকে ঔজ্বল্য দেখানোর দ্বিতীয় সূযোগ দিচ্ছে। গবেষকগণ ২০১৯ সালে গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে ইবোলা প্রাদুর্ভাবের সময় রেমডেসিভির ড্রাগের কার্যকারিতা খুঁজে পাননি; তবে অন্য দুইটি ড্রাগ কার্যকর হয়েছিল (সূত্রঃ যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক বিজ্ঞান সাময়িকী ‘সায়েন্স’)। অন্যদিকে, সায়েন্স ট্রান্সলেশনাল মেডিসিন জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় গবেষকগণেরা দেখিয়েছেন, টেস্ট টিউবে সেল কালচার ও ইদুরের দেহে পরীক্ষায় GS-5734 (রেমডেসিভির ড্রাগ) সার্স-কোভ-১ ভাইরাসের রেপ্লিকেশন এনজাইমকে বাধাগ্রস্থ করে ভাইরাসের বংশবিস্তার ব্যহত করতে সক্ষম হয়েছিল। সম্প্রতি সেল রিসার্চ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় পেট্রি ডিশে (in vitro) রেমডেসিভির প্রবলভাবে SARS-COV-2 ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিহত করেছে।
রেমডেসিভির কোভিড-১৯ চিকিৎসায় অন্যতম প্রধান সম্ভাবনাময় ওষুধ হিসেবে ল্যাবরেটরি টেস্টে পরীক্ষিত হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের ইউ সি ডেভিস মেডিক্যাল সেন্টারের রোগ সংক্রমণ বিশেষজ্ঞ জর্জ থমসন কোভিড-১৯ এ মারাত্মক আক্রান্ত একজন রোগীকে রেমডেসিভির ড্রাগ দিয়ে চিকিৎসা করে সুস্থ করেছেন। রোগ সংক্রমণ বিশেষজ্ঞ জর্জ থমসন প্রথমে ভেবেছিলেন, রোগীটি মারা যাবে। বিশ্বের অনেক ডাক্তার কোভিড-১৯ রোগের চিকিৎসায় রেমডেসিভির সম্ভাবনায় আশাবাদী। ওষুধটি যদি কোভিড-১৯ রোগের জন্য দায়ী ভাইরাস সার্স-কোভ-২ কে নির্মুল বা বিস্তার ধীর করতে পারে, মারাত্মক অসুস্থ ব্যক্তির জীবনাশঙ্কা কেটে যাবে, এমনকি সংক্রমণের বড় ঝুঁকিতে থাকা স্বাস্থ্যকর্মীদের রক্ষার জন্য prophylactically (রোগ আক্রমণ এড়াইবার জন্য চিকিৎসা হিসেবে) কাজ করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যবিষয়ক সংবাদ ওয়েবসাইট স্টাট নিউজ ১৬ এপ্রিল ২০২০ তারিখে জানিয়েছে, জিলেড সায়েন্সেস কর্তৃক আবিষ্কৃত রেমডেসিভির ড্রাগ (GS-5734) দিয়ে দ্য ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগো মেডিসিন এর চিকিৎসকগণের নিবিড় পর্যবেক্ষন ক্লিনিক্যাল পরীক্ষামূলক (closely watched clinical trial) চিকিৎসায় জ্বর ও শ্বসনতন্ত্রের গুরুতর লক্ষণযুক্ত সমস্যার মারাত্মক অসুস্থ কোভিড-১৯ রোগীরা দ্রুত আরোগ্য লাভ করেছে এবং প্রায়ই সকল রোগী এক সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করেছে।
রোগীকে বিশ মিলিলিটার ভায়ালের একশত মিলিগ্রাম রেমডেসিভির ইনজেকশন প্রয়োগের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগো মেডিসিন সম্প্রতি জিলেড সায়েন্সেস এর রেমডেসিভির দ্বারা ১২৫ জন কোভিড-১৯ রোগীর উপর তিনটি ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় (clinical trials) দুই ধাপে চিকিৎসা করে। রোগীদের মধ্যে ১১৩ জন মারাত্মকভাবে অসুস্থ ছিলেন। সকল রোগীকে প্রতিদিন রেমডেসিভির ইনফিউশন শিরায় প্রয়োগ করা হয়েছিল। ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগো এর সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ক্যাথলিন মুলেন কোভিড-১৯ রোগীদের রেমডেসিভির দ্বারা চিকিৎসায় ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালসের নেতৃত্ব দিচ্ছেন (তথ্য সূত্রঃ ১৬ এপ্রিল ২০২০ তারিখের যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যবিষয়ক সংবাদ ওয়েবসাইট স্টাট নিউজ)। সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ক্যাথলিন মুলেন বলেন, "সবচেয়ে ভালো খবর হচ্ছে আমাদের অধিকাংশ রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন। এটি বিশাল। আমাদের মাত্র দুইজন রোগী প্রাণ হারান।"
বর্তমানে রেমডেসিভির এর একই ধরণের ক্লিনিক্যাল ট্রায়্যাল বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চলমান আছে এবং এটি নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব না সকল ট্রায়ালের ফলাফল পজিটিভ হবে। এখন পর্যন্ত জিলেড সায়েন্সেস এর স্ট্যাডিজের (পরীক্ষা) কোন ক্লিনিক্যাল ডেটা স্ট্যাডিজ (পরীক্ষা) প্রকাশিত হয় নাই। জিলেড সায়েন্সেস ১৬ এপ্রিল এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘আমরা এই পর্যায়ে যা বলতে পারি তা হলো, চলমান গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের প্রত্যাশায় রয়েছি।’ জিলেড প্রত্যাশা করছে তাদের মারাত্মকভাবে আক্রান্ত রোগীদের নিয়ে রেমডেসিভির ট্রায়ালসের (পরীক্ষণ) ফলাফল এপ্রিল মাসে পাওয়া যাবে। ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগো এর সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ক্যাথলিন মুলেন ১৬ এপ্রিল তাঁর (মুলেন) ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালসের রেমডেসিভির এর সুফল উপস্থাপনের সময় বলেন, গবেষণার তথ্য জিলেডের কাছে ‘লকড’ করে দেওয়া হবে। এর অর্থ, যেকোনো দিন ফল জানা যেতে পারে।
ক্যাথলিন মুলেন যখন রেমডেসিভির এর ক্লিনিক্যাল ট্রায়্যালের ফলাফল সম্পর্কে অনুপ্রাণিত ছিলেন, তখন তিনি তাঁর সন্দেহ/দ্বিধা অনেক উপসংহারের মাধ্যমে সুস্পষ্ট করেন। তিনি বলেন, এটি সবসময় কঠিন কারণ কোভিড-১৯ মারাত্মক রোগীদের নিয়ে তাঁর নেতৃত্বে ট্র্যায়ালসে তুলনা করার জন্য একটি প্ল্যাসেবো গ্রুপ (placebo group) অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি ( প্ল্যাসেবো গ্রুপ হচ্ছে--- শুধুমাত্র যে গ্রুপের রোগীদের স্বান্তনা দেওয়ার জন্য ওষুধের নামে অন্য কিছু দেওয়া হয়, রোগ নিরাময়ের জন্য নয়)। কিন্তু তিনি বলেন, ট্রায়ালসে রোগীদের ওষুধ প্রয়োগের পর অনেক মাত্রার জ্বর দ্রুত কমতে শুরু করে। করোনায় আক্রান্ত সঙ্কটজনক অবস্থায় ভর্তির সময় অনেক রোগীর প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট থাকায় ভেন্টিলেটার দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আমরা দেখেছি, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালসে রেমডেসিভির ড্রাগ থেরাপি আরম্ভের এক দিন পর রোগীরা সুস্থ বোধ করায় ভেন্টিলেটার ব্যবহার প্রয়োজন হয় নাই। তিনি আরোও