৪৭তম বিসিএসে ভিন্ন ধাচের ক্রিয়েটিভ প্রশ্ন, কাট মার্কস হতে পারে তিনভাবে

শাকিল আল-আমিন
শাকিল আল-আমিন  © টিডিসি সম্পাদিত

৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ে গেল শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর)। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৭৪৭ জন। ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসের ৩০ সার্কুলার প্রকাশিত হয়। পদের সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার ৪০০।

আসুন ৪৭তম প্রিলির প্রশ্ন বিশ্লেষণ করি। প্রথমেই বলব, একটা ক্রিয়েটিভ প্রশ্নপত্র। বিগত সালগুলোর প্রশ্ন থেকে সম্পুর্ন ভিন্ন ধাচের। মূলত ৩৫তম বিসিএস থেকে ২০০ নম্বরের প্রিলিমিনারি শুরু হয়। ৪৭তম প্রিলির প্রিলির প্রশ্ন একেবারেই ভিন্ন। বিগত সালের প্রশ্ন রিপিট নেই বললেই চলে। টপিক কমন থাকলেও টপিকের গভীর থেকে গভীরে প্রশ্ন করেছে। 

পিএসসি সাধারণত কয়েক সেট প্রশ্ন করে থাকে। পরীক্ষা শুরু হওয়ার শেষ ৩০ মিনিট আগে লটারির মাধ্যমে সেট বাছাই করা হয়, যাতে প্রশ্নফাঁস এড়াতে পারে। আমার মনে হয়, সেই দ্বৈবচয়ন ভিত্তিতে সবচেয়ে কঠিন সেটটাই পড়েছে। যে টিম প্রশ্ন মডারেশনের দায়িত্ব পেয়েছেন, নিঃসন্দেহে তারা ক্রিয়েটিভ। গতানুগতিক ধারা থেকে বের হয়ে প্রশ্ন করেছেন। কয়েকটা উদাহরণ দিই বাংলায় একটা প্রশ্ন হয়েছে

‘লুই ভণই গুরু পুছিঅ জান’। এখানে ‘ভণই’ শব্দের অর্থ কী? প্রথমত এটা চর্যাপদের কবি লুই পাদের এক চর্যা থেকে এই পঙক্তি তুলে দেয়া হয়েছে। তাহলে দেখা গেল এটা টপিকের গভীরে গিয়ে গভীর প্রশ্ন। আরেকটা প্রশ্ন দেখলে আপনার এই প্রশ্নের গভীরতা সম্পর্কে ক্লিয়ার ধারণা হবে। যেমন বাংলার একটা প্রশ্ন ‘মনোঅ্যাল দ্যা আসসুম্পসাও বাংলা অভিধান প্রকাশের আগে কত বছর শব্দ সংগ্রহ করেন?’ ‌

এ প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য নিয়মিত গবেষণার বিষয় সাধারণত বাংলার শিক্ষার্থীরা হয়তো উত্তর দিতে পারবেন। আবার বাংলাদেশ বিষয়াবলীর একটা প্রশ্ন ছিল, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি হওয়া অর্থ কোন দেশে পাচার করা হয়?’ এটি সাম্প্রতিক প্রশ্ন থেকে আসা। কিন্তু এই রিজার্ভ চুরির ঘটনা ২০১৫-১৬ সালের ইস্যু। কেউ যদি নিয়মিত পত্রিকা পড়েন, তাহলে তার পক্ষে ১০ বছর আগের সাম্প্রতিক প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব।

সাধারণত এ ধাচের প্রশ্ন সাম্প্রতিক পাঁচ বিসিএসে আর হয়নি। বাংলা, বিজ্ঞান, আইসিটি, আন্তর্জাতিক, বাংলাদেশ ইত্যাদি সাবজেক্ট’র প্রশ্ন অত্যন্ত কঠিন হয়েছে। সাম্প্রতিক বিসিএসগুলোতে প্রশ্নে ১৫-২০ প্রশ্ন রিপিট হয়েছে, কিছু বিসিএসে প্রশ্ন সরাসরি জব সলুশন থেকে এসেছে, কিন্তু ৪৭তম-এর প্রশ্ন যেন জীননানন্দ দাসের কবিতা ‘মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য অতি দূর সমুদ্রের পর হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা’র মতো! 

এর মধ্যে ২০২৫ সালে পিএসসি যে রোডম্যাপ দিয়েছে বিসিএসের জন্য তা ১০০ শতাংশ কার্যকর করছে। পিএসসির রোডম্যাপ অনুযায়ী, ২৮ সেপ্টেম্বর ৪৭তম প্রিলির রেজাল্ট এবং ৪৭তম-এর লিখিত শুরু হবে ২৭ নভেম্বর থেকে!  নতুন সেটাপে পিএসসি এখন যেন দুরন্ত পঙ্কীরাজ ঘোড়া। দীর্ঘসূত্রতা, সময় নষ্ট এবং তারুণ্যের জীবনীশক্তি বাঁচানোর যেন আপ্রাণ চেষ্টা। 

আরও পড়ুন: ৪৭তম বিসিএসের কাট মার্কস কত?

আসুন দেখি, বিগত সালে অনুষ্ঠিত বিসিএসগুলো আনুমানিক ‘কাট মার্কস; কেমন ছিল, ৪৭ এ কেমন হতে পারে কাটমার্কস। পিএসসি কখনও কাট মার্কস প্রকাশ করে না। সবই আনুমানিক তথ্য। যেমন - ৩৫-এ ৮৮, ৩৬-এ ১০৮, ৩৭-এ ৯৮, ৩৮-এ ১১০, ৪০-এ ৯৮-১০০, ৪১-এ ৯৯-১০১, ৪৩-এ ১০৭-১০৯, ৪৪-এ ১১৩-১১৪, ৪৫-এ ১১০-১১৩, ৪৬-এ ১১৭-১১৯ এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ১০৬-১০৯ (আনুমানিক)।

৪৭তম বিসিএসের প্রশ্নের প্যাটার্ন অনুযায়ী, প্রশ্ন ৩৫ পরবর্তী সবচেয়ে হার্ড প্রশ্ন করেছে পিএসসি। সে হিসেবে ৪৭তম প্রিলিতে আনুমানিক যেমন কাট মার্কস হতে পারে- ২০ হাজারের বেশি নিলে ৯৩-৯৫ নম্বর থাকতে পারে। ১৫ হাজারের বেশি নিলে ৯৬-৯৮ এবং ১২ হাজারের বেশি নিলে ৯৯-১০৫ হবে কাট মার্কস। 

৩ হাজার ৪০০ পোস্টের জন্য ১৫ থেকে ১৮ হাজার নিতে পারে, সেক্ষেত্রে কাট মার্কস আনুমানিক ৯৬-৯৯ হতে পারে। এটা আমার একান্তই ব্যক্তিগত মতামত। সেখানে আপনি দ্বিমত পোষণ করতেই পারেন।

যাদের ১০৫ এর বেশি থাকে, আজই হ্যাঁ আজই পড়ার টেবিলে বসে পড়ুন। রেজাল্ট ২৮ সেপ্টেম্বর, লিখিত পরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখ ২৭ নভেম্বর। একটা সপ্তাহ আপনি গণিত, বিজ্ঞান, ইংরেজির পড়া চালিয়ে যান। যদি সত্যিই ২৭ নভেম্বর থেকে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়, আর প্রথমবারের মতো লিখিত দেন, তাহলে হাল ভেঙে জাহাজ ডুবতে পারে- যদি সময় নষ্ট করেন। কারণ বিসিএসের লিখিত সিলেবাস একটা সমুদ্রই বটে!

লেখক: ক্যারিয়ার পরামর্শক ও বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা


সর্বশেষ সংবাদ