বলেন, অধিকাংশ মারাত্মকভাবে কোভিড-১৯ আক্রান্ত ছিল এবং অধিকাংশ সুস্থ হয়ে ছয় দিনেই হাসপাতাল ত্যাগ করেছে। তাই ১০ দিনের ট্রায়ালসে অধিকাংশ ১০ দিনের আগে সুস্থ হয়েছে। খুব সামান্য রোগী, মাত্র তিন জন দশ দিনে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করেছে (তথ্য সূত্রঃ ১৬ এপ্রিল ২০২০ তারিখের যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যবিষয়ক সংবাদ ওয়েবসাইট স্টাট নিউজ)।
এক বিবৃতিতে ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগো মেডিসিন বলেছে, ‘এ মুহূর্তে কোনো সিদ্ধান্তে আসা ঠিক হবে না এবং তা বৈজ্ঞানিকভাবে যুক্তযুক্ত নয়।’ ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগোর রেমডেসিভির এর ক্লিনিক্যাল ট্রায়্যালের সম্পর্কে স্ক্রিপস রিসার্চ ট্রান্সলেশনাল ইনস্টিটিউটের পরিচালক এরিক টপল বলেছেন, এটা উৎসাহব্যঞ্জক। মারাত্মক রোগীদের ক্ষেত্রে মৃত্যুঝুঁকি থাকে বেশি। যদি ১১৩ জন রোগী এ ক্ষেত্রে সুস্থ হওয়ার ছাড়পত্র পায় তবে তা ওষুধের কার্যকারিতার ইতিবাচক ইঙ্গিত। তবে আরও গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করা আবশ্যক।
ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগো মেডিসিন এর ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে অংশ নিয়েছিলেন কোভিড-১৯ রোগে মারাত্মক আক্রান্ত ৫৭ বছর বয়সী স্লাওমির মিকালাক। মিকালাক বলেন, ৩ এপ্রিল তার জ্বর ১০৪ ডিগ্রিতে ওঠে ও শ্বাসকষ্ট আরও বেড়ে যায়। হাসপাতালে তাঁকে অক্সিজেন দেওয়া হয়। ৪ এপ্রিল তাঁর শরীরে রেমডেসিভির দেওয়া হয়। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে তাঁর জ্বর নেমে গেল এবং তিনি আগের চেয়ে ভালো বোধ করতে শুরু করলেন। মিকালাক বলেন, ‘রেমডেসিভির অলৌকিক এক ওষুধ।’
বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ রোগের বিরুদ্ধে ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগো মেডিসিন কর্তৃক জিলেড সায়েন্সেস এর রেমডেসিভির এর সফলতা খুবই আশাপ্রদ। বর্তমানে বিশ্বের ১৫২টি স্থানে গুরুতর কোভিড-১৯ রোগের উপসর্গ রয়েছে এমন ২ হাজার ৪০০ রোগীর ওপর রেমডেসিভির ওষুধটির পরীক্ষা চলছে। এ ছাড়া বিশ্বের ১৬৯টি কেন্দ্রে মধ্যম পর্যায়ের কোভিড-১৯ রোগের উপসর্গ রয়েছে এমন ১ হাজার ৬০০ রোগীর মধ্যেও ওষুধটির পরীক্ষা হচ্ছে। অধিকতর বৈচিত্র্যপূর্ণ ব্যাপক মানুষের মধ্যে পরীক্ষায় নিশ্চিত হতে পারলে, তা দ্রুতই যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ও অন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছ থেকে অনুমোদন পাবে। এটা যদি নিরাপদ ও কার্যকর হয় তবে করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে এটিই হবে প্রথম অনুমোদিত কোনো চিকিৎসাব্যবস্থা। মানুষ তখন এই বৈশ্বিক মহামারি মোকাবিলায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে!
লেখক: প্রফেসর, ক্রপ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি বিভাগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
মেইল: drmaasgar@gmail.com